তামাবিল স্থলবন্দরে আমদানী-রপ্তানী বন্ধ ॥ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার! ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় আমদানীকারক ব্যবসায়ীরা

6

জৈন্তাপুর থেকে সংবাদদাতা :
গত ৩ দিন থেকে তামাবিল স্থলবন্দরে আমদানী-রপ্তানী বন্ধ থাকায় সীমান্তের ওপারে ভারতের ডাউকিতে শতশত পাথর বোঝাই ট্রাক আটকা পড়ে আছে। এতে করে প্রতিদিন অন্তত সরকারের ৮০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। আমদানী-রপ্তানী কাজ বন্ধ থাকায় নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় আমদানী কারক ব্যবসায়ীরা। আমদানী-রপ্তানী বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়ছেন তামাবিল স্থলবন্দর নির্ভরশীল কয়েক হাজার পাথর ও ট্রাক চালক শ্রমিকরা।
সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানী-রপ্তানীকারক ব্যবসায়ীগণ ভারত থেকে চুনা পাথর সহ বিভিন্ন পণ্য আমদানী-রপ্তানী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে আসছেন। প্রতিদিন অন্তত ৮শত থেকে ১হাজার ভারতীয় পাথর বোঝাই ট্রাক তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করে। ফলে সরকার তামাবিল স্থলবন্দর থেকে প্রতিদিন অন্তত ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করে থাকে। তামাবিল স্থলবন্দরে আমদানী-রপ্তানী বন্ধ থাকায় সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হারাতে হচ্ছে। এই জটিলতা নিরসনে তামাবিল চুনা পাথর, পাথর ও কয়লা আমদানীকারক গ্রুপের নেতৃবৃন্দ সম্প্রতি ঢাকায় নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সহ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন।
জানা গেছে, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরের প্রবেশ মুখে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ অটো-এসএমএস মেশিন স্কেল স্থাপন সংক্রান্ত জটিলতাকে কেন্দ্র করে তামাবিল স্থলবন্দরে আমদানী-রপ্তানী বন্ধ হয়ে পড়েছে। তামাবিল স্থলবন্দরের আমদানীকারক ব্যবসার সাথে জড়িত স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবী ভারত থেকে আমদানীকৃত পণ্যের মধ্যে বোল্ডার, পাথর, চুনা পাথর ও কয়লা আমদানী করা হয়। ভারতীয় আমদানীকৃত পণ্য ডাউকিতে ফিতা দিয়ে পরিমাপ করার ফলে মাটি, কাদামাটি, বালু আর্বজনা মিশ্রিত থাকে। এসব মালামাল তামাবিল স্থলবন্দরে অটোমেশিন পদ্ধতিতে স্কেল দিয়ে পরিমাপ করা হলে বাংলাদেশের আমদানীকারকগণ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। ভারতীয় এসব পন্যের ওজনের তারতম্যজনিত কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হতে হবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। স্কেল দিয়ে পরিমাপ করার ফলে বিভিন্ন সময়ে তামাবিল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত জরিমানা আদায় করে থাকে। গত ১৪ অক্টোবর ২০২১ খ্রিঃ তারিখে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রীকে তামাবিল স্থলবন্দরে অটোমেশিন পদ্ধতি স্কেল পরিমাপ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি দিয়েছিলেন।
এই বিষয়ে তামাবিল চুনা পাথর,পাথর ও কয়লা আমদানীকরক গ্রুপের সভাপতি লিয়াকত আলী জানান, ভারতের ডাউকিতে ফিতা দিয়ে পরিমাপ করে বাংলাদেশে পণ্য আমদানী করা হয়। তামাবিল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ অটোমেশিন স্কেল পদ্ধতিতে পরিমাপ করা হলে স্থানীয় ব্যবসায়ীগণ ব্যাপক ক্ষতির শিকার হবে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ডাউকিতে স্থলবন্দর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে অটোমেশিন স্থাপন করার পর বাংলাদেশ অংশে স্কেল স্থাপন করা হলে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য আমদানী-রপ্তানী আরো সহজ হবে। তিনি ভারতের ডাউকিতে অটোমেশিন পদ্ধতি স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত তামাবিল স্থলবন্দরে অটোমেশিন পদ্ধতি স্কেল পরিমাপ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার দাবী জানান।
তামাবিল চুনা পাথর, পাথর ও কয়লা আমদানীকারক গ্রুপের সহ-সভাপতি মো: জালাল উদ্দিন জানান, ভারতীয় অংশে পোর্ট নির্মাণ কাজ দ্রুত চলছে ডাউকিতে অটোমেশিন স্কেল স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত আমরা তামাবিল স্থলবন্দরে অটোমেশিন স্কেল পদ্ধতি প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার দাবী জানাই। বর্তমান পদ্ধতিতে প্রতিদিন ৮শত থেকে ৯শত ট্রাক বাংলাদেশ প্রবেশ করে থাকে। এখানে অটোমেশিন প্রক্রিয়ার মাধ্যম চালু করা হলে ভারতীয় গাড়ি কমে যাবে এতে ২০০/২৫০ টা গাড়ি প্রবেশ করার সম্ভবনা রয়েছে। এতে আমাদের ছোট বড় সব ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ভারতের ডাউকি স্থলবন্দরে অটোমেশিন পদ্ধতি চালু করা হলে উভয় দেশের আমদানীকারক গণের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করা সহজ হবে।
তিনি আরোও বলেন, সিলেটের আরো কয়েকটি স্থলবন্দর রয়েছে কোথাও অটোমেশিন স্কেল স্থাপন করা হয় নি। তামাবিল স্থলবন্দরে অটোমেশিন স্থাপন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে প্রশাসনের নিকট দাবী জানানো হয়েছে।
এই ব্যাপারে তামাবিল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক মো: মাহফুজুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, সরকারী ভাবে স্থলবন্ধর চালু তাকলেও গত ৩দিন থেকে তামাবিল স্থলবন্দরে প্রবেশ করছে না ভারতীয় পাথর বোঝাই ট্রাক। সরকারী সিদ্ধান্ত মতে তামাবিল স্থলবন্দরে অটোমেশিন পদ্ধতি স্থাপন করা হয়েছে। এখানে অটোমেশিন জটিলতা সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে স্থানীয় ব্যবসায়ীগণ আমদানী-রপ্তানী কাজ বন্ধ করে দিয়েছ। আমদানী-রপ্তানী বন্ধ থাকায় প্রতিদিন সরকারের প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে।