নিরাপদ খাদ্য

7

সমাজবদ্ধ মানুষ তার অস্তিত্বের প্রয়োজনে চারপাশে যে বৈষয়িক জগৎ তৈরি করে সেটাই তার জীবন সুরক্ষার বুনিয়াদ। বৈষয়িক জগৎ মানে উৎপাদনের নানামাত্রিক উপাদান যা বেঁচে থাকারও নিয়ামক শক্তি। কৃষিনির্ভর বাংলার উৎপাদনের শক্তিই তার ভূমি। চাষযোগ্য পলিমাটির এই দেশে যেন বীজ বপন করলেই সোনা ফলে। আমাদের প্রতিদিনের অন্ন সংস্থানও হয় উর্বর পলিমাটির অভাবনীয় যোগসাজশে। সঙ্গতকারণে প্রতিদিনের নির্ভেজাল খাদ্য সামগ্রীর যথার্থ সুরক্ষাও সংশ্লিষ্ট মানুষদের বাঁচিয়ে রাখার এক অনন্য কর্মযোগ। সময়ের পরিবর্তনে ভূমি যেমন তার উর্বরতার মাত্রাকে বাড়াতে পারে না একইভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধিও এক অযাচিত দুর্ভোগ। ভূমির সাপেক্ষে জনসংখ্যা বেড়ে গেলে সঙ্কট অনিবার্য হয়ে ওঠে, বাড়তি উৎপাদনে হরেক রকম সমস্যা ঘনীভূত হওয়াও এক প্রকার বিড়ম্বনা। ভূমির ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপই শুধু নয়, ক্রমান্বয়ে তার উৎপাদন শক্তি হ্রাস পাওয়াও অনিবার্য নিয়মে চলে আসে। সেখানে নতুন করে মাটির উর্বরতার জন্য আধুনিক সার বীজ সংযোজনও পরিস্থিতির চাহিদা। আর এখানেই প্রচ্ছন্ন হয়ে থাকে যান্ত্রিক কলাকৌশল ও নতুন আবিষ্কারের নানামাত্রিক দুর্যোগ।
জমিতে যে অতিরিক্ত সার কিংবা কীটনাশক ব্যবহার করা হয় তা খাদ্যের গুণ বিনষ্ট করে। যে সোনার ফসল আমরা ঘরে তুলছি তা স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে কতখানি স্বস্তির বলয় দিতে পারছে? ভেজালে সয়লাব হওয়া খাদ্যপণ্য সবক্ষেত্রে আগুনের লেলিহান তাপে তার দূষণকে সজাগ-সাবধানতায় বের করতে পারবে সেটাও কেমন যেন ধারণার বাইরে। সম্প্রতি পালিত হলো নিরাপদ খাদ্য দিবস। নিরাপত্তার প্রতিপাদ্যই ছিল স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবারের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ। ফসল উৎপাদনে এখন বেশি মাত্রায় সার এবং কীটনাশক ব্যবহার হয়ে থাকে। যা শুধু স্বাস্থ্য নয়, পরিবেশ সুরক্ষায়ও চরম বিপত্তি ঘটাতে পারে। আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই খাদ্য নিরাপত্তার অভাব কতখানি তা খতিয়ে দেখা জরুরী। সরকার নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে খাদ্য পণ্যের মান যাচাই বাছাইয়ে সর্বতো সাবধানতা শুরু করেছে। ভেজাল খাদ্য প্রমাণ হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে শাস্তি দেয়ার বিধানও চালু হয়েছে। তার ওপর সভা, সমিতি, সেমিনার, কর্মশালার আয়োজন করে নিরাপদ খাদ্য তালিকাকে জোরালোভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। নাগরিকদেরও নিজ জীবন ও স্বাস্থ্য বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। যথাযথ নজরদারি ও তদারকি করে খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। নিরাপদ ও মানসম্মত খাদ্যই জীবন ও স্বাস্থ্যকে সব সময় সুরক্ষিত রাখতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে। সর্বসাধারণকেও সে ব্যাপারে সজাগ থাকা অত্যন্ত জরুরী।