বিধিনিষেধ উঠলেই জোরালো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার অপেক্ষায় বিএনপি

4

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দাবি-দাওয়া আদায়ে কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ-সমাবেশসহ নানা আন্দোলন কর্মসূচি করছিল বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ডিসেম্বর-জানুয়ারির দিকে চলছিল তাদের জেলা পর্যায়ের সমাবেশ। তবে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বিধিনিষেধ জারি করলে সারাদেশে জেলা পর্যায়ে চলমান সমাবেশ স্থগিত করে বিএনপি। করোনা পরিস্থিতি এখন কিছুটা সামলে উঠলেও বিকল্প নতুন কর্মসূচির বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি দলটির নেতারা। ফলে পরবর্তী কর্মসূচি কবে নাগাদ শুরু হবে তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তবে কর্মসূচি যেদিনই হোক না কেন, জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে মাঠে নামতে চান তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়েছে।
বিধিনিষেধের কারণে কর্মসূচি স্থগিত করেছি- বিষয়টি তেমন নয়। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আমরা কর্মসূচিগুলো সাময়িক স্থগিত করেছি। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পূর্ব নির্ধারিত জেলা সমাবেশ শুরু হবে
দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নানা ইস্যুতে কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিক আন্দোলন করে আসছে। তবে কোনো আন্দোলন দৃশ্যত সফল না হওয়ায় হতাশায় পড়তে হয়েছে নেতাকর্মীদের। এ অবস্থায় ঘুরে দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে একাধিকবার সরকার গঠন করা দলটি। সূত্র বলছে, করোনা বিধিনিষেধের মধ্যে নতুন কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিধিনিষেধ প্রত্যাহার হলেই জোরালো কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামতে চান তারা।
দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো এবং তার মুক্তির দাবি নিয়ে দেশব্যাপী কর্মসূচি শুরু করেছিল বিএনপি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সরকারি বিধিনিষেধ জারি হলে এ কর্মসূচি স্থগিত করতে হয়। প্রথম দফায় ২৮ জেলায় সমাবেশ শেষে দ্বিতীয় দফায় ৩৯ জেলায় কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সাত জেলায় সমাবেশ করার পর বিধিনিষেধের কারণে বাকি জেলার কর্মসূচি স্থগিত করে দলটি।
গত ১৪ জানুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলন করে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলা পর্যায়ে সব সমাবেশ স্থগিত করার কথা জানান। তবে ২২ জানুয়ারি পার হলেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি দলটি।
এদিকে গত ১৯ জানুয়ারি ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে কিছু কর্মসূচি নিয়েও তা স্থগিত করে বিএনপি। এরপর দৃশ্যত আর কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি দলটির।
দলীয় সূত্র জানায়, করোনা বিধিনিষেধের কারণে বিএনপির কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনার চিন্তাভাবনা চলছে। যেহেতু করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রয়েছে, তাই জনসমাবেশের দিকে না গিয়ে ত্রাণ বিতরণ, বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে মাঠে নামতে হাইকমান্ডের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এখন হাইকমান্ডের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
নাটোরের লালপুর উপজেলার ঈশ্বরদী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমিরুল হক টমি জাগো নিউজকে বলেন, আন্দোলনের বিষয়ে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। দলকে সংগঠিত করে পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে আন্দোলন বেগবান করতে হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক শিকদার বলেন, করোনার কারণে আমাদের জেলা সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে। কবে নাগাদ এগুলো শুরু হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারছি না। তবে অভ্যন্তরীণভাবে সব জায়গায় প্রস্তুতি চলছে। বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের পর যেন আমরা কর্মসূচি পালন করতে পারি, সেজন্য ঘরোয়া কর্মসূচির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখা হচ্ছে।
নতুন কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিধিনিষেধের কারণে কর্মসূচি স্থগিত করেছি- বিষয়টি তেমন নয়। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আমরা কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত করেছি। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পূর্ব নির্ধারিত জেলা সমাবেশ শুরু হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা কর্মসূচি স্থগিত করিনি। তারিখটা পুনর্র্নিধারণ করছি। ইতোমধ্যে আমাদের সব সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয়, মহানগর ও জেলার নেতাদের পুনর্র্নিধারিত তারিখে সভা-সমাবেশ করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।
তিনি বলেন, যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা অযৌক্তিক ও অকার্যকর। তারপরও জনস্বার্থ এবং প্রাসঙ্গিক সবকিছু বিবেচনা করে সমাবেশগুলোর তারিখ পুনর্র্নিধারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নতুন কর্মসূচি নেওয়া হলে তা আপনাদের জানানো হবে।
সম্প্রতি এক সভায় অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, করোনার পর আন্দোলন কাকে বলে দেখবেন। আন্দোলনের তোড়ে সরকার ভেসে যাবে।