ভোজ্যতেল আমদানিতে ১০ শতাংশ ভ্যাট কমল, বাজারে শীঘ্রই নতুন অভিযান

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দাম কমাতে এবার ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে ১০ শতাংশ ভ্যাট কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে সোমবার ভোজ্যতেলের উৎপাদন পর্যায়ে আরোপিত ১৫ শতাংশ এবং ভোক্তা পর্যায়ে আরও ৫ শতাংশ ভ্যাট কমানোর সিদ্ধান্ত দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সবমিলিয়ে ভোজ্যতেলের তিনস্তরে থেকে ৩০ ভাগ ভ্যাট কমানো হয়েছে। ভ্যাট প্রত্যাহারের সরকারী এই সুবিধা কার্যকর হলে ভোক্তা পর্যায়ে শতকরা হিসেবে ৩০ টাকা পর্যন্ত দাম কমবে। অর্থাৎ প্রতি একলিটার বোতলজাত সয়াবিনের বর্তমান সরকার নির্ধারিত বাজার দর ১৬৮ টাকা, ভ্যাট সুবিধা কার্যকর হলে ১১৭ টাকা ৬০ পয়সায় কিনতে পারবেন একজন ভোক্তা। ৭৯০ টাকার পাঁচ লিটারের বোতল দাম কমে বিক্রি হবে ৫৫৩ টাকা। এছাড়া ১৪৩ টাকার প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হবে ১০০ টাকায়। খোলা পামওয়েল প্রতিলিটার তেলের দাম ১০০ টাকার নিচে বিক্রি হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত ভ্যাট সুবিধা কার্যকরের বিষয়টি খুচরা পর্যায়ে বাস্তবায়িত হতে হবে। রোজা সামনে রেখে ভ্যাট সুবিধা মিললে বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে। ভোক্তারা সহনীয় দামে তেল কিনতে পারবেন।
জানা গেছে, ভোজ্যতেলে তিন স্তরে ভ্যাট কমানোর বিষয়টি কার্যকর করতে শীঘ্রই বাজারে নতুনভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা, ডিজিএফআই, এনএসআই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিম মাঠে নামবে। এছাড়া ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের দাম কমাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতর এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। এই টাস্কফোর্সের মূল কাজ হবে বাজার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা। এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ভ্যাট প্রত্যাহারের সুবিধা ভোক্তা পর্যায়ে কার্যকর করতেই হবে। এজন্য নিয়মিত বাজারে অভিযান পরিচালনা করবে সরকার। এক্ষেত্রে কোন অনিয়ম করা হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি জানান, যেভাবে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে তাতে ভোজ্যতেল নিয়ে আর বাজার অস্থির করার কোন সুযোগ নেই। ব্যবসায়ীদের সকল দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। আশা করছি, বাজারে ভোজ্যতেল সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে।
জানা গেছে, ভোজ্যতেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে অর্থ মন্ত্রণালয় পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন ও পামতেল আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি ফাইলের অনুমোদন দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। ভোজ্যতেলের দাম কমাতে সেখান থেকে আরও ১০ শতাংশ কমানো হলো। আগামী দু’একদিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করবে এনবিআর। তিনি বলেন, সরকারী এ সিদ্ধান্তের ফলে খুচরা পর্যায়ে ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। এদিকে, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে থাকায় গত কিছুদিন ধরেই হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে বিক্রেতারা দাম বাড়াতে থাকায় সরকারকে উদ্যোগী হতে হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) মনিটরিং সেলের হিসাবে, গত পাঁচবছরে চাল-ডাল, তেল, লবণ, হলুদ-মরিচ, সবজি, মসলাসহ জীবন ধারনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম অনেক ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এই সময়ে সয়াবিন তেলের দাম ৩৮ শতাংশ, আর পাম তেল ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে রোজার আগে বাজার পরিস্থিতি সামলাতে তেল, চিনির মতো নিত্যপণ্য আমদানিতে ভ্যাট কমানোর নির্দেশ দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছিলেন, ভোজ্যতেল আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। এটা কীভাবে, কতটুকু কমানো যায়, সে বিষয়ে এনবিআরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভোজ্যতেল, চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট কমাতে বলা হয়েছে। এছাড়া বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও সোমবার এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ভোজ্যতেলে ভোক্তা পর্যায়ে ৫ শতাংশ কমানো হবে। উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ সেখানে কমানোর কথা বলা হয়েছে। আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ রয়েছে, সেখান থেকে ১০ শতাংশ কমানো হবে। এরপর সোমবার বিকেলে সয়াবিন তেল ও পাম তেল পরিশোধনে ১৫ শতাংশ একং বিপণন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এনবিআর। এনবিআরের ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
আমদানির আরও ভোজ্যতেল আসছে : রমজান সামনে রেখে চট্টগ্রাম দিয়ে আমদানিকৃত ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য আসা শুরু হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে রোজার আগে আমদানিকৃত সব ধরনের ভোগ্যপণ্য দেশে নিয়ে আসা হবে। এছাড়া এসব পণ্য দ্রুত ছাড়করণে বন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ৭৫ হাজার টন সয়াবিন তেল এসেছে। সয়াবিন তেলসহ বন্দর দিয়ে ১৩ জাহাজে এসেছে ৪ লাখ ৮২ হাজার টন ছোলা, মটর ডাল, মসুর ডাল, চিনি ও গম। দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের সঙ্কটের সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে তিনটি জাহাজ। এই তিন জাহাজে আছে ৭৫ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল।