করোনা রোধে সতর্কতা

5

দীর্ঘ ৫৯৬ দিন পর বাংলাদেশ করোনায় মৃত্যুশূন্য ছিল গত শনিবার। স্বস্তির সংবাদ অবশ্যই। অতিমারী করোনা বিশ্বব্যাপী শুধু মানুষের শারীরিক সমস্যাই সৃষ্টি করেনি, মনোজগতে তৈরি করেছে বিষণ্ন্নতা, হতাশা, অনিশ্চয়তা। বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক অবস্থা তো রয়েছেই। এই সময় দেশে মৃত্যুশূন্য একটি দিন মানুষকে স্বস্তি দেয় স্বাভাবিকভাবেই। একই সঙ্গে মনোজগতের হতাশা কেটে উঁকি দেয় প্রত্যাশার আলো। হয়ত মৃত্যুশূন্য দিন এখনই অব্যাহত থাকবে না, তবু এক ধরনের ভালোলাগা কাজ করে হতাশাগ্রস্ত মনে।
চীনের উহানে করোনা সংক্রমণের সংবাদ প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও তৈরি হয় এক অজানা আশঙ্কা। হয়ত একদিন এই দেশেও আসবে মারাত্মক সংক্রামক এই ভাইরাস। ধীরে ধীরে ইউরোপ-আমেরিকা হয়ে করোনা ঠিকই প্রবেশ করে বাংলাদেশে। গোটা জাতির চোখ তখন শুধু পরিসংখ্যানের দিকে। প্রথমে ব্যক্তি, পর্যায়ক্রমে পরিবার, পাড়া-মহল্লা হয়ে শুরু হয় কমিউনিটি সংক্রমণ। যা বাংলাদেশের জন্য ছিল আরও বেশি ভীতিকর। সংখ্যাধিক্য মানুষ, ঘনবসতি এবং দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কিভাবে সামাল দেয়া হবে এই ভয়ঙ্কর ঘাতক? বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও তখন বেসামাল অবস্থা। বাংলাদেশেও দুই দফায় এসেছে সংক্রমণের ঢেউ। স্বল্প সামর্থ্যে প্রথম দিকে সরকার কিছুটা হিমশিম খেলেও এক সময় ভালোই সামাল দিয়েছে। সময়োপযোগী ও সঠিক পরিকল্পনায় যতটা ধ্বংসলীলার আশঙ্কা করা হয়েছিল, পরিস্থিতি ততটা খারাপ হয়নি, যতটা হয়েছে উন্নত বিশ্বে। এর মধ্যেও আমরা হারিয়েছি প্রায় ২৮ হাজার মানুষ। প্রায় ১৬ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়ে এখনও ভুগছেন নানা জটিলতায়। বিশ্বে প্রাণ গেছে প্রায় ৫২ লাখ মানুষের।
আমাদের দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যু ঘটেছিল গত বছর ১৮ মার্চ। সর্বশেষ মৃত্যুশূন্য ছিল গত বছর ৩ এপ্রিল। এর পর ৫৯৬ দিন আমাদের গুনতে হয়েছে প্রাত্যহিক মৃত্যুর সংখ্যা। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু দেখতে হয়েছে গত ৫ ও ১০ আগস্ট। এই দুই দিন মৃত্যু ঘটেছে ২৬৪ জন করে। আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল ২৮ জুলাই ১৬ হাজার ২৩০ জন। দীর্ঘ প্রায় বিশ মাস দেশকে পার করতে হয়েছে কঠিন পথ। মানুষকে গৃহবন্দী জীবন কাটাতে হয়েছে লকডাউন ও কঠোর বিধিনিষেধে। সরকারের নানা উদ্যোগে যেমন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছে, তেমনি টিকাসহ স্বাস্থ্যবিধির শৃঙ্খলায় পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখনও করোনার তান্ডব জর্জরিত। আসছে তৃতীয় ঢেউ বাংলাদেশের মৃত্যুশূন্য দিনে রাশিয়ায় মৃত্যুবরণ করেছে এক হাজারের বেশি মানুষ। জার্মানিতে সংক্রমণ ছিল ৪০ হাজার। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, করোনার তৃতীয় ঢেউ আবারও আঘাত হানতে পারে যে কোন সময়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিকাদানসহ যা করার সরকার করতে থাকুক, সাধারণ নাগরিকদের দায়িত্ব হচ্ছে সর্বদা সতর্ক থাকা।