সরকারের সাফল্য

5

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর সেখানে ঘটনাচক্রে বাংলাদেশের পণ্যবাহী একটি জাহাজ ইউক্রেনের বন্দরে আক্রান্ত হয়। সঙ্গত কারণেই ওই জাহাজে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র নাবিকদের আত্মীয় পরিজনই শুধু নয়, গোটা দেশের মানুষের ভেতরেই শঙ্কা বিরাজ করছে। জাহাজে গোলার আঘাতে তৃতীয় প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান নিহত হন। হামলার ২৪ ঘণ্টার মাথায় ইউক্রেন প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহায়তায় গত বৃহস্পতিবার নাবিকদের একটি টাগবোটে বন্দরের বাইরে একটি বাংকারে নেয়া হয়। সেখান থেকে রোমানিয়ায় নেয়া হয়। রোমানিয়া থেকে ঢাকায় বুধবার ফিরলেন ২৮ নাবিক। এটি অবশ্যই বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্যেরই বিরাট এক স্বস্তিকর দৃষ্টান্ত। জাহাজটির মাস্টার জি এম নূর ই আলমের বক্তব্যেই ফুটে উঠেছে কঠিন বাস্তবতার ছবি। তিনি ঢাকায় ফিরে গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘আমাদের ফিরে আসা ছিল অকল্পনীয়। কারণ, অনেক বড় বড় দেশ আছে, যাদের নাগরিক এখনও দেশে ফিরতে পারেনি।’
যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের ওই মাস্টারের বক্তব্যে সংশ্লিষ্ট তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আন্তরিকতা, অভয় দান ও উৎকণ্ঠার দিকটিও উঠে এসেছে। এরা হলেন পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী। শেখ হাসিনার সরকার জনকল্যাণমূলক সরকার এবং দেশের বাইরে কোন দুর্ঘটনা, সংঘাত-অপঘাতের ঘটনা ঘটলে দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার দিকটিকে সর্বোচ্চ মূল্য দেয়া হয়ে থাকে। প্রয়োজনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হয়। এ থেকে সরকারের দায়বোধ ও অঙ্গীকারের বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ওই জাহাজ তুরস্কের ইরাগলি বন্দর থেকে পণ্য বোঝাই করতে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। দুইদিন পর অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় নোঙর করে। তার পরদিন ভোরে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে জাহাজটি আটকা পড়ে। এক সপ্তাহের মাথায় হামলার শিকার হয়। হামলার পর এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে আগুন ধরে যায়। শুরুতে নাবিকরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। অলভিয়া বন্দর থেকে একটি টাগবোট এসে আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়। নাবিকদের সম্মিলিত চেষ্টায় জাহাজের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। হামলায় জাহাজের ব্রিজ ধ্বংস হয়ে গেছে। জাহাজটির তৃতীয় প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান মারা যান। তার মরদেহ দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা অবরুদ্ধ ২৮ নাবিকের জন্যে আমরা সহানুভূতি প্রকাশ করছি। আশা করছি অচিরেই তারা শারীরিক ক্লান্তি ও মানসিক আঘাত কাটিয়ে উঠবেন। একইসঙ্গে নিহত হাদিসুর রহমানের জন্য আমরা আন্তরিক শোক জানাই এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি রইল আমাদের সহমর্মিতা।