ভেজাল ওষুধ রোধে মনিটরিং

5

আটা-ময়দা আর রং ব্যবহার করে ওষুধ তৈরি সংক্রান্ত একটি উদ্বেগজনক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে একটি জাতীয় দৈনিকে। ওষুধগুলো তৈরি হচ্ছিল চুয়াডাঙ্গার দর্শনার একটি কারখানায়। সেখান থেকে দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি ওষুধ মার্কেট পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় পৌঁছে যেত। এরপর ব্যবসায়ীদের হাত ধরে এবং কুরিয়ার সার্ভিসে ছড়িয়ে দেয়া হতো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফার্মেসিতে। এই ওষুধ সেবনে রোগীর কোন উপকারই হতো না, বরং তারা পড়তেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। গত বুধবার এ ভেজাল ওষুধের সূত্র ধরে রাজধানীর চকবাজার, ফকিরাপুল ও চুয়াডাঙ্গায় অভিযান চালিয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কয়েক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ।
বাংলাদেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে কয়েকটি খাত নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে ওষুধশিল্প তার অন্যতম। অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় সিংহভাগ ওষুধ তৈরি হয় দেশেই। বিশ্বের কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের তৈরি ওষুধ রফতানিও হচ্ছে। তবে এ কথাও সত্য যে, কয়েকটি নামী-দামী ওষুধ কোম্পানির পাশাপাশি কিছু অখ্যাত কোম্পানিও আছে, যারা তৈরি করছে নকল ও ভেজাল ওষুধ। ভেজাল ওষুধ খেয়ে শিশুসহ বয়স্কদের মৃত্যুর অভিযোগও আছে। অভিযুক্ত কোম্পানির মালিকদের জেল-জরিমানাসহ কারখানাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দুঃখজনক হলো, এর পরও মানহীন ওষুধ তৈরি ও বাজারজাতকরণের অভিযোগ উঠেছে কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে। মূলত এসব হয়েছে ওষুধের দাম বাড়ার কারণেই।

ওষুধশিল্প একটি স্পর্শকাতর বিষয়। মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্নটি এর সঙ্গে জড়িত ওতপ্রোতভাবে। খাদ্য ও পথ্যের বিষয়টিও প্রসঙ্গত উঠতে পারে। ভেজাল খাদ্য যেমন মানুষের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে; অনুরূপ ভেজাল ও নকল-মানহীন ওষুধ বিপন্ন করে তুলতে পারে মানুষের জীবনকে। আর তাই ওষুধের মান ও দাম নিয়ে হেলাফেলা তথা শৈথিল্য প্রদর্শনের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। উন্নত বিশ্বে ওষুধের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণ করা হয় কঠোরভাবে। এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এ্যান্ড ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফডিএ একটি আদর্শ উদাহরণ। বাংলাদেশেও অনুরূপ আদলে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সরকারী সংস্থা গঠন করা যেতে পারে, যারা সর্বদাই ওষুধের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট থাকবে।
বাজারে ভেজাল ও নিষিদ্ধ ওষুধের ছড়াছড়ি সংক্রান্ত প্রতিবেদন কয়েক মাস পরপরই জনস্বার্থে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর সাময়িকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ওষুধ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করা হয়। আইনানুগ দণ্ড দেয়া হয় অপরাধীদের। এরপর আবার শুরু হয় একই বিপজ্জনক পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নিয়মিত মনিটরিং এবং বিশেষ নজরদারির ধারাবাহিকতা অত্যাবশ্যক।