অনন্ত হত্যা মামলার রায়

8

সিলেটের বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলায় চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। এটি স্বস্তিদায়ক সংবাদ। গণতান্ত্রিক দেশ বাংলাদেশে আইনের শাসন সমুন্নত রয়েছে এবং দেশবিরোধী জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মুক্তমতের সহিংস বিরোধিতাকারীদের প্রতিরোধে আইন তার নিজস্ব গতিধারাতেই রয়েছে। এর ভেতর দিয়ে দেশের ভাবমূর্তিও বহির্বিশ্বে উজ্জ্বলতর হচ্ছে। এই রায়ে আরও একবার প্রমাণ হলো বাংলাদেশ প্রগতিশীলতার ওপরে বর্বর আক্রমণকে কখনোই ক্ষমা করবে না।
অনন্ত হত্যাকান্ডের ঘটনা বহির্বিশ্বে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে অনুজ্জ্বল করেছে বলে আদালত মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছেন। আদালত বলেছেন, অভিযুক্ত আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা না দিলে অন্যান্য সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও উগ্রবাদী মতাদর্শের লোকজন এ ধরনের হত্যাকান্ডে উৎসাহিত হবে। আদালতের এ বাণী গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিষয়টি অনুধাবন করে যথোচিত ব্যবস্থা নেবেন, এটাই দেশবাসীর চাওয়া।
২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নুরানি আবাসিক এলাকার নিজ বাসার সামনে খুন হন অনন্ত। পেশায় ব্যাংকার অনন্ত বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। হত্যাকাণ্ডের পর অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।
ব্লগার বা অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট টার্মটি দেশব্যাপী বিশেষভাবে আলোচনায় উঠে আসে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আটক কাদের মোল্লার বিচারে ফাঁসির রায় না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট তথা ব্লগাররা শাহবাগে একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ করেন। পরে সেটি অভূতপূর্ব গণজাগরণের রূপ নেয়। শাহবাগের গণজাগরণমঞ্চ ইতিহাস সৃষ্টি করে। সে সময়েই মৌলবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র অনলাইনে স্বাধীন মত প্রকাশকারীদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাতে শুরু করে। একের পর এক ব্লগারকে হত্যা করা হয়। তবে হামলার শিকার এবং হুমকিপ্রাপ্ত অনেক অনলাইন লেখকই প্রাণ রক্ষার্থে দেশের বাইরে চলে গেছেন। এটি দুঃখজনক।
মুক্তচিন্তার বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণকারী ব্যক্তিরা সুসংগঠিত এতে কোন সংশয় নেই। আজ তারা যে সংগঠনের পতাকাতলে সমবেত হয়েছে আগামীতে সরকার কর্তৃক সেই সংগঠন নিষিদ্ধ হলে তারা নতুন নাম ও বেশ ধারণ করবে। তাই মুক্তচিন্তার সশস্ত্র বিরোধিতাকারীদের রুখতে হলে সমস্যার মূলে গিয়ে সমাধানের পথ বের করতে হবে। অন্ধকার এসে ক্রমাগত আলোকে গ্রাস করতে থাকলে আলোর সুরক্ষার সমান্তরালে অন্ধকার নাশের উদ্যোগ নিতে হয়। আমাদের প্রত্যাশা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে অনন্ত হত্যা মামলার রায় কার্যকর করা হবে। তার আগে বিশেষ অভিযান পরিচালনার মধ্য দিয়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে- এমনটাই প্রত্যাশা।