আতঙ্কে শুরু স্বস্তিতে শেষ ॥ করোনা সংক্রমণের দুই বছর

1

কাজিরবাজার ডেস্ক :
২০২০ সালের ৮ মার্চ। বিশ্বের বাঘা বাঘা দেশ তখন কাবু মহামারী করোনায়। চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কানাডাসহ প্রায় সব দেশই করোনার মরণ আঘাতে বিপর্যস্ত। আজ থেকে দুই বছর আগে প্রথম ঘোষণা আসে দেশেও পাওয়া গেছে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত শনাক্ত রোগী। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এক ঘোষণায় থমথমে অবস্থায় পুরো দেশ। যেন অঘোষিত কার্ফু জারি হয় দেশজুড়ে। সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লকডাউন, শাটডাউন, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন শব্দগুলো মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়াতে থাকে ওতপ্রোতভাবে। কিন্তু দুই বছরের ব্যবধানে ভাইরাসটি নিয়ে স্বস্তি ফিরেছে দেশের মানুষের মনে। সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হওয়ার পাশাপাশি ভাইরাসটির একমাত্র প্রতিষেধক টিকার আওতায় ইতোমধ্যে চলে এসেছে অধিকাংশ মানুষ। এরই মধ্যে প্রথম ডোজের লক্ষ্যমাত্রার কোটা পূরণ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। দোকান-পাট, শপিং সেন্টার, পর্যটন খাতসহ সর্বশেষ খুলে দেয়া হয়েছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও। ফলে দুবছরের পরিক্রমায় ভাইরাসটি নিয়ে স্বস্তি ছাড়া কোন অস্বস্তির কারণ এখন পর্যন্ত নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে শনাক্ত হওয়া ভাইরাসটিতে বাংলাদেশে প্রথম তিন জনের শনাক্ত হওয়ার খবর ২০২০ সালের ৮ মার্চ জানানো হয় আইইডিসিআর পক্ষ থেকে। এর ঠিক ১০ দিন পর করোনা আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যুর কথা জানায় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর থেকে দেশ পার করেছে কঠিন এক সময়। ভাইরাসটির বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মহামারী ঘোষণা করে ১১ মার্চ। দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। দেশে দেশে দেয়া হয় লকডাউন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যসূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ৬ মার্চ পর্যন্ত দেশে করোনায় শনাক্ত হন ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৭২৪ জন। মারা যান ৮ হাজার ৪৫১ জন। এ সময় সুস্থ হয়েছিলেন ৫ লাখ এক হাজার ৯৬৬ জন।
আর চলতি বছরের ৮ মার্চ করোনায় নতুন করে শনাক্ত হন ৪৩৬ জন এবং মারা যান ৪ জন। এদিন পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ছিল দুই দশমিক ১৮ শতাংশ এর আগের দিন রবিবার ছিল দুই দশমিক ৬৩ শতাংশ। নতুন শনাক্ত হওয়া ৪৩৬ জনকে নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় শনাক্ত হন ১৯ লাখ ৪৭ হাজার ৭০২ জন এবং মারা যাওয়া চার জনকে নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মারা গেলেন ২৯ হাজার ৮৯ জন। এছাড়া আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ৩৩৮ জন। সে হিসেবে দ্বিতীয় বছরে সুস্থ হয়েছেন ১৩ লাখ ৪১ হাজার ৩৭২ জন।
সংক্রমণের এই নিয়ন্ত্রিত হার বা নিম্নমুখী প্রবণতা টিকাদান কর্মসূচীর সাফল্য হিসেবেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি দেশে করোনা টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে শুরু হয় টিকাদান কর্মসূচী। কয়েক দফায় বয়স কমিয়ে শিক্ষার্থী, ভাসমান জনগোষ্ঠী, গর্ভবতী নারীদের টিকার আওতায় আনা হয়েছে। কয়েকবার গণটিকাদান কর্মসূচীর বিশেষ ক্যাম্পেনও হাতে নেয় অধিদফতর। যা এখনও চলমান।
মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং টিকাদান কর্মসূচীর এই ধারা অব্যাহত থাকলে শীঘ্রই দেশে করোনা একেবারে এ নিয়ন্ত্রিত হয়ে যেতে পারে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডাঃ রোবেদ আমিন বলেন, গত বছরের শেষের দিকে ওমিক্রনের যে উর্ধমুখী সংক্রমণ ছিল তা ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়েছে। বর্তমানে করোনার স্বাভাবিক পরিস্থিতির কাছাকাছি রয়েছে বাংলাদেশ। তা সত্ত্বেও সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। তিনি বলেন, এখনই মাস্ক খুলে ফেলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ভাইরাসের মিউটেশন হচ্ছে। ভাইরাসের বিবর্তন এখনও হতে পারে। আবার নতুন করে কোন ভ্যারিয়েন্ট আসবে কিনা সে শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই। একই কথা বলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ লেনিন চৌধুরী। তিনি বলেন, গত দুই বছরে আমরা করোনার কয়েকটি ধাপ দেখেছি। একেবারে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থেকেও আবার স্ফুলিঙ্গের মতো বাড়তেও দেখেছি। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। সংক্রমণের হার ১ এর নিচে চলে গেলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই।