যুক্তরাষ্ট্র জানতে চেয়েছে তাদের দেয়া সামরিক অনুদানের অর্থ কোন বাহিনী পায় এবং কিভাবে ব্যয় হয়

10

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বাংলাদেশকে প্রতিবছর সামরিক অনুদান দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এই অর্থ কোন বাহিনী পায় এবং কীভাবে ব্যয় হয় সে সম্পর্কে তাদেরকে কোন তথ্য দেয়া হয় না। তাদের দেয়া অনুদানের অর্থ কোন বাহিনী পাচ্ছে এবং তারা কীভাবে ব্যয় করছে তা জানতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করতে চায় মার্কিন সরকার। এজন্য বাংলাদেশ সরকারকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে দেশটি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, সার্বিক নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা রয়েছে বাংলাদেশের। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগসহ দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার অধীনে সামগ্রিক সহযোগিতা রয়েছে এবং এটি তার একটি অংশ। আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সামরিকসহ অন্যান্য সহযোগিতা ছিল, আছে এবং থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রে ‘লিহে’ নামে একটি পুরনো আইন আছে। এর মাধ্যমে অন্য একটি দেশের কোন নিরাপত্তা সংস্থা বা বাহিনী যদি নির্যাতন, আইনবহির্ভূত হত্যা, গুম ও ধর্ষণজনিত কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে ওই সংস্থাকে কোন অনুদান দিতে পারে না মার্কিন সরকার।
সম্প্রতি ওই আইনে একটি সংশোধনী আনা হয়েছে এবং অনুদানপ্রাপ্ত দেশগুলোর কোন্ সংস্থা অনুদানের অর্থ পাচ্ছে, সেটি জানার জন্য চুক্তি করার বিষয়ে একটি ধারা সংযোজিত হয়েছে। এর ফলে মার্কিন সামরিক অনুদানপ্রাপ্ত দেশগুলোর সঙ্গে এই চুক্তি করার উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। এক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে এমন কোন সংস্থা বা বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের ওই অনুদান পাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৪০ কোটি (প্রায় ৭.৫ কোটি ডলার) টাকা অনুদান পেয়েছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে রয়েছে ফরেন মিলিটারি ফাইন্যান্সিং এবং আন্তর্জাতিক মিলিটারি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। ওই ৬৪০ কোটি টাকার একটি বড় অংশ বঙ্গোপসাগরে মার্কিনীদের যে উদ্যোগ রয়েছে, সেটি শক্তিশালী করার জন্য বাংলাদেশকে দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ২০১৩ ও ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুটি ‘হ্যামিলটন কাটারস’ নৌজাহাজ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অংশগ্রহণ করে থাকে এবং বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য ৫০টি ‘মাল্টি রোল আর্মাড পারসোনেল ক্যারিয়ার’ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৫ থেকে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের জন্য প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা (সাড়ে চার কোটি ডলার) ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি ২০১২ সালে ১৮ কোটি ডলার ব্যয়ে চারটি সি-১৩০ পরিবহন বিমান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ।
যদি কোন দেশ অনুদান দিয়ে থাকে, তবে ওই অর্থ কোথায় এবং কীভাবে ব্যয় হয়, সেটি তাদেরকে জানানো একটি যুক্তিসঙ্গত বিষয়। বিশেষ করে এ বিষয়ে যদি আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকে। এ বিষয়ে সরকারের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিষয়টি বিবেচনা করছি। সবদিক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ১১০ কোটি টাকা (১.৩ কোটি ডলার) মূল্যের ড্রোন দেবে বাংলাদেশকে এবং সেটি কারা ব্যবহার করবে, তা তারা জানতে চায় বলে তিনি জানান।
মার্কিন অনুদান র‌্যাব ব্যবহার করতে পারবে কিনা, জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কোন সংস্থাকে নিষেধাজ্ঞা দিলে তাদের দেয়া অনুদানের অর্থ ওই সংস্থা ব্যবহার করতে পারবে না।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জুলাই মাসে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র ্যাব এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট যুক্তরাষ্ট্রের কোন বৈদেশিক সহায়তা পাবে না।