বিধিনিষেধ ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ল, প্রজ্ঞাপন জারি

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আগের দেয়া বিধিনিষেধের মেয়াদ শেষ হবে আগামী রবিবার।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনাজনিত রোগের (কোভিড-১৯) নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও বাংলাদেশে এ রোগের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের জারি করা সব বিধিনিষেধ ও নির্দেশনার সঙ্গে দুটি শর্ত সংশোধন করে সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো। এই বিধিনিষেধ আগামী ৭-২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
শর্ত দুটি হলো উন্মুক্ত স্থানে ও ভবন অভ্যন্তরে সামাজিক/রাজনৈতিক/ ধর্মীয়/রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ১০০ জনের বেশি সমাবেশ করা যাবে না। এসব ক্ষেত্রে যারা যোগদান করবেন তাদের অবশ্যই কোভিড টিকা সনদ বা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর সার্টিফিকেট আনতে হবে। সব স্কুল-কলেজ ও সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষে পাঠদান বন্ধ থাকবে।
নতুন ধরন ওমিক্রনসহ করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ১০ জানুয়ারি সারাদেশে বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। যা ১৩ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। তখন ১১টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এতে বলা ছিল পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে যে কোন সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানসহ যে কোন ধরনের সমাবেশ করা যাবে না। স্বাস্থ্যবিধিতে জোর দিয়ে আরোপ করা বিধিনিষেধে প্রয়োজনে আইনপ্রয়োগ করে শাস্তি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সকল জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে, অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে, রেস্তরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে, ১২ বছরের উর্ধে সকল ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া যাবে না, স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরসমূহে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পোর্টগুলোতে ক্রুদের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতে আসা ট্রাকের সঙ্গে শুধু ড্রাইভার থাকতে পারবে। কোন সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে, ট্রেন, বাসা এবং লঞ্চের সক্ষমতার অর্ধেকসংখ্যক যাত্রী নেয়া যাবে। সর্বপ্রকার যানের চালক ও সহকারীকে আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ টিকা সনদধারী হতে হবে, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ টিকা সনদ প্রদর্শন ও র‌্যাপিড এ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সকল মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমমারা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন, করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ প্রয়োগ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সহায়তা করবে, কোভিড আক্রান্তের হার ক্রমবর্ধমান হওয়ায় উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশসমূহ পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে এবং কোন এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। ২৪ মার্চ থেকে সরকারী-বেসরকারী সব প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। কয়েক দফায় এই মেয়াদ বাড়িয়ে ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠানে লকডাউন শিথিল করা হয়। এরপর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এলে ২০২১ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন নামে লকডাউনে ছিল পুরো দেশ। অর্থাৎ করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে ১১ মাস দেশ কার্যত অচল ছিল।
এর আগে করোনার (কোভিড-১৯) ডেল্টা ধরন সংক্রমণে উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় গত বছরের ৫ এপ্রিল থেকে সারাদেশে এক সপ্তাহের জন্য বিধিনিষেধ ঘোষণা করে সরকার। ওই সময় শিল্পকারখানা খোলা থাকলেও বন্ধ ছিল সব ধরনের সরকারী ও বেসরকারী অফিস আদালত, মার্কেট, শপিংমল। সাতদিনের ওই বিধিনিষেধের মেয়াদ আবার বাড়ানো হয় ১৯ এপ্রিল। এ বিষয়ে ওইসময় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছিলেন, জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শ ছিল বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়ালে বর্তমান চেইনটা ভেঙ্গে দেয়া সম্ভব হবে এবং সংক্রমণ নিম্নগামী হবে। সেটা বিবেচনায় নিয়ে ২২-২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিধিনিষেধের সময় বাড়িয়ে সারসংক্ষেপ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। সংক্রমণ না কমায় এই মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয় ৩ মে। মন্ত্রিপরিষদের নেয়া সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ওই বিধিনিষেধ বাড়ানো হয় ১৬ মে পর্যন্ত। এ সময় জেলার ভেতরে বাস চলাচল করলেও এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বাস চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এবার করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ উদ্বেগজনকহারে বাড়ায় আবারও বিধিনিষেধ আরোপ করল সরকার। মহামারী শুরুর পর থেকে দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৮ লাখ ২৪ হাজার ১৮০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন ২৮ হাজার ৪৬১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৭ জন।