সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ॥ মামলা দিয়ে হয়রানি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ

3

জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে ‘ষড়যন্ত্র’ করে মামলা দায়ের এবং এরপর অত্যাচার, বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ করেছেন দক্ষিণ সুরমার সিলাম ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আনহার মিয়ার স্ত্রী রোফিয়া বেগম। শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার স্বামী আনহার মিয়া ও তার অন্যান্য ভাইয়ের সঙ্গে আমার ভাশুর আনা মিয়ার জমিজমা নিয়ে কিছুদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের অনেক চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আমাদেও প্রতিবেশি ইব্রাহিম আলী সরফুলের অপচেষ্টার কারণে বিরোধের কোনো শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়ানি। আমাদের বাড়ির একটি অংশ দখল করে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই সরফুল এই বিরোধ জিইয়ে রাখে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমার ভাশুর আনা মিয়া এবং ইব্রাহিম আলী সরফুল-তার ছেলে ফয়জুল ইসলাম ফাহিম, সিরাজুল ইসলাম রাহিম, তাজিম মিয়া, নাজমুল মিয়াসহ ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়িতে লুটপাট শুরু করে। তারা বাড়ির বাঁশ-গাছ কাটতে শুরু করে। এ সময় আমার স্বামী আনহার মিয়া তাদেরকে বাধা দেন। ইব্রাহিম আলী সরফুল ক্ষিপ্ত হয়ে ধারালো দা দিয়ে আমার স্বামীকে প্রাণে মেরে ফেলতে মাথায় পরপর কয়েকটি আঘাত করে। মুমূর্ষু অবস্থায় আমরা তাকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করি।
তার ভাসুর আনা ময়িাকে তৃতীয় পক্ষের কেই আঘাত করে আহত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার স্বামী হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় আমার ভাসুরকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থায় থাকা অবস্থায় ইব্রাহিম আলী সরফুল রহস্যজনকভাবে আনা মিয়াকে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এবং সেখানেই তিনি মার যান। ঘটনার তিন দিন পর আনা মিয়ার স্ত্রী লাইলি বেগম মোগলাবাজার থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা নাকি তাদেরকে বাড়িতে দলবদ্ধ করে হামলা করে এবং রামদার আঘাতে আনা মিয়া আহত হন। এ কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কাল্পনিক। অথচ মামলায় এমন লোকদেরকেও আসামি করা হয়েছে, ঘটনার সময় যারা উপস্থিত ছিলেন না এবং ঘটনার সাথে তাদের আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই।
হয়রানি করতে এবং কুমতলব পূরণ করার জন্যে ঘটনার মিথ্যা বিবরণ দিয়ে নিরীহ লোকদের আসামি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ কনে তিনি।
মামলার দায়েরের পর লুটপাট ও ভাংচুরের অভিযোগ করে তিনি বলেন, ইব্রাহিম আলী সরফুলের চক্রান্তে ও নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী গত ২১ সেপ্টেম্বর আমাদের বাড়িঘরে হামলা করে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে। তারা মামলার আসামি আনহার আলী, আছকর মিয়া, আনছার মিয়া ও সামাদ মিয়ার বাড়িতেও দিনদুপুরে হামলা করে ৪০-৪৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে এবং ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। এ সময় তারা স্বর্ণালংকার, ধান ও চাল, ঢেউটিন, ঘরের আসবাবপত্র হাঁস মোরগ এবং ছাগলসহ সবকিছু লুট কওে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, এই অবস্থায় আমরা শুধু নিরাপত্তাহীন অবস্থায়ই নয়, সর্বস্ব লুটে নেওয়ার ফলে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। আমিসহ তিনজন হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়ে এসেছি। কিন্তু সন্ত্রাসীদের ভয়ে এবং আমাদের সমুদয় আসবাবপত্র লুট হয়ে যাওয়ার কারণে আমরা বাড়িতে যেতে পারছি না। এতে আমরা খুব অসহায় অবস্থায় রয়েছি।
এসব ঘটনাকে অমানবিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি দুর্ঘটনায় দুই ভাই আহত হন এবং তাদের মধ্যে একজন মারা যান। অপরজন এখনো গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মামলা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনার রহস্য বের হয়ে আসবে। কিন্তু মামলা দায়েরের পরই কুচক্রীদের প্ররোচনায় ও নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমাদের বাড়িঘরে হামলা করে নজিরবিহীন লুটপাট ও ভাঙচুর করেছে। এ সময় তিনি লুটপাট ও ভাঙচুরকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ ও সরকারি প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।