ভাসমান মানুষ আজ থেকে টিকা পাবে, কওমির ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকেও দেয়া হবে টিকা

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ থেকে শুরু হচ্ছে ভাসমান জনগোষ্ঠীকে করোনার টিকাদান কর্মসূচী। আজ বিকেল বা সন্ধ্যায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে শুরু হবে এ কার্যক্রম। প্রতিদিন অন্তত: কম-বেশি ১ হাজার মানুষকে লক্ষ্য ধরে ভাসমান জনগোষ্ঠীর প্রায় সবাইকে টিকার আওতায় আনাহবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ডাঃ শামসুল হক। কওমি শিক্ষার্থীদেরও টিকাদান কর্মসূচী আজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে শনিবার অধ্যাপক ডাঃ শামসুল হক বলেন, ভাসমান জনগোষ্ঠী বলতে যারা ফুটপাথে ঘুমায়, ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে তাদের সবাইকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় কাউন্সিলর বা ওয়ার্ড কমিশনারদের পরামর্শ নেয়া হবে। আমাদের বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) রয়েছে তাদের কাছে ভাসমান জনগোষ্ঠীর যে তালিকা রয়েছে সেসব তালিকা ধরে সবাইকেই টিকা দেয়া হবে। এরা সবাই পাবে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি জনসন এ্যান্ড জনসনের টিকা। তবে এই ভাসমান জনগোষ্ঠীর মধ্যে যদি ১২ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে কেউ থাকে অর্থাৎ ভাসমান শিশুদের জন্য আলাদা কেন্দ্র করা হবে। আপনারা যেমনটি জানেন, শিশুদের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ফাইজারের টিকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। তাই তাদের ফাইজারের টিকা দেয়া হচ্ছে যেসব কেন্দ্রে হয়তো নিয়ে গিয়ে টিকা দেয়া হবে। তিনি বলেন, এর আগে আমরা বস্তিতে টিকাদান কর্মসূচী পালন করেছি। এবার ভাসমান জনগোষ্ঠীর জন্য এ কার্যক্রম চালু করছি। লক্ষ্যমাত্রার কেউই টিকার আওতার বাইরে থাকবে না। অধ্যাপক ডাঃ শামসুল হক বলেন, আমাদের কাছে জনসনের ৬ লাখের মতো টিকা সংগ্রহে আছে। আরও আসবে। আশা করছি টিকার সঙ্কট হবে না।
কওমি শিক্ষার্থীদের টিকাদানের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রায় ৩০ লাখ কওমি শিক্ষার্থীকে ফাইজারের টিকা দেয়া হবে। এদের টিকাকেন্দ্র মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ নিজেরা বাছাই করে দিচ্ছে। যেসব মাদ্রাসা বড় এবং এসির ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলোকেই কেন্দ্র করা হবে। আর উপজেলা পর্যায়ে আমাদের নির্ধারিত কেন্দ্রে এসে শিক্ষার্থীরা টিকা নেবে। তাদের সবাইকে ফাইজারের টিকা দেয়া হলে টিকার কোন সঙ্কট তৈরি হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ফাইজারের টিকা রয়েছে। আরও আসতাছে। টিকার সঙ্কট হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এর আগে ৩০ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, দেশের ভাসমান জনগোষ্ঠীকে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি জনসন এ্যান্ড জনসনের টিকা দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া তিন লাখ ৩৬ হাজার টিকা ব্যবহার করা হবে। যেহেতু জনসনের টিকা এক ডোজ দিলেই হয়। তাই ভাসমানদের এই টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এ সময় তিনি বলেন, ১২ বছর বা তার বেশি বয়সী শিশুদের সবাইকে টিকা দেয়া হবে। এরই ধারাবাহিকতায় কওমি শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বছরের ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনার টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয় ভারত থেকে আসা অক্সফোর্ড এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে। কিন্তু ওই সময় দেশটিতে করোনার ডেল্টা ধরনের মহামারী আকার ধারণ করলে বন্ধ করে টিকা রফতানি। ফলে বাংলাদেশেও মুখ থুবরে পড়ে টিকাদান কার্যক্রম। কিন্তু সরকারের টিকাপ্রাপ্তিতে সরকারের নানামুখী তৎপরতায় অবশেষে সাফল্য আসে। চীনের তৈরি সিনোফার্মের টিকা দিয়ে আবারও শুরু হয় টিকাদান কার্যক্রম। এরপর ধারাবাহিকভাবে কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় জাপান, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ থেকে আসতে থাকে অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাও। এক সময় যুক্তরাষ্ট্রও পাঠাতে শুরু করে ফাইজারের টিকা। এতে করে টিকাদান কার্যক্রম চলে পূর্ণোদ্যমে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি গত বছরের ১ নবেম্বর থেকে দেশজুড়ে শুরু হয় ১২-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদেরও টিকাদান কর্মসূচী। ১৬ নবেম্বর থেকে রাজধানীর বস্তিগুলোর বাসিন্দাদেরও টিকা দেয়া শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ থেকে শুরু হচ্ছে ভাসমান জনগোষ্ঠী এবং কওমি শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম। এবং একই সঙ্গে দেশে প্রথমবারের মতো দেয়া হবে জনসনের টিকা।