জৈন্তাপুর উপজেলা ৫টি ইউপি নির্বাচনে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা

31

জৈন্তাপুর থেকে সংবাদদাতা :
সামনে আসছে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জয়ের লড়াইয়ে প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থী ও সমর্থকেরা। নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ৮ দিন। নির্বাচনী প্রচারণা এখন জমজমাট জৈন্তাপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন ভোট প্রার্থীরা। প্রার্থীরা ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন, দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। বিগত নির্বাচন গুলোর চাইতে এবার নির্বাচনের প্রচারণা অনেক আংশে কম। ভোটের মাঠে হরেক রকমের সুর। শ্লোগানে হচ্ছে পরিচিত গানের কলি কানে ভাসছে ‘নির্বাচনী সুরে’। উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের অলিতে-গলিতে মাইকে ভেসে আসছে ছন্দময় শ্লোগান বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রার্থীরা খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে কোমর বেঁধে নির্বাচনী মাঠে দিন-রাত সময় দিচ্ছেন। প্রার্থীরা তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে আগামী ২৮ নভেম্বর ২০২১ নির্বাচনে জয়ের লড়াইয়ে মাঠে সকাল-সন্ধ্যা কাজ করে যাচ্ছে। চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। এক প্রার্থী অপর প্রার্থী বিভিন্ন সমালোচনা ও দোষ ত্রুটি বলে ভোটারের মন জয় করতে মাঠে রীতিমতো লড়াই করে চলেছেন নির্বাচনে জয়ী হওয়ার লক্ষে। স্থানীয় ভোটার গণ জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিয়ে চুলচেলা বিশ্লেষণ করছেন। সুষ্ঠু ভোট নিয়ে ও আছে ভোটারদের মাঝে নানা আলোচনা সমালোচনা। রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থান পোস্টারে ছেয়ে গেছে। তাই চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। প্রত্যেক প্রার্থী নিজেকে সৎ, নিষ্ঠাবান, যোগ্য, দীর্ঘদিন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থেকে সামাজিক উন্নয়ন করে চলেছেন দাবি করে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরা বিভিন্ন পথসভা, মিলাদ মাহফিল, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। অনেকে আবার গত বছর যে প্রতিক পেয়ে জয়যুক্ত হয়েছিলেন এ বছর ও সেই প্রতীকই পেয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলিয় প্রতীকে নিয়ে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও ভোটের মঠে নেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলীয় (বিএনপি)। অন্যদিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের, জাতীয় পার্টী সহ অন্যান্য সংগঠনের নেতা কমীরা। জৈন্তাপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ৯ জন, বিএনপির ৮ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ২ জন, জাতীয় পার্টী ২ জন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ১০ জন ও জমিয়তের ১ জন সহ মোট ৩২জন। তারা হলের, ২নং জৈন্তাপুর ইউনয়নঃ আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক রাজা (নৌকা), আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল হাই আব্দুল কাইয়ুম (টেলিফন), আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী হুসেইন আহমদ (মোটরসাইকেল), বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আলমগীর হোসন (ঘোড়া), বিএনপির নেতা আব্দুল আহাদ (টেবিল ফ্যান), জাতীয় পার্টীর বিদ্রোহী প্রার্থী ফখরুল ইসলাম (আনারস), স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম (চশমা)।
৩নং চারিকাটা ইউনিয়ন : আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী আলতাফ হোসেন বিলাল (ঘোড়া), স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ আলম চৌধুরী তুফায়েল (অটোরিক্সা), স্বতন্ত্র প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন আজাদ (টেলিফন), জাসদ নেতা সুলতান করিম (দুটি পাতা), বিএনপির সমর্থক হেলাল উদ্দিন হেলাল (চশমা), স্বতন্ত্র প্রার্থী বদরুল ইসলাম (আনারস), মুক্তিযুদ্ধা সন্তান কমান্ড (মোটরসাইকেল)।
৪নং দরবস্ত ইউনিয়ন : আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী মোঃ কুতুব উদ্দিন (নৌকা), বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহার (আনারস), বিএনপির সমর্থক খাইরুল আমিন (ঘোড়া), জমিয়ত মনোনিত প্রার্থী মাসুদ আজহর (খেজুর গাছ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনিত প্রার্থী জসিম উদ্দিন (হাত পাখা)।
৫নং ফতেপুর ইউনিয়ন : আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী রফিক আহমদ (নৌকা), বিএনপি বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ (ঘোড়া), স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা তফাজ্জল হোসেন (আনারস)।
৬নং চিকনাগুল ইউনিয়ন: আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী কামরুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা), আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী আমিনুর রশীদ (দুটি পাতা), আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী ফয়জুল হাসান (ঘোড়া), বিএনপি বিদ্রোহী প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান এবিএম জাকারিয়া (চশমা), বিএনপি সমর্থক জাহাঙ্গীর আলম (আনারস), জাতীয় পার্টি মনোনিত প্রার্থী জালাল আহমদ (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী হাঃ আব্দুল মুছাব্বির ফরিদ (মোটরসাইকেল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনিত প্রার্থী ফয়সল আহমদ (হাত পাখা), সতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার রহিম চৌধুরী (অটোরিক্সা)।
এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাঠে কাজ করছেন। কয়েকজন ভোটারের সাথে কথা বললে তারা জানান, নির্বাচনের সময় আসলে অনেক ধরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। কিন্তু এবার আর আমরা প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করি না। যারা জনগণের জন্য কাজ করবেন তাদেরকে ভোট দিবো। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভোটার বলেন, ভোট কতটুকু স্বচ্ছ হবে তা জানি না। তবে ইউপি নির্বাচনে প্রতীক নয়, গোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে ভোট দেওয়া হয়। সেখানে যার গোষ্ঠী বড় তার জয়ের আশা বেশি হয়।
এ ব্যাপারে চারিকাটা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র¿ চেয়ারম্যান প্রার্থী আলতাফ হোসেন বিলাল বলেন, দেশে ইতোমধ্যে দুই ধাপে ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে সবাই দেখেছেন কিভাবে নির্বাচন হচ্ছে। এই নির্বাচনে কি হবে, না হবে বলতে পারছি না। তবে আশা রাখি একটা সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন হবে। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রয়োগ করতে পারবে।
২নং জৈন্তাপুর ইউনিয়নে ঘোড়া প্রতীকে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আলমগীর হোসন প্রতিবেদককে বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার দলীয় প্রার্থী প্রকাশ্যে বিভিন্ন ধরণের হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন। ভোটাররা ভোট দেওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। ঠিকানাগিন্ত কেন্দ্রে ভোটের দিন সহিংসতার ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান তিনি। তবে নিজের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করে জৈন্তাপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক রাজা বলেন, এটা একটি পক্ষ নির্বাচনে সহিংসতা তৈরির জন্য গুজব রটাচ্ছে। এই ইউনিয়নে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আশা রাখছি।
৫নং ফতেপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিক আহমদ বলেন, অবাধ সুষ্ট নির্বাচন হবে। আমার নির্বাচনী এলাকায় যারা সমর্থক রয়েছে তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত নৌকার বিজয় লাভের জন্য মাঠে আছি, কাজ করে যাবো। এ ব্যপারে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ বলেন, সরকার দলিয় প্রার্থী হিসেবে তার সমর্থকরা আমার সমর্থকদের কে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে আমি এসবে কান দিচ্ছি না। বিভিন্ন বাজারে, দোকানে দোকানে ঘোড়ার পক্ষে একাধিক কর্মী নিয়ে ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছি। আশা করি এই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।
বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহার বলেন, সরকার ২০১৬ সালে যে ভাবে অবাধ সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন দিয়েছে আশা করি এবার ও একটি সুন্দর নির্বাচন দিবেন। আমার নির্বাচনী প্রচারণায় কোন সমস্যা হচ্ছে না শুধু আমার নির্বাচনী উঠান বৈঠকে রাত ৮টার পর মাইক বাজাতে দেয়া হচ্ছে না কিন্তু আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী রাত ১০টা পর্যন্ত বাইক বাজিয়ে উঠান বৈঠক করলে কেউ নিষেধ করে না। ২৮ নভেম্বর ইউপি নির্বাচনে আনারস প্রার্থীকে বিজয় করার জন্য একাধিক কর্মী নিয়ে ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছি। আশা করি এই নির্বাচন বিজয় লাভ করবো।