করোনা মহামারী কাটিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

12
স্কুলের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। ছবিটি নগরীর সরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুল থেকে তোলা। ছবি- মামুন হোসেন

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা মহামারী কাটিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার সারাদেশে খুলেছে প্রাথমিক ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো। হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়েরও মোড়ক উন্মোচন। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকসহ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে চলমান রয়েছে পাঠদান কার্যক্রম। প্রায় দুই বছর পর আগামী ২০ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষাকার্যক্রমও। এসবের ধারাবাহিকতায় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি জানিয়েছেন, আপাতত আর শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ করার সম্ভাবনা নেই। সব মিলিয়ে যখন শিক্ষার্থীদের গত দুই বছরের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারী সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নতুন করে শুরু করেছে পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের দাবিতে আন্দোলন। যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মনে করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বুধবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কার্যালয়ে একাদশ শ্রেণীর ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের নতুন পাঠ্যবইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোকে যেভাবে দেখা দরকার সেভাবেই দেখা হচ্ছে। কাজেই আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করা কোন সমাধান নয়। এটাকে এই মুহূর্তে আমি কোন যৌক্তিক দাবি বলে ভাবছি না। সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানে উন্নীত হচ্ছে। এটিই আমাদের জন্য যথার্থ মনে করি।
তিনি বলেন, এটা ঠিক যে সাত কলেজে আগে কিছু সমস্যা ছিল। যা খুবই স্বাভাবিক। যখন থেকে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়, তখন থেকেই তাদের মানের ভিন্নতা আসে। পরীক্ষাসহ সব কার্যক্রম ভিন্ন মানে করতে হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শিক্ষার্থীর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি শিক্ষার্থী এ অধিভুক্ত সাত কলেজে। ফলে দুদিক থেকে সমন্বয়ের ব্যাপার আছে। তবে ধীরে ধীরে সাত কলেজের সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা হচ্ছে দাবি করে ডাঃ দীপু মনি বলেন, আমরাও সাত কলেজের সঙ্গে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা সমন্বয় করছে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। সে কারণেই সেশনজট এখন অনেকটাই কমে এসেছে। আশা করছি সেশনজট সমস্যা আর থাকবে না। পরীক্ষার ফলও যথাসময়ে দিতে পারবে। সেভাবেই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এ সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গত দুই বছর শিক্ষার্থীরা একটা ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছে। নতুন করে সব কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করি তাদের আগামীর দিনগুলো সুন্দর হবে। শিক্ষার্থীদের আগের ঘাটতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, হয়তো এক শিক্ষাবর্ষে সব ঘাটতি পূরণ সম্ভব না। আশা করছি এই শিক্ষাবর্ষ এবং আগামী শিক্ষাবর্ষ মিলিয়ে যেখানে যত ঘাটতি সব পূরণ করা সম্ভব হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকের ক্লাসও বুধবার শুরু হয়েছে। মাধ্যমিকের ক্লাস আগেই শুরু হয়েছে। আশা করছি, শীঘ্রই স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে যেতে পারব। যেসব শিক্ষার্থী এইচএসসি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাবে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে কথা বলব, তারা যাতে শুরুর দিকের ক্লাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের ঘাটতি পূরণে কিছু পদক্ষেপ নেয়।
পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন উপলক্ষে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি বইগুলো ভাল হবে। চেষ্টা করা হয়েছে বইগুলো ভুলত্রুটি মুক্ত রাখতে। তবে একবারেই তো ভুলের উর্ধে নয়। আমাদের রিভিউ কমিটি আছে। তারা আবার রিভিউ করবে। আগামী দিনে আমাদের পাঠ্যপুস্তক আরও ভাল হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা এমন শিক্ষা ব্যবস্থা চাই, যেখানে তারা আনন্দের সঙ্গে শিখবে। শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন করবে, মূল্যবোধ নিয়ে বড় হবে। সেই জায়গা থেকে বইয়ের বড় ভূমিকা আছে।
একই দিন ঢাকা কলেজে শহীদ আনম নজিব উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়ামে একাদশ শ্রেণীর ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় এখন থেকে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষাসহ অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রম আগের মতো চলবে। করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা আগামী দুই শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। আমরা চেষ্টা করছি যেন দ্রুতই শিক্ষা কার্যক্রমের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা যায়। করোনার সংক্রমণ রোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা আগামী দুই শিক্ষাবর্ষে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।
শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আজ আমি ঢাকা কলেজে উপস্থিত হলেও কথা বলছি সব শিক্ষার্থীর জন্য। করোনার এই দীর্ঘ সময় ধরে অনেক শিক্ষার্থীকেই একটি ট্রমার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আশাকরি নিয়মিত ক্লাস শুরু হলে তোমরা দ্রুতই সবকিছু গুছিয়ে নেবে। পূর্বের ঘাটতি পূরণ করতে পড়াশোনায় তোমাদের আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রভাবে দেশজুড়ে সংক্রমণ বাড়ার কারণে প্রায় দেড় মাস বন্ধ থাকার পর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ক্লাস পুরোদমে শুরু হয় বুধবার সকালে। আর প্রায় দুই বছর পর প্রাথমিকের পূর্বের স্তর তথা প্রাক-প্রাথমিকের ক্লাস শুরু হবে আগামী ২০ মার্চ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুচ্ছে বলে জানা গেছে। এর আগে মঙ্গলবার প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুটিন ২০২২ প্রকাশ করে। যা বুধবার থেকেই কার্যকর শুরু হয়। ক্লাস রুটিন বিষয়ে অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সকাল ৯টা থেকে প্রথম শিফট এবং বেলা ১২টা থেকে বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শিফটের কার্যক্রম শুরু হবে। প্রথম শিফট দুপুর ১২টা পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় শিফটে ৪টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত কার্যক্রম চলবে। প্রতি শিফটের আগে ১৫ মিনিট করে বিদ্যালয় প্রস্তুতি ও কোভিড সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। আর প্রতি শিফটের শেষে ১৫ মিনিট করে শিখন ঘাটতি পূরণে সময় দিতে হবে। বাংলা, ইংরেজী ও গণিত বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সহায়তামূলক শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে বলে জানায় অধিদফতর।
তবে সব ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শ্রেণীসহ সব শিক্ষা শ্রেণীর নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলো। শ্রেণীকক্ষে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) প্রণীত গাইডলাইন ও ২০টি কার্যক্রম পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণে ২১ জানুয়ারি থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালু করা হয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলা অতীব জরুরী। কোভিড-১৯ অতিমারী মোকাবেলায় মাউশি প্রণীত ‘গাইডলাইন’ এবং নির্দেশিত ২০টি কার্যক্রম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে যথাযথভাবে পালনের বিষয়টি নিশ্চিতের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।