মানুষের মৌলিক অধিকারের নিরাপত্তা

6

॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥
(পূর্ব প্রকাশের পর)
মানুষ চাক বা না চাক প্রকৃতিগতভাবেই সে আল্লাহর দাস। কিন্তু বুদ্ধি বিবেক জ্ঞান প্রজ্ঞার দিক দিয়ে মানুষ আল্লাহর পরিবর্তে অন্যের দাস হতে পারে। কারণ এখানে তার একটা স্বাধীন ব্যবহার ক্ষমতা আছে। বুদ্ধি বিবেক জ্ঞান প্রজ্ঞা সবই আল্লাহর সৃষ্টি। এদের ওপরও আল্লাহর একচ্ছত্র কর্তৃত্ব। তবে এদেরকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে আল্লাহ মানুষকে কিছু স্বাধীন ক্ষমতা দিয়েছেন। এ ক্ষমতার দরোজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে যে কেউ মানুষের ওপর কর্তৃত্ব ফলাতে পারে। তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার হরণ করতে পারে এবং তার ভিত্তিতে তার সাংস্কৃতিক সামাজিক এবং অন্যান্য যাবতীয় অধিকারও হরণ করে তাকে নিজের দাসে পরিণত করতে পারে। মানবিক মৌলিক অধিকার হরণের এটাই একটা পথ। বুদ্ধি বিবেক জ্ঞান প্রজ্ঞাকে যদি মানুষের যেকোনো প্রকার হস্তক্ষেপের উর্ধে উঠে একমাত্র আল্লাহর দাসে পরিণত করা যায় তাহলে মানুষের এই মৌলিক অধিকার বাইরের যে কোনো হস্তক্ষেপ থেকে সংরক্ষিত হয়ে যেতে পারে। দুনিয়ার সমস্ত চিন্তা মতবাদ ও ধর্মীয় ব্যবস্থার মধ্যে একমাত্র ইসলামই এই প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এতে সফলকাম হয়েছে। ইসলামের কাছে কুরআন ও হাদীসের আকারে একটা অপরিবর্তনীয় গাইডলাইন বা সুস্পষ্ট আইন বিধান থাকায় এটা সম্ভবপর হয়েছে। এক সময় ইসলামের প্রভাব বলয়ে বহু শতাব্দীকাল ধরে পৃথিবীব্যাপী মানুষের মৌলিক অধিকার সমুন্নত ছিল। পৃথিবীর বিগত হাজার বছরের মানুষের ইতিহাস এর সাক্ষী। যেখানে মানুষের কল্যাণের ও মানবিক অধিকার সমুন্নত রাখার দাবিদার মানুষের তৈরি মতবাদ ও চিন্তা দর্শনগুলো গণতনত্র সমাজতন্ত্র ও যেকোনো অত্যাধুনিক চিন্তাদর্শন ও ব্যবস্থাই হোক না কেন তাদের দাবিকৃত ব্যবস্থার শতকরা একশো ভাগ কখনো প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। বরং যতই দিন গিয়েছে তাদের বিকৃত রূপই সামনে এসেছে। তারপর তাদের ব্যর্থতা বিশ্ব ব্যবস্থায় মানুষের মৌলিক অধিকার হরণকে চুড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। সেখানে ইসলাম তার দাবিকৃত মতার্শভিত্তিক মানব সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিল। তা শতকরা একশোভাগ সফলতা সহকারে ্রায় অর্ধশতাব্দীকাল প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং ‘খাইরুল কুরুন’ তথা মানবতার সর্বোত্তম যুগ নামে অভিহিত হয়েছিল। তারপর তাতে অবক্ষয় দেখা দিলেও পরবর্তী হাজার বছর পযৃন্ত বিশ্বব্যবস্থা তার কল্যাণ ধারায় আপ্লুত হয়েছে। আজ আবার মুসলমানদের মধ্যে সেই ব্যবস্থাকে পুনরজীবিত করার প্রেরণা জাগছে। তারা আজ মানুষের নয় আবার একমাত্র আল্লাহর দানস হতে চায়। তারা মানুষের ওপর থেকে মানুষের প্রভূত্ব খতম করে দিয়ে আবার একমাত্র আল্লাহর প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার হরণের সমস্ত পথ বন্ধ করে দিতে চায়।
মানুষের এই মৌলিক মানবিক অধিকার রক্ষার প্রচেষ্টাকে রুখে দেবার জন্য ফুঁসে উঠেছে পশ্চিমা ইহুদী খৃস্টবাদী চক্র। ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্রুশেড ঘোষণা করেছে। সুদীর্ঘ পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন শেষে ৯/১১ এরপর বুশ-ব্লেয়ার চক্র ইসলামের প্রতিনিধিত্বশীল মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী ঘোষণা দিয়ে তাদের এই প্রচেষ্টার সাথে যারা নেই তাদেরকে শত্রু আখ্যায়িত করেছে। বুশ-ব্লেয়ার চক্র এভাবে তাদের এই মানবিক অধিকার হরণের প্রচেষ্টাকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে। এখন বিশ্ব সুস্পষ্টভাবে দুভাগে বিভক্ত: মানবিক অধিকার হরণকারী এবং মানবিক অধিকার রক্ষাকারী।
মানবিক অধিকার এখন ইতিহাসের নির্মম কাঠগড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। আল্লাহর নিবেদিত প্রাণ বান্দাদেরই এগিয়ে আসতে হবে মানুষকে তার মৌলিক অধিকার আদায় করে দেবার জন্য। এ এক লাগাতার ও কঠিন সংগ্রাম। (সমাপ্ত)