আজ ১৩৬ ইউপিতে ভোট, তিন স্তরের নিরাপত্তা

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ সোমবার সপ্তম ধাপে দেশের ১৩৬ ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোট। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ শেষে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ফল ঘোষণা করা হবে। এ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েনের মাধ্যমে তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন থেকে আজকের ইউপি ভোট কঠোর পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রবিবার থেকেই প্রতিটি নির্বাচনী এলাকাকে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে নিয়ে এসেছে। প্রতিটি কেন্দ্রে রবিবার দুপুরের মধ্যেই নির্বাচনী সামগ্রী পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ৬ষ্ঠ ধাপে ভোটের দিন কোন প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও বিভিন্ন মহল থেকে এর আগের ৫ ধাপের মতো এবারও ইউপি নির্বাচনের দিন সহিংসতা হয় কি না সে বিষয়ে আশঙ্কা করা হয়েছে। তবে আজকের ভোটগ্রহণ ও গণনাকালে যাতে সে পরিস্থিতি না হয় সে জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
আজকের ইউপি ভোটগ্রহণকালে প্রতিটি কেন্দ্রে ২২ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। সব ইউপিতে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে একটি করে মোবাইল ফোর্স টিম এবং প্রতি ৩টি ইউপিতে ১টি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স টিম মোতায়েন রয়েছে। আর প্রতিটি উপজেলায় র‌্যাবের ২টি মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স টিম, বিজিবির ২টি মোবাইল ফোর্স টিম ও ১টি স্ট্রাইকিং ফোর্স টিম দায়িত্ব পালন করছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, আজকের ইউপি নির্বাচনে ভোটগ্রহণকালে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মনিটরিং সেলের কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে পরিচালিত হচ্ছে। এ সেলের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে-১. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনকে অবগত করা। ২. সেলে অন্তর্ভুক্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচন উপলক্ষে মোতায়েন করা আইনশৃঙ্খলা সদস্যদের অবস্থা ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানানো। ৩. সংস্থার নিজস্ব যোগাযোগ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কমিশনের নির্দেশনা তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করা। ৪. ভোটকেন্দ্র বা নির্বাচনী এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করা। বিভিন্ন নির্বাচনী মালামাল পরিবহন, বিতরণ এবং ভোটগ্রহণ কাজে নিরাপত্তা বিধানের জন্য মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসারদের সহায়তা দেয়া।
২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বৈঠক শেষে ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিল ১০ জানুয়ারি। ১৫ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র বাছাই করা হয়। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপীল ১৮ জানুয়ারি এবং আপীল নিষ্পত্তি করা হয় ২১ জানুয়ারি। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল ২২ জানুয়ারি এবং প্রতীক বরাদ্দ করা হয় ২৩ জানুয়ারি। ২০ জেলার ২৪ উপজেলায় এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৩৮ ইউপিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেও ইতিপূর্বেই রাঙ্গামাটি জেলার জুড়াছড়ি উপজেলার ২ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।
ব্যালট পেপার ছাড়া অন্যান্য ভোটগ্রহণ সামগ্রী রবিবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে আজ সকালে ৬টার মধ্যেই ব্যালট পেপার পৌঁছে যাচ্ছে। এ জন্য জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের আগেই নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ইউপি নির্বাচনে সব পর্যায়ের ব্যালট পেপারের অধিকতর নিরাপত্তার জন্য ভোটগ্রহণের দিন সকালে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছানোর জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আর সপ্তম ধাপে ইউপি ভোট যেসব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) হবে তার জন্য আগেই বিশেষ পরিপত্র জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখা থেকে এ পরিপত্র জারি করা হয়।
এর আগে সারাদেশে ৬ ধাপে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গতবছর ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর দুই পর্বে প্রথম ধাপের ৩৬৯টি ইউপিতে এবং ১১ নবেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৩টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর পর ২৮ নবেম্বর তৃতীয় ধাপে ১ হাজার ৭ ইউপিতে ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে ৮৪০টি ইউপিতে, এবছর ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে ৭০৭ ইউপিতে এবং ৬ষ্ঠ ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২১৯ ইউপিতে।
রাঙ্গামাটির ৭ কেন্দ্রে ব্যবহৃত হবে হেলিকপ্টার : সপ্তম ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় ৮, লংগদু উপজেলায় ৭ ও জুরাইছড়ি উপজেলার ২টি ইউপিতে আজ সোমবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার মধ্যে সবচেয়ে দুর্গম বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ও বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের ৭টি কেন্দ্রে কোন সড়ক পথ না থাকায় নির্বাচন সামগ্রী পাঠাতে এবারও হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে সাজেকের নিউলংকর, শিয়ালদাহ, বেটলিং, লক্ষ্মীছড়ি, তুইসুই এবং বাঘাইছড়ির দোসর ও ভূইয়াছড়া।
মহেশখালীতে ভোট কেন্দ্রে সংঘাতের আশঙ্কা : ছোট মহেশখালী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীও। নির্বাচনী পরিবেশ শান্ত মনে হলেও সাধারণ মানুষের মাঝে বাড়ছে শঙ্কা। ভোটের দিন তিন প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন তারা। স্থানীয়দের মতে, প্রার্থীরা ভোটের দিন প্রভাব বিস্তারের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে বহিরাগতদের জমায়েত করছে। বহিরাগতরা মহেশখালী পৌরসভা, বড়মহেশখালী, কুতুবজোম, শাপলাপুর থেকে এসেছে বলে জানা গেছে।