জগন্নাথপুরে সেই ভাঙনের বাঁধে আবার ধস, এবার বিকল্প বাঁধ

7

মো. শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে হাওরের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধের সেই আলোচিত ঝুঁকিপূর্ণ ভাঙনের অংশ আবারো ধসে গেছে। এ নিয়ে প্রায় ৪০ বার বাঁধ ধসের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বড় ধসের ঘটনা ঘটেছে ৪ বার। বারবার ধসের ঘটনায় পিআইসি ও শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। বাঁধ রক্ষায় অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হলেও কোন কাজ হচ্ছে না। অবশেষে এখানে বাঁধ নির্মাণের আশা ছেড়ে দেয়া হয়। নতুন করে বিকল্প বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, জগন্নাথপুর উপজেলার মইয়ার হাওরের মধ্যস্থানে কলইকাটা নামক স্থানে পাশাপাশি দুইটি গভীর খাদ (ডহর) রয়েছে। এসব ডহরে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৬০ ফুট পানি আছে। এ দুই ডহরের মধ্যস্থান দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। নলুয়ার হাওর পোল্ডার-১ এলাকার অন্তর্ভুক্ত ১৬ ও ১৭ নং দুইটি পিআইসি কমিটির মাধ্যমে গত ১০ জানুয়ারি থেকে মাটি ভরাট কাজ শুরু হয়। মাত্র ২৫০ ফুট ভাঙনে বাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৩২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এখানে বাঁধ নির্মাণের শুরু থেকেই বেকায়দায় পড়ে যান পিআইসিরা। ভাঙনে মাটি ভরাট করলে তা ধসে যায়। এর পরও গাছের বল্লি ও বাঁশের আড় দিয়ে হাজার হাজার মাটি ভর্তি বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করা হয়। তাতেও কাজ হয় না। ঠিক এভাবেই দীর্ঘ প্রায় ৩ মাস ধরে দিনরাত কাজ করেও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হলো না। অবশেষে ২৮ মার্চ সোমবার আবারো বাঁধ ধসে গেছে। বাঁধ রক্ষায় দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও শিরণি বিতরণ সহ অনেক কিছু করা হয়েছে।
এদিকে-এখানে বাঁধ না হলে পুরো নলুয়ার হাওর অরক্ষিত হয়ে যাবে। এখানে বাঁধ না থাকলে বাকি ২৬টি প্রকল্পের বাঁধ কোন কাজে আসবে না। নদীতে পানি আসলেই হাওরে ঢুকে পড়বে। এমন আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েন কৃষকরা। এর মধ্যে বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে গেছে। নদীতে অল্পঅল্প পানি আসতে শুরু করেছে। তা দেখে কৃষকরা আরো দিশেহারা হয়ে পড়েন। যে কারণে এখানে বাঁধ নির্মাণ নিয়ে প্রশাসন সহ সচেতন মহল তৎপর হয়ে উঠেন। এতে অন্য পিআইসিরাও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। যাতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এখানে বাঁধ নির্মাণ করা যায়।
অবশেষে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হাওরের ফসল রক্ষার স্বার্থে এখানে বিকল্প বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ২৮ মার্চ সোমবার থেকে ডহর ঘুরিয়ে বিকল্প বাঁধ নির্মাণের জন্য মাটি কাটা শুরু হয়েছে। সরেজমিনে ১৭নং পিআইসি কমিটির সভাপতি সাজিদুর রহমান খলিল জানান, বিকল্প বাঁধ দ্রুত নির্মাণের জন্য ৩টি এস্কেভেটর মেশিন কাজ করছে। এতে সহযোগিতা করছেন অন্য পিআইসি কমিটির সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য আহমদ আলী ও সাবেক ইউপি সদস্য জুয়েল মিয়া। আশা করছি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জগন্নাথপুর উপজেলা উপ-সহকারি প্রকৌশলী (এসও) হাসান গাজী জানান, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় এবার বিকল্প বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত কাজ শেষ হয়ে যাবে।