গুয়ানতানামো কারাগার, দুই দশকে যা ঘটেছে

2

কাজিরবাজার ডেস্ক :
গুয়ানতানামো বে কারাগার। ‘নাইন-ইলেভেন’ হামলার পর দুই দশক আগে ২০০২ সালের ১১ জানুয়ারি কিউবায় কারাগারটি চালু করে যুক্তরাষ্ট্র। কথিত ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’র নামে তৎকালীন মার্কিন প্রশাসন বিভিন্ন দেশে যে সামরিক অভিযান শুরু করে, সেখানে গ্রেফতার লোকদের এই কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা বলেন, কোনো ধরনের প্রচলিত আইন-বিচারের মুখোমুখি না করেই বিদেশি ‘যুদ্ধবন্দিদের’ এই কুখ্যাত কারাগারে বছরের পর বছর রেখে দেয় মার্কিন সামরিক কর্তৃপক্ষ।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উড়োজাহাজ ছিনিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার ও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আল-কায়েদার সন্ত্রাসীদের হামলার প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠিত এ কারাগারে বন্দি হয়েছেন অন্তত ৭৮০ জন। এই তালিকায় এক বাংলাদেশির নামও দেখা গেছে। তবে তিনি এখনো বন্দি নাকি মুক্তি পেয়েছেন, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। কিছু বন্দির মৃত্যু এবং বিপুল সংখ্যক বন্দিকে অন্যত্র স্থানান্তরের পর এখন এই কারাগারে বন্দি আছেন ৩৯ জন।
বলা হয়, আমেরিকান আইন-কানুন এবং মানবাধিকারের ধারাগুলোকে ফাঁকি দিতে স্বদেশভূমির বাইরে ক্যারিবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্র কিউবার গুয়ানতানামো বে প্রদেশের সামরিক ঘাঁটিতে এই কারাগারটি স্থাপন করা হয়। ১৯০৩ সালের হাভানা চুক্তির আওতায় কিউবা থেকে ইজারা নিয়ে ওই দ্বীপ এলাকায় মার্কিন এই সামরিক ঘাঁটি তৈরি করা হয়েছিল।
কারাগারটি চালুর পর দ্রুত এর কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। বিভিন্ন সময় খাঁচার ভেতর জখম, বেড়ি ও হাতকড়া পরা বন্দিদের ছবি প্রকাশ হতে থাকে। এতে সমালোচনায় বিদ্ধ হতে থাকে মার্কিন প্রশাসন। এই কারাগারকে ‘ঘৃণার প্রতীক’ হিসেবে দেখে বিশ্বের অধিকারবাদী মানুষ।
মার্কিন একাধিক নথির বরাতে কুখ্যাত এ কারাগারটির যাত্রার দুই দশকের ঘটনাক্রম প্রকাশ পেয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। সেটিই বর্ণনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
১৩ নভেম্বর, ২০০১: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে নির্দিষ্ট অনাগরিকদের (বিদেশি) বন্দি ও বিচারের জন্য’ একটি সামরিক আদেশ জারি করেন। এই আদেশে অভিযোগ গঠন ছাড়াই বিদেশি নাগরিকদের আটকে রাখার ক্ষমতা দেওয়া হয় সামরিক কর্তৃপক্ষকে। পাশাপাশি বন্দিদশার বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের পথও রুদ্ধ করে দেওয়া হয়।
২৮ ডিসেম্বর, ২০০১: মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগনকে বিচার দপ্তরের পাঠানো এক নথিতে ব্যাখ্যা করে বলা হয়, গুয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দিরা হেবিয়াস কর্পাস অধিকার (নির্বিচারে আটকে রাখার বিরুদ্ধে স্থানীয় আইন) ভোগ করবে না, যেহেতু তারা মার্কিন ভূমিতে থাকবে না।
১১ জানুয়ারি, ২০০২: গুয়ানতানামো বে কারাগারের ‘এক্স-রে ক্যাম্পে’ প্রথমবারের মতো ২০ জনকে নেওয়া হয় এবং তারের খাঁচায় বন্দি করা হয়।
১৮ জানুয়ারি, ২০০২: গুয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দিদের দেখতে যায় মানবাধিকার সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রসের প্রতিনিধি দল। সেদিন আবার বুশ প্রশাসনের তরফ থেকে এক আদেশ জারি করে বলা হয়, গুয়ানতানামোতে যারা আছেন, তাদের ‘যুদ্ধবন্দি’ বিবেচনার সুযোগ নেই এবং তারা জেনেভা কনভেনশনের (যুদ্ধাঞ্চলের লোকদের প্রতি মানবিক আচরণ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক আইন) সুরক্ষা পাবেন না।
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০০২: গুয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দিদের আটকে রাখার বিরুদ্ধে সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটস নামে একটি সংগঠনের আবেদন নাকচ করে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত।
৫ এপ্রিল, ২০০২: ইয়াসির এসাম হামিদি নামে এক বন্দির জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ান অঙ্গরাজ্যে নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে গুয়ানতানামো থেকে মূলভূমির সামরিক কারাগারে পাঠানো হয়।
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০০২: আবদুল রাজাক নামে এক বন্দিকে আফগানিস্তানে প্রত্যাবাসন করা হয়। প্রথম বন্দি হিসেবে তিনি স্বদেশে প্রত্যাবাসিত হন।
২ ডিসেম্বর, ২০০২: গুয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে কিছু স্পর্শকাতর কৌশলের অনুমোদন দেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড। এসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে স্বাভাবিক জ্ঞানলোপের পরিস্থিতি ফেলা, নিভৃতবাস, মানসিক চাপ তৈরি এবং এজন্য কুকুরের ব্যবহার।
১১ মার্চ, ২০০৩: গুয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দিরা কোনো আইনি অধিকার ভোগ করতে পারবে না বলে আদেশ জারি করে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত।
মে ২০০৩: গুয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দির সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৮০।
৯ মে থেকে ১৪ মে, ২০০৩: ১৭ বন্দিকে গুয়ানতানামো থেকে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও সৌদি আরবে প্রত্যাবাসন করা হয়।
৩ জুলাই, ২০০৩: আল-কায়েদার ছয় সন্দেহভাজন সদস্যকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী প্রথম সামরিক ট্রাইব্যুনালের বিচারযোগ্য আসামি বলে ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ।
১০ নভেম্বর, ২০০৩: নির্বিচারে আটকে রাখার বিরুদ্ধে গুয়ানতানামোর বন্দিরা বেসামরিক আদালতে আবেদন করতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে আপিল শুনানির জন্য রাজি হয় মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট।
৩ ডিসেম্বর, ২০০৩: গুয়ানতানামোর প্রথম বন্দি হিসেবে আইনজীবী দেওয়া হয় অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ডেভিড হিকসকে।
১২ জানুয়ারি, ২০০৪: বন্দিদের জন্য নিয়োজিত পাঁচ সামরিক আইনজীবী বলেন, সামরিক ট্রাইব্যুনালের জন্য প্রণীত কিছু নীতি অসাংবিধানিক বলে মনে করেন তারা।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০০৪: প্রথমবারের মতো বন্দিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বুশ প্রশাসন। ইয়েমেনের আলী হামজা আল-বাহলুল ও সুদানের ইব্রাহিম আল-কোসির বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধাপরাধ সংগঠনের ষড়যন্ত্র’ করার অভিযোগ গঠন করে সামরিক কর্তৃপক্ষ।
৭ জুলাই, ২০০৪: বন্দিরা ‘শত্রু যোদ্ধা’ কি না তা যাচাইয়ে সিএসআরটি নামে একটি সামরিক পরিষদ গঠন করে পেন্টাগন।
১৩ আগস্ট, ২০০৪: রিভিউ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু।
২৭ অক্টোবর, ২০০৪: চার সাবেক ব্রিটিশ বন্দি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়। এই পদক্ষেপের প্রথমে রসুল, ইকবাল, আহমেদ ও হারিদ নামে চার বন্দি তাদের ওপর ‘নির্যাতন ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ’ তুলে ৯০ লাখ ডলার করে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। তখন পেন্টাগনের তরফ থেকে বলা হয়, ‘লড়াইক্ষেত্র’ থেকে আটক হওয়ায় এই ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার ভোগ করবেন না।
২৯ মার্চ, ২০০৫: ৫৫৮ বন্দির তথ্য যাচাই করে সিএসআরটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৩৮ বন্দি ‘শত্রু যোদ্ধা নন’ এবং তাদের ‘মুক্তির যোগ্য’ ঘোষণা করা হয়।
১৯ এপ্রিল, ২০০৫: গুয়ানতানামোর সামরিক শুনানির ট্রান্সক্রিপ্টসহ অন্যান্য নথি প্রকাশের জন্য মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপে যায় প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম এপি।
২০ মে, ২০০৫: এপির আবেদনের পর বন্দিদের নাম, জাতীয়তাসহ অনেক তথ্য সম্বলিত দুই হাজার পৃষ্ঠার নথি প্রকাশ হয়। সেখানে বন্দিদের জবানবন্দিতে প্রাপ্ত তথ্যও ছিল।
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০০৬: জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে গুয়ানতানামো বে কারাগার বন্ধের সুপারিশ করা হয়।
১৬ এপ্রিল, ২০০৬: গুয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দি ৫৫৮ বন্দির নাম প্রকাশ করে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর।
মে ২০০৬: ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, আফ্রিকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বন্দিদের প্রত্যাবাসন চলতে থাকে। দুই বন্দি আত্মহত্যার চেষ্টা করে, যার জেরে সেখানে দাঙ্গা দেখা দেয়।
১০ জুন, ২০০৬: বন্দি অবস্থায় সৌদির নাগরিক মানি সামান ও ইয়াসের তালাল এবং ইয়েমেনের নাগরিক আলী আবদুল্লাহ আত্মহত্যা করেন।
২৯ জুন, ২০০৬: বুশ প্রশাসনের সামরিক কর্তৃপক্ষ যুদ্ধ আইন ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে মর্মে রুল জারি করেন সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি বন্দিরা যেন বেসামরিক আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন, সে বিষয়েও জোর দেন আদালত।
১২ জুলাই, ২০০৬: প্রেসিডেন্ট বুশ তার ২০০২ সালের নির্দেশনা তুলে নেন এবং গুয়ানতানামো কারাগারের বন্দিদের জন্যও জেনেভা কনভেনশন প্রযোজ্য বলে মেনে নেন।
৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৬: ‘উচ্চ পর্যায়ের’ ১৪ বন্দিকে গুয়ানতানামো কারাগার থেকে ‘গোপন জায়গায়’ নিয়ে যাওয়া হয়।
১৭ অক্টোবর, ২০০৬: বুশ সামরিক কমিশন আইনে স্বাক্ষর করেন। এই আইনের মাধ্যমে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে গোপন বন্দিশালা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
২০ মে, ২০০৮: গুয়ানতানামোর সাবেক বন্দি হিসেবে প্রথম জার্মানির মুরাত কুর্নাজ মার্কিন কংগ্রেসে সাক্ষ্য দেন। তিনি ভার্চুয়ালি ওই সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
১৬ নভেম্বর, ২০০৮: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী বারাক ওবামা গুয়ানতানামো কারাগার বন্ধের ইচ্ছের কথা জানান।
১৪ জানুয়ারি, ২০০৯: বুশ প্রশাসনের প্রথম কোনো কর্মকর্তা বন্দি নির্যাতনের প্রকাশ্য স্বীকারোক্তি দেন।
২২ জানুয়ারি, ২০০৯: প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তিনটি আদেশ জারি করেন। এর মধ্যে ছিল গুয়ানতানামো বে বন্ধ, সিআইএর বিতর্কিত জিজ্ঞাসাবাদ কৌশল নিষিদ্ধ এবং বন্দিনীতি পুনর্বিবেচনার নির্দেশনা।
১৫ মে, ২০০৯: লাখদার বৌমেদিন নামে এক বন্দিকে ফ্রান্সে স্থানান্তর করা হয়। ২০০২ সাল থেকে তিনি গুয়ানতানামো বে কারাগারে ছিলেন। তার মামলার সূত্রেই গুয়ানতানামোর বন্দিদের পক্ষে হেবিয়াস কর্পাস অধিকারের রুল জারি হয়।
১১ জুন, ২০০৯: গুয়ানতানামোর সবচেয়ে তরুণ বন্দি মোহাম্মদ আল ঘারানিকে মুক্তি দেওয়া হয়। ২০০১ সালে তাকে যখন পাকিস্তানে গ্রেফতার করা হয়, তখন ঘারানির বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর।
নভেম্বর ২০০৯: প্রেসিডেন্ট ওবামা জানান, ২০১০ সালের মধ্যে গুয়ানতানামো বন্ধের যে পরিকল্পনা ছিল তা পিছিয়ে যাচ্ছে।
২২ জানুয়ারি, ২০১০: যুক্তরাষ্ট্রের বিচার দপ্তর এক আদেশে জানায়, গুয়ানতানামো বে কারাগারে থাকা ১৯৬ বন্দির মধ্যে ৫০ জনকে বিনা বিচারে আটকে রাখা উচিত।
৭ মার্চ, ২০১১: গুয়ানতানামো কারাগারে সামরিক বিচার পুনরায় শুরু করতে নির্বাহী আদেশ জারি করেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। নিজের নির্বাচনী প্রচারণায় দেওয়া অঙ্গীকার ভঙ্গ করে এ আদেশ জারি করেন তিনি।
২৪ এপ্রিল, ২০১১: যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্তৃপক্ষের গোপনীয় নথি প্রকাশ করে উইকিলিকস। যেখানে দেখা যায়, দেড় শতাধিক নির্দোষ লোককে আটকে রাখা হয়েছে। অবশ্য তখন ৬০৪ বন্দিকে এই কারাগার থেকে স্থানান্তর করা হয় এবং ১৭২ বন্দিকে সেখানেই রেখে দেওয়া হয়।
৫ মে, ২০১২: নাইন-ইলেভেন হামলার মাস্টারমাইন্ড বলে অভিযুক্ত খালিদ শেখ মোহাম্মদ ও তার চার সহযোগীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে গুয়ানতানামোর সামরিক ট্রাইব্যুনাল।
১২ মার্চ, ২০১৩: কারাগারের ভেতরে অনশন শুরু করেন বন্দিরা। অনশনকারী অন্তত সাতজন ছিলেন বলে জানা যায়।
৫ জুলাই, ২০১৪: রমজান মাসে প্রার্থনায় যেন বাধা না দেয়, সেজন্য কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে মার্কিন আদালতে আবেদন করেন দুই বন্দির আইনজীবী।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬: প্রেসিডেন্ট ওবামা গুয়ানতানামো বে কারাগার বন্ধে এবং বন্দিদের যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরে ‘শেষবারের মতো’ একটা পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন। অবশ্য এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয় আইনসভায়।
১৬ এপ্রিল, ২০১৬: নয় ইয়েমেনি বন্দিকে গুয়ানতানামো কারাগার থেকে সৌদিতে স্থানান্তর করা হয়, এদের মধ্যে একজন অনশনকারীও ছিলেন।
১৬ আগস্ট, ২০১৬: ১৫ বন্দিকে আরব আমিরাতে স্থানান্তর করা হয়। গুয়ানতানামোতে অবশিষ্ট থাকেন ৬১ বন্দি।
২০ জানুয়ারি, ২০১৭: প্রেসিডেন্ট পদে আসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি জানিয়েছিলেন, ‘মন্দ লোকদের ধরে’ গুয়ানতানামো ভরে ফেলবেন।
৩০ জানুয়ারি, ২০১৮: গুয়ানতানামো কারাগার চালু রাখতে আদেশ জারি করেন ট্রাম্প। এক ভাষণে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে বন্দি সন্ত্রাসীদের এই কারাগারে পাঠানো হবে বলে তিনি আশা করেন।
২৭ এপ্রিল, ২০১৯: গুয়ানতানামো বে কারাগার পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত টাস্কফোর্সের নৌকমান্ডার রিয়ার এডমিরাল জন রিংকে ‘নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতায় আস্থা হারানো’র কারণে বরখাস্ত করা হয়।
২০ জানুয়ারি, ২০২০: গুয়ানতানামো বে কারাগার বন্ধের সংকেত দেওয়া জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব নেন।
১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১: নাইন-ইলেভেন হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড বলে অভিযুক্ত খালিদ শেখ মোহাম্মদ ও তার সহযোগী মুস্তাফা আহমেদ, রামজি বিন আল-শিভ, ওয়ালিদ বিন আত্তাস ও আবদ আল-আজিজকে মৃত্যুদণ্ড দেয় গুয়ানতানামোর সামরিক ট্রাইব্যুনাল।
২৯ অক্টোবর, ২০২১: গুয়ানতানামোর সাবেক বন্দি মজিদ খান সিআইএর ‘অন্ধকার স্থাপনায়’ শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের বর্ণনা দেন।
২৭ ডিসেম্বর, ২০২১: সামরিকখাতে ৭৭০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের বিলে সই করেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এই বিলের কিছু ধারার কারণে গুয়ানতানামো কারাগার থেকে বন্দিদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হবে বলে সমালোচনা হয়। অবশ্য বাইডেন তখনো কারাগারটি বন্ধের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
১১ জানুয়ারি, ২০২২: দুই দশক আগে চালু হওয়া এই কুখ্যাত কারাগারে এখন বন্দির সংখ্যা ৩৯।