অস্ত্র, বিভিন্ন ধরণের উগ্রবাদী বই ও লিফলেট উদ্ধার ॥ ২০২১ সালে ২৮২ জন জঙ্গি সদস্য র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার

10

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
২০২১ সালে ২৭৩ জন জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিট এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এর সদস্যরা। এ সময় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে দেশী-বিদেশী অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিভিন্ন ধরণের উগ্রবাদী বই ও লিফলেট উদ্ধার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব। এ ছাড়া ৯ জঙ্গি সদস্য গ্রেফতারের ভয়ে র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে।
র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, ম্যানডেটের আলোকে র‌্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান এ পর্যন্ত পরিচালনা করে আসছে। পূর্ববর্তী ধারাকে সমুন্নত রেখে র‌্যাব বহুমূখী কর্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমন কার্যক্রম অব্যাহত রেখে চলেছে। শুধুমাত্র তাই নয় জঙ্গিবাদ বিরোধী জনমত গড়তে ও জনসম্পৃক্ততা অর্জনে র‌্যাব প্রচার প্রচারণা করে যাচ্ছে।
অন্যদিকে র‌্যাবের অভিযান প্রক্রিয়ায় গ্রেফতার এর পাশাপাশি জঙ্গিদের অর্থের উৎস এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরক প্রাপ্তি বন্ধ করতেও র‌্যাবের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া জঙ্গি আত্মসমর্পণে বিশেষ উদ্যোগে “র‌্যাব ডি-রেডিক্যালাইজেশন ও রিহ্যাবিলিটেশন” কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে র‌্যাব।
জানা গেছে, জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম উরফে বাংলাভাই, আব্দুর রহমানের ভাই আতাউর রহমান সানি, জামাতা আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হোসেন মামুন ও খালেদ সাইফুল্লাহ উরফে ফারুকের মতো জঙ্গিরা র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হয়। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ এসব জঙ্গিদের ফাঁসি কার্যকর হয়। এর পর থেকে তেমন কোন জঙ্গি হামলা সংঘঠিত করতে পারেনি জঙ্গিরা। তবে ২০১৬ সালের হলি আর্টিজান হামলার মাধ্যমে পুণরায় জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব ফুঁটে ওঠে। হলি আর্টিজান ঘটনা পরবর্তী র‌্যাব জঙ্গিদের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেফতারে সক্রিয় ছিলো। জঙ্গি সংগঠনের আমিরসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে সাফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয় র‌্যাব। এছাড়া র‌্যাবের অভিযানে কেন্দ্রীয় দাওয়াতী শাখার প্রধান সূরা ও শরিয়া বোর্ড সদস্য মহিলা শাখার নেতৃবৃন্দ এবং বেশ কয়েক জন অতি গুরুত্বপূর্ণ আইটি বিশেষজ্ঞকে গ্রেফতারের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনকে দুর্বল করে দেওয়া হয়। এভাবে র‌্যাবের সময়োচিত পদক্ষেপ ও তীক্ষ্র গোয়েন্দা নজরদারি, অঙ্কুরেই নসাৎ হয়ে যায় জঙ্গি হামলা এবং হামলার সকল পরিকল্পনা। হলি আর্টিজান পরবর্তীতে র‌্যাবের তৎপরতায় ১৫৫৮ জন জঙ্গি সদস্য গ্রেফতার হয়। এর মধ্যে ৮৩১ জন জেএমবি সদস্য। জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে রোল মডেল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টধলারেন্স নীতির আলোকে র‌্যাব তার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও র‌্যাবের কর্মতৎপরতায় এই সাফল্য অর্জিত করতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাব।
র‌্যাব সূত্র আরো জানায়, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে র‌্যাব জঙ্গি বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়েন্ত্রণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিষ্ঠা হতে এ পর্যন্ত ২,৬৮৫ জন বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদেরকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এর মধ্যে ১৩৯৬ জন জেএমবি সদস্য।
র‌্যাবের উল্লেখযোগ্য অভিযানগুলো হচ্ছে, ২০২১ সালের ১৫ জুলাই র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাব-৪ এর অভিযানে রাজধানী ঢাকার শাহ আলী থানার বেড়িবাধ সংলগ্ন এলাকা হতে আনসার আল ইসলামের আধ্যাত্মিক নেতা কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার গুনবতি গ্রামের মাহমুদ হাসান গুনবি উরফে হাসান উরফে গুনবিকে (৩৬) গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় উগ্রবাদী পুস্তক ও লিফলেট। ৪ সেপ্টেম্বর সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৪ এর অভিযানে ডাকাতি প্রস্তুতিকালে জেএমবি’র সক্রিয় সদস্য ময়মনসিংহের জুলহাস উদ্দিন উরফে কাদেরী উরফে মেহেদী (৩৪), ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার মোহাম্মদ রোবায়েদ আলম উরফে ধ্রুব উরফে রুব (৩৩), ময়মনসিংহের মোঃ আলাল উরফে ইসহাক (৪৮) এবং রংপুরের মোঃ আবু আইয়ুব উরফে খালিদদেরকে (৩৬) ময়মনসিংহের খাগডহর এলাকা হতে গ্রেফতার করে। এ সময় ১টি বিদেশী পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ৩ রাউন্ড গোলাবারুদ, ৮টি বোমা সদৃশ্যবস্তু, ৪টি ব্যাগ, দরজা ও লক বেধকিং বিভিন্ন সরঞ্জামাদি এবং একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা। ৯ সেপ্টেম্বর র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-২ এর অভিযানে রাজধানীর বসিলা হতে জেএমবি’র একটি গ্রুপের কর্ণধার ও ময়মনসিংহের মোঃ এমদাদুল হক উরফে উজ্জল মাষ্টারকে (৫৫) গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে জব্দ করা হয় অস্ত্র,গুলি, নগদ অর্থ, রাসায়নিক দ্রব্য ও অভিনব পদ্ধতিতে তৈরীকৃত বুলেট গ্রুফ জ্যাকেট। ৪ ডিসেম্বর র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৩ এর অভিযানে নীলফামারী সদরের মাঝাপাড়া হতে জেএমবি’র নীলফামারীর রংপুর অঞ্চলের জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান নীলফামারী আহিদুল ইসলাম উরফে আহিদ উরফে পলাশ (২৬) এবং তার অন্যতম সহযোগী নীলফামারীর মোঃ ওয়াহেদ আলী উরফে আব্দুর রহমান (৩০), নীলফামারীর আব্দুল্লাহ আল মামুন উরফে ডাঃ সুজা (২৬), মোঃ জাহিদুল ইসলাম উরফে জাহিদ উরফে জোবায়ের (২৭), এবং মোঃ নূর আমিন উরফে সবুজকে (২৮) গ্রেফতার করা হয়। এ সময় অভিযানে জব্দ করা হয় বোমা তৈরীর সরঞ্জাম, বোমা তৈরীতে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্য, ১টি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি।
র‌্যাব জানায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সক্রিয় অংশগ্রহণে আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে র‌্যাব। মূলত তখন থেকেই শুরু হয় বিপথগামী জঙ্গি সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে র‌্যাবের তৎপরতা। RAB De-radicalisation & Rdhabilitation Council (RDRC) সংগঠনের এর মাধ্যমে জঙ্গিদের সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনতে চায়। র‌্যাবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বগুড়া, রংপুর, কুষ্টিয়াতে আত্মসমর্পন করে ৭ জন বিপথগামী তরুণ। এরই ধারাবাহিকায় ১৪ জানুয়ারি ২০২১ “নব দিগন্তের পথে” অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট ৬ জন জেএমবি এবং ৩ জন আনসার আল ইসলাম মোট ৯ জন জঙ্গি সদস্য “বিনাশর্তে” আত্মসমর্পণ করে। পুনর্বাসনের জন্য তাদের প্রত্যেকেই র‌্যাবের নিজস্ব তহবিল হতে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক অনুদানের পাশাপাশি ট্রাক্টর, গরুর খামার, বাই-সাইকেল ইত্যাদি সহায়তা প্রদান করে র‌্যাব।