কীর্তিমান পুরুষ বিমলেন্দু দাস সাধু বাবু

35

(পূর্ব প্রকাশের পর)
মরহুম শাম্স উদ্দিন, জেনারেল সেক্রেটারী পাবনায় চলে যাবার পর সাধু বাবুকে টি.বি এসোসিয়েশনের জয়েন্ট সেক্রেটারি পদ দেওয়া হয়। এর কিছু দিন পর টি.বি হাসপাতালের ডা: আমীর উদ্দিনকে সাধু বাবুর চেষ্টায় টি.বি হাসপাতালের উদ্যোগে লন্ডন পাঠানো হয় এবং তিনি লন্ডন গিয়ে প্রবাসী বন্ধুদের থেকে হাসপাতালের বেডের জন্য দু’বারে প্রায় ২ লক্ষ টাকা অনুদান সংগ্রহ করেন।
১৯৪৮ সালে যখন কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং আসে তখন এডিশনাল এস.পি এম.এ হক ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তখন উনার বাংলো ছিলো বর্তমানে এস.পি (পুলিশ সুপার) বাংলো। যখন কলকাতা মোহামেডান সিলেট আসে তখন সাধু বাবু ও তার লোকজন ট্রাকে করে পৌরসভা থেকে হাতলওয়ালা কাঠের চেয়ার নিয়ে তাদের আনতে যান স্টেশনে। এই এম.এ হক পরবর্তীতে মন্ত্রী হয়েছিলেন। তখন এম খুরশিদ আই.সি.এস ডি.সি ছিলেন। এম.এ হক উনার বাংলো ছেড়ে খেলোয়াড়দের থাকার ব্যবস্থা করে দেন। কলকাতা স্পোর্টিং ক্লাবের সঙ্গে এম.সি কলেজের খেলা হয় এম.সি কলেজের মাঠে। তখন এ.এস.এম মহী উদ্দিন সাহেব ছিলেন এস.পি। তিনি তাদের এসোশিয়েশনের পেট্রন ছিলেন। তারপর যখন সাধু বাবুসহ তার সহযোগীরা খেলোয়াড়দের নিয়ে ফটো তুলবেন তখন মহী উদ্দিন সাহেব বললেন, আমি কমিটির কেউ না, আমার ফটো তুলবেন না। তখন এ কথা শুনে সাধু বাবু বললেন, কেন ফটো উঠাবেন না, নিশ্চয়ই ফটো উঠাবেন খেলোয়াড়দের সাথে। বর্তমানে এখন যেখানে স্টেডিয়াম সেখানে কলকাতা মোহামেডাম স্পোর্টিং আসে তখন খেলা হয় গভ: হাই স্কুলের মাঠে। কিছুদিন পর যখন ডা: আই.এইচ ওসমানী ডি.সি, তখন ইন্দোনেশিয়া থেকে ডানস পার্টি সিলেটে আসে। তখন ডি.সি তাদের থাকার জন্য উনার বাংলো ছেড়ে দেন।
ডি.সি সাধু বাবুকে তাদের থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থার দায়িত্ব দেন। সাধু বাবু তখন ডি.বি আলম, টি.এস.আই সাহেবকে নিয়ে টেকনিক্যাল স্কুল এবং এম.সি কলেজ হোস্টেল থেকে খাট সংগ্রহ করেন এবং তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন। তারপর তিনি সিলেটের যত লেপ তোষকের দোকান আছে তা থেকে লেপ তোষক সংগ্রহ করেন। তখন ও.সি নুরুল ইসলাম তাকে কাজে সাহায্য করেন। এমন ব্যবস্থা দেখে ডি.সি আই.এইচ ওসমানী অভিভূত হন। সিলেটের জেলা ফুটবল দল যখন শিলচার ও করিমগঞ্জে যায় তখন ডি.সি সাধু বাবুকে ফুটবল টিমের ম্যানেজার করেন। তখন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ছিলেন তাজ উদ্দিন। তিনি ছিলেন ইত্তেফাকের সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর শ্বশুর। তারপরে ডি.সি বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের বর্ডার এলাকা করিমগঞ্জ, শিলচার, শিলং, আগরতলা থেকে সব ফুটবল দলকে সিলেটে নিয়ে আসেন এবং আসার পর তাদের সব দায়-দায়িত্ব সাধু বাবুর উপর দিতেন। ডি.সি-র নীতি ছিলো ভারতের বর্ডার জেলাগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
বঙ্কুবিহারী দাস ছিলেন সাধু বাবুর ঠাকুর দাদা। বঙ্কুবাবুর বন্ধু সেলবরসের জমিদার তোতা মিয়া চৌধুরী। তিনি বঙ্কুবাবুর কাছে আসেন এবং বলেন সরকারের খাজনা দেওয়ার জন্য টাকার প্রয়োজন। তখন বঙ্কুবাবু বলেন, খাজাঞ্চিবাড়ি সুদের বিনিময়ে টাকা দেয়। সেখান থেকে টাকা আনার জন্য পরামর্শ দেন। জমিদার তোতা মিয়া চৌধুরী খাজাঞ্চিবাড়ি থেকে সুদ মারফত টাকা আনতে যান। তখন সেই বাড়ির জমিদার বলেন, বঙ্কুবাবু যদি জামিনদার হন তাহলে তিনি টাকা দিতে রাজি আছেন। তারপর সাধু বাবুর ঠাকুর দাদা জামিনদার হন টাকার জন্য। জমিদার তোতা মিয়া চৌধুরীর কাছে টাকা পাওনা থাকায় খাজাঞ্চিবাড়ি সরকারকে দিয়ে সাধু বাবুদের খুব মূল্যবান সম্পত্তি নিলাম করান। যার মধ্যে অন্যতম পশ্চিম কাজিরবাজার (আগের নাম বাবুর বাজার), বাঘা পরগণা জমিদারি। বর্তমানে লালদিঘীর দু’ধারে যে দোকানগুলো আছে সেটাও নিলাম হয় তারপর লামাবাজার মুনিপুরী বস্তিও নিলাম হয়।
খাজাঞ্চিবাড়ি উদ্দেশ্যমুলকভাবে জমিদার তোতা মিয়া চৌধুরীকে দিয়ে বঙ্কুবাবুকে টাকার জামিনদার হতে বলেন। তখন সাধু বাবু ঠাকুর দাদা তাদের এ উদ্দেশ্য বুঝতে পারেননি বলে তাদের সব সম্পত্তি নিলামে চলে যায়। একবার সুখময় চৌধুরী পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি লালদিঘীর কচুরিপনা পরিস্কার করান এবং এই লালদিঘীর জায়গা পৌরসভার জায়গা বলে দাবি করেন। তখন সাধু বাবুর পরিবাবার থেকে হাইকোর্টে কেইস করেন এবং হাইকোর্ট থেকে তাদের পক্ষে রায় পান। তখন পৌরসভা প্রিভি কাউন্সিলে আপিল করেন। তারপর প্রিভি কাউন্সিলের মাধ্যমে লালদিঘীর জায়গা পান। তখন সব চেয়ে মজার ব্যাপার হল বনওয়ারী লাল দাস তিনি তখন পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। তখন তিনি তার নিজের বিরুদ্ধে প্রিভি কাউন্সিলে আপিল করেন। এই কেইসের নাম ছিলো বনওয়ারী লাল দাস ভারসাস চেয়ারম্যান বনওয়ারী লাল দাস। (চলমান)