তাহিরপুরে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাই নৌকার চরম প্রতিদ্বন্দ্বী

34

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
তাহিরপুরে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাই নৌকার চরম প্রতিদ্বন্দ্বী। উপজেলার ৭ ইউনিয়নের মধ্যে তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন ব্যতীত সব ক’টি ইউনিয়নে রয়েছে আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী। একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ৬ টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরাও বিভাজন হয়ে কাজ করছেন দলীয় নৌকা মনোনয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে। যে কারণে এখন দলীয় প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক নিয়েও নির্বাচনী মাঠে হিমশিম খাচ্ছেন দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগ অঙ্গ সংগঠন এর নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বালিজুরী ইউনিয়নে অন্যান্য দল সমর্থিত কোন প্রার্থী কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রাথী দুজনই নির্বাচন করছেন বালিজুরি ইউনিয়নে। বালিজুরি ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেব চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বাংলাদেশ স্থল বন্দর শ্রমিকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজাদ হোসেন।
বাদাঘাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ যগ্ম আহবায়ক সুজাত মিয়া নৌকা মনোয়ন পেলেও ভোটের মাঠে ভোটযুদ্ধে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দুই বিদ্রোহী প্রার্থী বাদাঘাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ যুগ্ম আহবায়ক বর্তমান চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন।
বড়দল উত্তর নৌকার মনোনীত প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি জামাল উদ্দিন তিনিও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মাসুক মিয়ার সাথে দলীয় ভোট ভাগাভাগি করছেন।
বড়দল দক্ষিণ ইউনিয়ন নৌকা পেয়েছেন ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণকে কাছে টানলেও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ আইন বিষয়ক সম্পাদক হাজী ইউনুছ মিয়া তার পথের কাটা।
একই অবস্থা শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন নৌকা প্রতীক প্রার্থীর বেলায়ও। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সহ সভাপতি আবুল খায়ের নৌকা প্রতীক পেলেও তার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন দলের উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ¦ আবুল হোসেন খান, ছেলে পারুল মিয়া ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সবুজ আলম। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন বলেও দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। একই অবস্থা শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে। নৌকা মনোনীত প্রার্থী যুবলীগ সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও বর্তমান চেয়ারম্যান বিশ^জিত সরকার ভোটের মাঠে থাকলেও বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা সাংবাদিক কৃষ্ণ গোপাল মানব তার ভোটের হিসেব নয় ছয় করে দিতে পারেন বলেও একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
২০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার উপজেলার আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে এক জরুরী সভা আহবান করে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার সংক্রান্ত। এতে সুনামগঞ্জ -১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন উপস্থিত হলে দলের কোন বিদ্রোহী প্রার্থীরা জরুরী সভায় অংশ গ্রহণ করেন নি।
উপজেলা আওয়ামী লীগ দপ্তর সম্পাদক রমেন্দ্র নারায়ন বৈশাখ বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় নৌকা প্রার্থীকে তার দলের লোকজনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে। এতে করে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে অন্যান্য দল সমর্থিত প্রার্থীদের লাভ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি।
দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়ন নৌকা মনোনীত প্রার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, দল আমাকে নৌকা প্রতীক মনোনয়ন দিয়েছে। আমি আশাবাদী ইউনিয়নের সকল নেতৃবৃন্দ আমার পক্ষে নৌকার পক্ষে কাজ করে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবেন।
একই ইউনিয়নের নৌকা মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী হ্বাজী ইউনুছ, তিনিও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। তিনি জানান, তিনি গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। সামান্য ভোটে নির্বাচিত হতে পারেন নি। নৌকা না পাওয়ার পর নির্বাচন করার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু ইউনিয়নের জনগণের অনুপ্রেরণায় তিনি এবারও নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছেন।
বালিজুরী ইউনিয়ন নৌকা মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী আজাদ হোসেন বলেন, দলীয় অনেক নেতাকর্মী ও ইউনিয়নের সর্ব সাধারণ আমার সাথে নির্বাচনের মাঠে আছেন। আমি আশা করি নির্বাচিত হবো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মনোনয়ন বঞ্চিত উপজেলা আওয়ামী লীগ জনৈক এক নেতা বলেন, মাঠের অবস্থা বিচার করে মনোনয়ন দেয়া হয় না। নির্বাচনের মাঠে যাদের অবস্থান রয়েছে তারা মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচনটা হাতছাড়া করতে চায় না। তাই তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং অনেকে সফলও হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর খোকন বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জরুরী সভা আহবান করা হয়েছিল বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার সংক্রান্ত আলেচনার জন্য। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হোসনে খান তিনি সভায় অংশগ্রহণ করে তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিবেন বলে জানান। অন্যরা কেউ সভায় আসে নি।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি আলী মর্তুজা বলেন, বিদ্র্যেহী প্রার্থীদের প্রত্যেকের পরিচিতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ঘিরে। আজ সবাই দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে দলের বিরোধিতা করছেন। এতে করে সাংগঠনিক ভাবে দলের অবস্থান দুর্বল হচ্ছে বলেও তিনি জানান।