জগন্নাথপুরে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ৩ বার ধসে যাওয়ার ঘটনায় পিআইসি ও শ্রমিকরা আতঙ্কিত

5

মো. শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে হাওরের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধের সেই আলোচিত ঝুঁকিপূর্ণ ভাঙনের অংশ আবারো ধসে গেছে। এ নিয়ে পরপর ৩ বার ধসে যাওয়ার ঘটনায় পিআইসি ও শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। বাঁধ রক্ষায় দেয়া হয়েছে অতিরিক্ত বরাদ্দ। তবুও শঙ্কা পিছু ছাড়ছে না। চলছে দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও শিরণি বিতরণ।
জানা গেছে, জগন্নাথপুর উপজেলার মইয়ার হাওরের মধ্য স্থানে কলইকাটা নামক স্থানে পাশাপাশি দুইটি গভীর খাদ (স্থানীয় ভাষায় ডহর) রয়েছে। এসব ডহরে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৬০ ফুট পানি আছে বলে স্থানীয় মৎস্য শিকারিরা জানান। এ দুই ডহরের মধ্যস্থান দিয়ে এবার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে।
নলুয়ার হাওর পোল্ডার-১ এলাকার অন্তর্ভুক্ত ১৬ ও ১৭ নং দুইটি পিআইসি কমিটির মাধ্যমে গত ১০ জানুয়ারি থেকে মাটি ভরাট কাজ শুরু হয়। মাত্র ২৫০ ফুট ভাঙনে বাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৩২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাস ধরে দিনরাত কাজ করেও এখন পর্যন্ত এ ভাঙ্গনের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। বারবার ধসে যাওয়ায় রীতিমতো বেকায়কায় পড়ে যান সংশ্লিষ্টরা। এখানে আদৌ বাঁধ ঠিকবে কি না এ নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। এখানে বাঁধ না থাকলে পুরো নলুয়ার হাওর ও মইয়ার হাওর থাকবে অরক্ষিত। কাটা নদীতে পানি আসলেই ঢুকে পড়বে হাওরে। এমন অভিমত স্থানীয় কৃষকদের।
২১ মার্চ সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনের একাংশ গাছের বল্লি ও বাঁশের আড় নিয়ে ধসে পড়েছে গভীর ডহরে। ভাঙন এলাকায় চলছে শিরণি বিতরণের প্রস্তুতি। শিরণি বিতরণের পর পুনরায় কাজ শুরু হবে বলে ১৭ নং পিআইসি কমিটির সভাপতি সাজিদুর রহমান খলিল জানান। তিনি বলেন, এই ঝুঁকিপূর্ণ ভাঙনে বাঁধ নির্মাণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এর আগে বাঁশের আড় ও বেড়া নিয়ে পরপর ২ বার মাটি ধসে গেছে। পরে গাছের বল্লি বসিয়ে দুই দিক থেকে ৩ সুতা রড দিয়ে টানা দিয়ে আড় বানানো হয়। এ আড়ের ভেতরে বাঁশের আড় ও বাঁশের বেড়া দেয়া হয়। ফেলা হয় মাটি ভর্তি প্রায় ৭ হাজার বস্তা। এর পর মাটি ভরাট করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে আমাদের মাটি কাটার কাজ প্রায় শেষ হয়ে যায়।
এর মধ্যে গত ১৯ মার্চ শনিবার দুপুর ও সন্ধ্যায় দুই দফায় সব কিছু নিয়ে আবারো বাঁধ ধসে পড়েছে। তৃতীয় বার ধসে পড়ার ঘটনায় আমি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছি। বাঁধ ধসে পড়ার চিত্র দেখে শ্রমিকরা আর কাজ করতে চাইছে না। তারা রীতিমতো ভয় পেয়ে গেছে। যে কারণে আবার কাজ শুরুর আগে দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও শিরণি বিতরণের আয়োজন করেছি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এবার যদি বাঁধ ঠিকে, তাহলে কয়েক দিনের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।
এ সময় হাওরে থাকা অন্যান্য কৃষক ও গরু রাখাল সহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি আফসোস প্রকাশ করে বলেন, এসব বড় বড় ডহরের মাঝখান দিয়ে না নিয়ে ডহর ঘুরিয়ে বাঁধ দিলে হয়তো এ সমস্যা হতো না।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জগন্নাথপুর উপজেলা উপ-সহকারি প্রকৌশলী (এসও) হাসান গাজী জানান, বাঁধ ধসে পড়ার খবর পেয়ে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরিদর্শন করেছেন। এখানে আবারো মাটি ভরাট কাজ চলছে। এতে ভয়ের কোন কারণ নেই। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।