শ্রীমঙ্গল পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে উচ্ছ্বাস থাকলেও বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

13

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
দীর্ঘ ১১বছর পর ভোটের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে চায়ের দেশ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পৌরসভায়।
২৮ নভেম্বর ইভিএম পদ্ধতিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে ঘিরে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে।
তবে শেষ পর্যন্ত ভোটের দিন ভোটাররা তাদের ভোট নির্বিঘ্নে প্রয়োগ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী শিল্পপতি মো. মহসিন মিয়া মধু ও তাঁর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে।
মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকেই প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নতুন মুখ মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মনসুরুল হক নেতা-কর্মীদের নিয়ে জোরেশোরে প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন।
আর পৌরসভার বর্তমান মেয়র বিএনপি সমর্থিত শিল্পপতি মহসিন মিয়া মধু তাঁর কর্মী সমর্থকদের নিয়ে প্রচারণায় চালাচ্ছেন। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে উঠান বৈঠক করে করে নিজের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
জানা যায়, চলতি মাসের শুক্রবার (১২ নভেম্বর) নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই মাঠে সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে প্রার্থীদের। শ্রীমঙ্গল চৌহমুনা এলাকা, মৌলভীবাজার রোড, হবিগঞ্জ, ভানুগাছ রোড, কালিঘাট রোড, জালালিয়া সড়ক, উকিল বাড়ি সড়ক, মিশন রোড, কলেজ রোড, বিটিআরআই চা বাগান এলাকাসহ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকার পাড়া মহল্লায় মেয়র প্রার্থীদের ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারে চেয়ে গেছে।
অপরদিকে পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মহসিন মিয়া মধু ও তাঁর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস থাকলেও ভোটের দিন ভোটাররা নির্বিঘ্ন ভোট কেন্দ্রে ভোট প্রয়োগ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে তাদের মধ্যে শংকা কাটছে না।
মৌলভীবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে আগামী (২৮ নভেম্বর) শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হবে।
ইতোমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় পৌরসভায় ৪ নং ওয়ার্ডে ১জন কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম সোহাগকে বিজয়ীও ঘোষণা করা হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও এবার ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা আর বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান মেয়র মো. মহসিন মিয়া মধু নারিকেল গাছ প্রতীকের মধ্যে। মেয়র প্রার্থীরা হচ্ছেন-স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান মেয়র শিল্পপতি মহসিন মিয়া মধু এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সৈয়দ মনসুরুল হক (নৌকা), আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী নতুন মো. আছাদ উদ্দিন আহমদ (মোবাইল ফোন) প্রতীক।
৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ৩২জনের মধ্যে ১জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচত হওযায় বর্তমানে ৩১ জন প্রার্থী ও সংরক্ষিত নারী মহিলা কাউন্সিল ১২জন। ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ২০ হাজার ৯৪ জন।
তবে আছাদ উদ্দিন ৭৫ বছরের বয়সী। তিনি বিত্তশালী হলেও শহরে তার কোনো পরিচিত নেই। তাই তিনি পরিচিতি লাভের জন্য মূলত পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে তিনিও জয়ের স্বপ্ন দেখছেন।
নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগে উচ্ছ্বাস ও আনন্দ বিরাজ করলেও উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী।
শ্রীমঙ্গল পৌরসভার একাধিক ভোটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা জোর জবরদস্তির মাধ্যমে ভোটের জয় ছিনিয়ে নেয়। এটা যদি না তাহলে আবারও বর্তমান মেয়র মহসিন মিয়া মধুর বিজয় আবারও সুনিশ্চিত।
শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও সচেতন নাগরিক মামুন আহমদ বলেন,মানুষের মধ্যে ভোটের আগ্রহ নাই। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভোট সেন্টারে ভোটারা গিয়ে দেখে তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। যার কারণে ভোটের প্রতি সাধারণ মানুষের উৎসবের আমেজ নেই।
শ্রীমঙ্গল পৌরসভার বর্তমান মেয়র মো. মহসিন মিয়া মধু বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা চিন্তা করে ভোটে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু সাধারণ মানুষের যে চিন্তা ভাবনা, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বর্তমান যে পরিস্থিতির কারণে সব জায়গায় আতংক বিরাজ করছে। যেখানে যাই সেখানেই মানুষের প্রশ্ন ভোট হবে ?। এই ভোট সুষ্ঠু হবে কি, না হবে এই প্রশ্নে উত্তর দেওয়ার মালিক আমি না। যারা নির্বাচন পরিচালনা করেন, তারা এই উত্তর দিবেন।
তিনি আরও বলেন, আমি প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের নিকট অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা করছি। তবে তিনি মনে করেন, ইভিএম পদ্ধতিতে এই প্রথম পৌরসভায় ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে।এতে কারচুপি নাও হতে পারে।
অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী সৈয়দ মনসুরুল হক বলেন, সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে। ইভিএম পদ্ধতি ভোট গ্রহণে কোথাও অনিয়ম হয়নি। আর শ্রীমঙ্গল পৌরসভা নির্বাচনে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি আশাবাদী বিজয় সুনিশ্চিত। তিনি আরও বলেন, বর্তমান মেয়র মহসিন মিয়া মধু ইভিএম টাকা খরচ করে তিনি নিয়ে আসছেন সেটাও লোকেমুখে সুর আছে। আমার আশংকা তিনি নির্বাচনের দিনও ভোট ইঞ্জিনিয়ারিং করার সম্ভাবনা আছে।
উল্লেখ্য যে, ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল শ্রীমঙ্গল পৌরসভা নির্বাচন। এরপর মেয়াদ শেষ হলেও নানা আইনি জটিলতার কারণে নির্বাচন হয়নি। ১০ বছর পর শ্রীমঙ্গল পৌরসভার নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
যে কারণে নির্বাচন হয়নি : শ্রীমঙ্গল পৌরসভায় ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়াদপূর্ণ হয়। সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারি। বিজয়ীরা একই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি শপথ নিয়ে এর দুইদিন পর ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম সভা হয়। এই নির্বাচনে ভাতিজা মহসিন মিয়া মধু নিকট হেরে যান প্রয়াত চাচা সাবেক এমপি ও পৌর মেয়র মো. আহাদ মিয়া। সেই থেকে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে মহসিন মিয়া মধু মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
শ্রীমঙ্গল পৌরসভা ১৯৩৫ সালের ১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৩ সালের আসাম মিউনিসিপ্যাল এ্যাক্ট এর বিধান অনুযায়ী প্রতিষ্ঠা হয় এই পৌরসভা। দুই দশমিক ৫৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পৌরসভা দেশ স্বাধীনের পর ‘গ’ শ্রেণীতে রূপান্তর হয়। এরপর ১৯৯৪ সালের ১ জুলাই ‘খ’ শ্রেণীতে ২০০২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নীত হয়। কিন্তু সীমানা বর্ধিত করা হয়নি। ২০১৫ সালে কাজী মো. আব্দুল আজিজ সীমানা বর্ধিতকরণের জন্য উচ্চ আদালতে একটি রিট দায়ের করেন। রিট পিটিশন নং-৮৬৭৫/২০১৫। প্রায় একই সময়ে জাহাঙ্গীর হোসেন নামের আরেকজন একই বিষয়ে আরেকটি রিট করেন। রিট পিটিশন নং-৮৯২৩/২০১৫। এরপর উচ্চ আদালতের নির্দেশে সীমানা বর্ধিতকরণের কার্যক্রম শুরু হয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় একটি ডিজিটাল ম্যাপও তৈরি করে। সীমানা বর্ধিতকরণের কার্যক্রম বর্তমানে চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। শ্রীমঙ্গল পৌরসভার বয়স প্রায় ৮৬ বছর।