উন্নয়ন কর্মকান্ড আগের অবস্থায় নেয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর ॥ মেয়াদ শেষে পদ ছাড়তে হবে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের, বসানো হবে প্রশাসক

5
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সচিবালয় প্রান্তে যুক্ত হয়ে মন্ত্রী পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
উন্নয়নসহ অন্যান্য কর্মকান্ড করোনা মহামারীর আগের স্বাভাবিক অবস্থায় নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার মন্ত্রী সভার বৈঠকে তিনি এই নির্দেশ দেন। এছাড়া মেয়াদ শেষে সরতে হবে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের, বসানো যাবে প্রশাসক, মেয়াদ শেষে পদ ছাড়তে হবে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের। এমন বিধান রেখে ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০২১’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রী সভা। একই সঙ্গে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে নির্বাচন না হলে জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার বিধান রাখা হচ্ছে সংশোধিত আইনে। পাশাপাশি মন্ত্রী সভা সনদ না নিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, ২০২১’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রী সভা বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গত দুটি মন্ত্রী সভা বৈঠকের আগে স্থানীয় সরকার থেকে একটা আইন নিয়ে আসা হয়েছিল। সেটা ছিল পৌরসভা আইন। আগের আইন অনুযায়ী বিধান ছিল মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত পৌরসভার মেয়র কন্টিনিউ করবেন। তাই দেখা গেছে, মামলা-মোকাদ্দমার কারণে পৌরসভায় একেকজন ১৪/১৫ বছর চেয়ারম্যান থাকতেন। জেলা পরিষদেও এই বিধান ছিল।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব আরও বলেন, এটাও স্থানীয় সরকার বিভাগ নিয়ে আসছে, যেন এটাও ওই পৌরসভা আইনের মতো মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে যতদিন পরিষদ গঠিত না হবে সরকার প্রশাসক দিয়ে রাখতে পারবে। খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, সদস্যদের ক্ষেত্রে একটু পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের প্রতিনিধিরা এটার সদস্য হবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা পরিদর্শনকারী সদস্য হবেন। বোর্ডটা সংশোধন করার সুপারিশ করা হয়েছে।
উন্নয়ন কার্যক্রম করোনার আগের অবস্থায় নেয়ার নির্দেশ : উন্নয়নসহ অন্যান্য কর্মকা- করোনাভাইরাস মহামারীর আগের স্বাভাবিক অবস্থায় নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার মন্ত্রী সভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। এজেন্ডার বাইরে প্রধানমন্ত্রীর কোন নির্দেশনা ছিল কিনাÑ জানতে চাইলে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, যেহেতু কোভিড-১৯ সংক্রমণের দুই বছর হয়ে গেছে। সেজন্য আমাদের একটা ‘প্রটোকলও ডেভেলপ’ হয়েছে। সুতরাং সবাইকে আরেকটু গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। উন্নয়নটা আগের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। শুধু উন্নয়ন না সব ধরনের কাজকর্মে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে হবে। কোন কোন খাতে বেশি গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, সবাইকে, যে ভাল করেছে তাকেও বলা হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময় দেয়া বিধি-নিষেধ এখনও কিছু কিছু রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গভবনে এবার ১৬ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠান হচ্ছে না। প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠান হবে।
সনদ না নিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করলে ৫ বছরের জেল : সনদ না নিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, ২০২১’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রী সভা। মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, এতদিন আমাদের সিনেমাগুলো অনুমোদন করা হতো ১৯৬৩ সালের সেন্সরশিপ অব ফিল্ম এ্যাক্ট-১৯৬৩ এবং ১৯৭২ সালের একটি সংশোধন অনুযায়ী। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে আইনটিকে সংশোধন করা হয়েছিল।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে এটাকে সংশোধন করা হয়েছে যে, আইনটিতে ‘সেন্সরশিপ’ আইন থাকা ঠিক হবে না, এটা সার্টিফিকেশন আইন হওয়া উচিত। তার একটা অংশ থাকবে সেন্সর। শুধু সেন্সর থাকলে এখানে অন্যরকম অসুবিধা হয়।
মন্ত্রীপরিষদ সচিব বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এখন সার্টিফিকেশন আইন। সার্টিফিকেশন আইনে গেলে সেখানে সেন্সর একটা অংশ থাকবে। সেজন্য তারা একটা সংশোধনী নিয়ে এসেছিলেন। এখানে খুব বেশি কোন পরিবর্তন হয়নি। সেন্সরশিপ যে আইনটি ছিল, তার সঙ্গে কিছু-কিছু যোগ করে এ আইনটা নিয়ে আসা হয়েছে।
বোর্ডে আগের মতোই একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। ১৪ জন সদস্যসহ মোট ১৫ জনের একটি বোর্ড থাকবে, যারা প্রত্যয়ন দেবেন। চলচ্চিত্রের প্রত্যয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে শ্রেণীবিন্যাস ও মূল্যায়ন পদ্ধতি করা হবে। সেটি বিধি নিয়ে নির্ধারণ করা হবে। ৭ সদস্যের একটি আপীল বোর্ড থাকবে। সেখানে আগের মতোই মন্ত্রী পরিষদ সচিব সভাপতি থাকবেন।
আইনের খসড়ায় শাস্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি কোন ব্যক্তি সনদবিহীন কোন চলচ্চিত্র চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন তাহলে সে অপরাধে তিনি অনধিক ৫ বছরের কারাদন্ড বা ৫ লাখ টাকা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
তিনি আরও বলেন, আর কোন ব্যক্তি যদি কোন চলচ্চিত্রের সনদ পাওয়ার পর কোন টেম্পারিং করেন, অনেক সময় যে দৃশ্যগুলো সনদ না বা সেন্সর না, সেগুলো যোগ করেন, তাহলে ২ বছরের কারাদ- অথবা ২ লাখ টাকা জরিমানা হবে।