রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ন্যাপের সংলাপ ॥ ইসি পুনর্গঠন আইনসহ সাত প্রস্তাব

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
চলমান সংলাপের তৃতীয় দিনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের কাছে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে আইন প্রণয়ণসহ সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে। সরকার থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে, আইন প্রণয়ন করতে হবে। তবে দলটির পক্ষ থেকে সার্চ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কোন নাম প্রস্তাব করা হয়নি।
রবিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ন্যাপের কার্যকরী সভাপতি আইভি আহমেদ। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের জানান, মতবিনিময়কালে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠন একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনই সংলাপের আলোচনার মূল লক্ষ্য। তিনি আশা প্রকাশ করেন, পর্যায়ক্রমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি দক্ষ, শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব হবে। রাষ্ট্রপ্রধান দেশের ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
বৈঠক শেষে ন্যাপের কার্যকরী সভাপতি আইভি আহমেদ আরও বলেন, ভোটাধিকারের জন্য আমরা সবাই যেন ভোট কেন্দ্রে যেতে পারি। সেখানে যেন কোনও মন্ত্রী-এমপি প্রভাব খাটাতে না পারেন। এই ধরনের প্রস্তাবগুলো আমরা দিয়েছি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইভি আহমেদ বলেন, সার্চ কমিটি গঠনে আমাদের কাছে কোন নাম চাওয়া হয়নি। তাই আমরাও কোন নাম প্রস্তাব করিনি। এই নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোন কথা হয়নি।
আইন ছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠন হলে ন্যাপ সেটা মেনে নেবে কিনা জানতে চাইলে আইভি আহমেদ বলেন, এটা যখন কমিশন গঠন হবে, তখনকার বিষয়। তখন ইসি কি ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে, জনগণ ভোট দিতে যেতে পারছে কিনা, ভোট কেন্দ্রের পরিবেশ ঠিক রাখতে পারছে কিনা- সেটার ওপর নির্ভর করছে। আপনারা কি তাহলে সার্চ কমিটির বিপক্ষে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বলেছি, আইন করতে হবে। সার্চ কমিটির পক্ষে নাকি, বিপক্ষে সেই বিষয়টি সংলাপে আসেনি।
আপনাদের প্রস্তাবের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি কি বলেছেন? জানতে চাইলে আইভি আহমেদ বলেন, সংলাপকালে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘আপনারা আমার ক্ষমতা সম্পর্কে জানেন। ফলে, আমি আমার ক্ষমতার মধ্যে থেকে জনগণের যে দাবি, আপনাদের যে দাবি তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’ এখন উনি কতটুকু করবেন, সেটা আমরা ভবিষ্যতে দেখব, বুঝব। এর আগে তো কিছু বলব না।
লিখিত বক্তব্যে আইভি আহমেদ বলেন, আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করলে এ বিষয়ে কারও কোন কথা বলার সুযোগ থাকবে না। তুলনামূলক বিচারে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া যেত। নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নসহ ৭ দফা প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে ন্যাপের পক্ষ থেকে। তাদের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও কার্যকরভাবে গড়ে তুলতে আমরা সংবিধান অনুযায়ী আইন করার জোর দাবি, স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা এবং নির্বাচনকালীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ।
এই সময় দলটির ভারপ্রাপ্ত সাধরণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের বিষয় ছিল নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে। সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে সংলাপ ছিল না। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে যে বিতর্ক তা নিরসন করতে আইন প্রণয়ন করতে হবে। আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়ে সময় পাচ্ছি না, এটা এক ধরনের কথা। আর আইনের উদ্যোগ না দিয়ে সময় পাচ্ছি না, এটা আরেক ধরনের কথা। আমরা মনে করি, আইন প্রণয়নে এখনই উদ্যোগ নেয়া উচিত।
এর আগে বিকেল চারটা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান, কাজী সিদ্দিকুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আহমেদ খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পার্থ সারথী চক্রবর্তী এবং সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনীল চক্রবর্তী।
এর আগে গত ২০ ডিসেম্বর সংলাপে অংশ নিয়েছিল সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং ২২ ডিসেম্বর অংশ নিয়েছিল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)।
এদিকে খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সংলাপে অংশ নেয়ার কথা থাকলেও তারা অংশ নিচ্ছে না। প্রসঙ্গে দলটির সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, তারা এর আগে দুই বার সংলাপে অংশ নিয়েছিলেন। সেই সংলাপে দলের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাবগুলো দেয়া হয়েছিল, সেগুলো এখনও প্রাসঙ্গিক। আগের এই প্রস্তাবগুলো এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে আমরা সংলাপে অংশ নিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির মূল্যবান সময় নষ্ট করতে চাই না।
ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে আজ সোমবার তরিকত ফেডারেশন ও খেলাফত মজলিশ, আগামীকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এবং পরদিন ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনএফ) ও ইসলামী ঐক্যজোট, ২ জানুয়ারি গণফোরাম ও বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, ৩ জানুয়ারি গণতন্ত্রী পার্টি এবং বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে মতবিনিময় করবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি।
রাষ্ট্রপতিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। গত কয়েকটি মেয়াদে রাষ্ট্রপতি ‘সার্চ কমিটি’র সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন গঠন করবেন, যাদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।