৭০৭ ইউপিতে আজ ভোট, সহিংসতার আশঙ্কা

3

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ বুধবার ৫ম ধাপে সারাদেশের ৭০৭টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ শেষে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ফল ঘোষণা করা হবে। এদিকে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবারও দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তাই আজকের নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা করেছে মাঠ প্রশাসন। তবে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাবসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন থেকে জানা যায়, আজ সারাদেশের ৪৮টি জেলার ৯৫টি উপজেলায় ৭০৭টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে বিভিন্ন জেলার ১৯টি উপজেলায় সহিংসতার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে মাঠ প্রশাসন। এজন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে মোতায়েন করা হচ্ছে অতিরিক্ত বিজিবি ও র‌্যাব। মাঠ প্রশাসন থেকে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েনের চাহিদাপত্র দিলে ইসি কদিন আগেই তাতে অনুমোদন দিয়েছে। এজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখা জানায়, আজকের ইউপি নির্বাচনে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রতি উপজেলায় র‌্যাবের ২টি মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং টিম মোতায়েন রয়েছে। বিজিবির প্রতিটি মোবাইল টিমে রয়েছে ২ প্লাটুন সদস্য। একই হারে পুলিশ কোস্ট গার্ডসহ অন্য বাহিনীওমোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া র‌্যাবের অতিরিক্ত টিমও মোতায়েন রয়েছে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে পাহারায় পুলিশ ও আনসারের সমন্বয়ে নিয়োজিত রয়েছে ২২ জন ফোর্স।
আজ ৫ম ধাপের ভোটের দিন সাধারণ ছুটি সংক্রান্ত বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। ইসির এ সংক্রান্ত একটি চিঠিতে জানানো হয়, আজ ভোটগ্রহণের দিন সাধারণ ছুটি নেই। তবে নির্বাচনী এলাকাধীন যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার বা নির্বাচনী কার্যক্রমের জন্য নির্ধারিত রয়েছে, সেগুলো বন্ধ থাকছে। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকাধীন স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা করার জন্য নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা দিয়েছে।
আজ পঞ্চম ধাপে ৭০৭টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় ও মনিটরিং সেল গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধির সমন্বয়ে এ সেল গঠন করা হয়েছে। ইসির উপসচিব মোঃ আতিয়ার রহমান জানান, মনিটরিং সেলের প্রধান করা হয়েছে আইডিয়া প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কাশেম মোঃ ফজলুল কাদেরকে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা, পুলিশের এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা, বিজিবি ও র‌্যাবের অতিরিক্ত পরিচালক, মেজর, আনসার ও ভিডিপির মেজর অথবা উপপরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অথবা সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তারা মনিটরিং সেলের কমিটিতে রয়েছেন।
আজ ভোট গ্রহণকালে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মনিটরিং সেলের কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে পরিচালিত হবে। এ সেলের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে-১. আইনশৃংখলা পরিস্থিতি সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনকে অবগত করা। ২. সেলে অন্তর্ভুক্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচন উপলক্ষে মোতায়েন করা আইনশৃংখলা সদস্যদের অবস্থা ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানানো। ৩. সংস্থার নিজস্ব যোগাযোগ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কমিশনের নির্দেশনা তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করা। ৪. ভোটকেন্দ্র বা নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করা। ৫. ইভিএমসহ বিভিন্ন নির্বাচনী মালামাল পরিবহন, বিতরণ এবং ভোটগ্রহণ কাজে নিরাপত্তা বিধানের জন্য মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসারদের সহায়তা দেয়া।
৫ম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী এলাকায় ৫৪ ঘণ্টার জন্য মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই নিষেধাজ্ঞা শুক্রবার মধ্যরাত (১২টা) থেকে শুরু হয়েছে এবং সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব মোঃ আতিয়ার রহমান জানান, শুধু মোটরসাইকেল নয়, অন্য সব যন্ত্রচালিত যানবাহনও শনিবার মধ্যরাত (১২টা) থেকে রবিবার মধ্যরাত (১২টা) পর্যন্ত চলাচল বন্ধ থাকছে। তবে সাংবাদিক, নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ জরুরী সেবার কাজে নিয়োজিতদের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। এবারের ইউপি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এ পর্যন্ত ৫ ধাপের ইউপি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ১ হাজার ৫৭৬ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ৩৫৪ জন, সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য ৮৫৮ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য ৩৬৪ জন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের মধ্যে সিংহভাগই সরকারী দল সমর্থক।
২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন ২১৭ জন। তার আগের নির্বাচনগুলোতে এ সংখ্যা আরও অনেক কম। আর এবার ৫ ধাপেই নির্বাচিত হয়েছেন ৩৫৪ জন চেয়ারম্যান। আজ পঞ্চম ধাপের ৭০৭টি ইউপির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ। তবে এর আগেই ৫২ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য ৩২ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডের ১০৯ জন সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় চতুর্থ ধাপে ৮৪০টি ইউপি নির্বাচনে ভোটের আগেই চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪৮ জন নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য ১১২ জন এবং সাধারণ সদস্য ১৩৫ জন নির্বাচিত হয়েছেন। ২৮ নবেম্বর অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপের এক হাজার ৭ ইউপির মধ্যে ১০০টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া সাধারণ সদস্য পদে ৩৩৭ জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য ১৩২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ১১ নবেম্বর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের ৮৩৩টি ইউপির মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৮১ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য ৭৬ জন এবং সাধারণ সদস্য ২০৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
এর আগে ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর দুই দফায় প্রথম ধাপের নির্বাচন হয়। ২০ জুন অনুষ্ঠিত ২০৪টি ইউপির মধ্যে ২৮ জন চেয়ারম্যান নারী সদস্য পাঁচজন এবং সাধারণ সদস্য পদে ২৯ জন নির্বাচিত হন। আর ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ১৬১ ইউপির মধ্যে ৪৫ জন চেয়ারম্যান, নারী সদস্য ৭ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৪৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ৬ষ্ঠ ধাপে ২১৯টি ইউপিতে নির্বাচন ৩১ জানুয়ারি হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় পার হলে জানা যাবে এ নির্বাচনে কতজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ৬ষ্ঠ ধাপের নির্বাচন। আর সপ্তম ধাপের ইউপি নির্বাচন হবে ৭ ফেব্রুয়ারি।