আয়-ব্যয়ের বৈষম্য দূর করতে হবে

2

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির দুইদিনব্যাপী ২১তম দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন শেষ হয়েছে শনিবার। এবারের সম্মেলনে মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘মহামারী কোভিড-১৯-এর প্রভাব অভিঘাত ও মানব উন্নয়ন’। সারাদেশ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার অর্থনীতিবিদ যোগ দিয়েছিলেন সম্মেলনে। বিভিন্ন কর্মঅধিবেশনে অংশগ্রহণ করে তারা দেশ, সমাজ ও জাতির উন্নয়নে সারগর্ভ বক্তব্য ও নিজস্ব মতামত তুলে ধরেছেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পুনরায় নির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। ‘কোভিড-১৯ থেকে শোভন সমাজ’ শিরোনামের মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, দেশে শোভন সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করতে হলে সর্বাগ্রে শোভন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অবকাঠামোর মধ্যে সুসংবদ্ধকরণের মাধ্যমে হতে হবে শোভন সমাজমুখী। কোভিড-১৯-এর অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে মানুষকে উদ্ধারে সরকারী বাজেট ও খাতওয়ারি বরাদ্দের কথা উল্লেখ করে ড. বারকাত বলেন, জাতীয় প্রবৃদ্ধির প্রণোদনা কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষ প্রাধান্য পেয়েছেন কম। প্রণোদনার বেশিরভাগ অর্থই ছোট খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা ব্যক্তির হাতে পৌঁছায়নি। বরং লাভবান হয়েছেন বড় বড় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী। ফলে বৈষম্য বেড়েছে সমাজে। নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষ। দেশে বেড়েছে আয় ও সম্পদ বৈষম্য।
বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হলে ধনী-গরিবের আয় ও সম্পদ বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে। এতে অর্থনীতিতে প্রবাহ বাড়বে। প্রয়োজনে নতুন করে টাকা ছাপাতে হবে। চাহিদা অনুপাতে টাকা ছাপিয়ে যদি বিপুল সংখ্যক মানুষকে বেকারত্ব থেকে মুক্তি দেয়া যায়, ব্যবস্থা করা যায় কর্মসংস্থানের, তাহলে সেটি হবে জনহিতকর ও উৎপাদনশীল। তৃতীয়ত, করোনা থেকে উত্তরণে একটি বৈশ্বিক তহবিল গঠন করতে হবে। চতুর্থত, কালো টাকা ও অর্থ পাচার বন্ধ করে বাজারে বন্ড ছেড়ে অর্থ আহরণ করতে হবে, যা হবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সহায়ক। মোট কথা, করোনার প্রভাবে দেশে আয়, ধনসম্পদ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বৈষম্য প্রকট হয়ে যে বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে সে অবস্থা থেকে ঘুরে না দাঁড়াতে পারলে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয় অনিবার্য। এর পাশাপাশি সুস্থ ও সুষ্ঠু ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সব শ্রেণী ও পেশার মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে জাতীয় সংসদে প্রায় ৭০ শতাংশই ব্যবসায়ী। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ দরকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি শোষণমুক্ত সমাজ। সেই ধারণা থেকে দূরে সরে গেছে দেশ। স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ’৭২-এর সংবিধানে জাতির প্রতি যেসব অঙ্গীকার করা হয়েছিল সেসব বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা আছে অবশ্যই। একটি আয় ও সম্পদ বৈষম্যহীন শোভন সমাজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই তার বাস্তবায়ন সম্ভব।