পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় দিয়ে শুরুর প্রত্যাশা টাইগারদের

8

স্পোর্টস ডেস্ক :
প্রত্যাশা ও স্বপ্নের মেলবন্ধন ঘটেনি মাঠে তাই চাওয়াটা পূরণ হয়নি। বিশ^কাপ মঞ্চে চরম ভরাডুবি দুর্বিষহ করে তুলেছে চারপাশ। তীব্র সমালোচনার শরে বিদ্ধ ক্রিকেটাররা কোণঠাসা। এমন গুমোট পরিবেশে পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্রীড়াবান্ধব, ক্রিকেটপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ক্রিকেটারদের ভাল খেলার সাহস জুগিয়েছেন। এটিকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে একেবারে নতুন চেহারার একটি দল নিয়ে প্রথম টি২০ ম্যাচে নামছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। তরুণদের নিয়ে সিরিজটি খেলা অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ কঠিন চ্যালেঞ্জেরই মনে করছেন, তবে আশায় আছেন ভালভাবে শুরুর। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নেয়া বাংলাদেশ দল আরও বড় সমর্থন পাবে আজ দীর্ঘ সময় পর মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দর্শকদের উপস্থিতিতে। পাকিস্তান দল ফর্মের তুঙ্গে, মিরপুরের উইকেট সম্পর্কেও জানা- তবু স্বাগতিক দল হিসেবে বাংলাদেশকে সহজ প্রতিপক্ষ ভাবছে না। প্রতি ম্যাচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা থাকলেও জয়ের ছন্দ ধরে রাখার প্রত্যয় সফরকারীদের। ম্যাচটি বেলা ২টায় শুরু হবে।
মিরপুর বাংলাদেশের ‘হোম অব ক্রিকেট’- যেখানে স্বাগতিকদের অনেক বড় অনুপ্রেরণা দর্শক! বিশ^ব্যাপীই মিরপুরের দর্শকদের নামডাক রয়েছে এবং তাদের সামনে বাংলাদেশ দলও যেন সত্যিকারের ‘টাইগার’ হয়ে অনেক পরাশক্তিকে ঘায়েল করে ফেলে। কিন্তু গত বছর মার্চের পর থেকে আর এই মাঠে কোন দর্শক আসার সুযোগ পাননি। মহামারী করোনার থাবায় সব ধরনের খেলা হয়েছে দর্শকশূন্য মাঠে। তাই এ বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে দর্শকশূন্য মাঠে খেলেছে বাংলাদেশ। অবশেষে ৬১৮ দিন পর সেই ক্রিকেট উন্মত্ত, ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ দর্শকরা মাঠে প্রবেশ করবেন আজ। সমর্থন দেবেন অনেক পরিবর্তন নিয়ে নতুন চেহারার বাংলাদেশ দলকে। তাই বৃহস্পতিবার ভোর হওয়ার আগেই সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে টিকেটের জন্য দর্শকদের ভিড় দেখা গেছে। এবার এই দর্শকরাই বাড়তি শক্তি ও অনুপ্রেরণা হবেন ফর্মের তুঙ্গে থাকা পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের জন্য। এ বিষয়ে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বললেন, ‘সবসময় দর্শকরা আমাদের অনেক সমর্থন করেন। আমাদের ক্রিকেট এবং দলের জন্য এটা অনেক বড় ব্যাপার।’ শুধু তাই নয়, চারদিকে সমালোচনার ঝড়ে যখন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা কোণঠাসা, তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী পাশে দাঁড়ালেন। তিনি গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা যেটা আশা করেছিলাম, আমাদের খেলোয়াড়রা তা খেলতে পারেনি। তাই বলে আমি কিন্তু আমাদের ছেলেদের কখনও হতাশ করিনি। করোনার কারণে তারা অনুশীলন করতে পারেনি। তারপরও বাংলাদেশ আজ বিশ্বকাপে খেলছে, কয়েকটি দেশকে হারাতে পারছে, এটাই তো বড় কথা। এত দ্রুত হতাশ বা উৎফুল্ল হবার দরকার নেই। মাঝামাঝি ধৈর্য ধরে থাকুন। আগামীতে নিশ্চয়ই ভাল করবে বাংলাদেশ।’
দেশের আপামর জনগণের অভিভাবক যখন এমন কথা বলেন, তখন আর ভয় কি ক্রিকেটারদের? অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহও দারুণ খুশি এবং অনুপ্রাণিত। তিনি বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ। তার এই কথাটা আমাদের আরও অনেক প্রেরণা জোগাবে। সত্যি কথা বলতে কি এটা আমাদের দলের জন্য অনেক পজিটিভ একটা কথা। আর উনি আমাদের যেভাবে অনুপ্রেরণা দেন, সমর্থন করেন, যেভাবে আগলে রাখেন সেটা অবিশ্বাস্য। আমরা এতটুকু নিশ্চিত করব যে আমাদের শতভাগের বেশি দিয়ে এই সিরিজটা খেলব।’ করোনা সতর্কতার কারণে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক দর্শক আসবেন আজ, অর্থাৎ ১০/১২ হাজার। তারা মাঠে এবং বাইরে থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া সাহসে বলীয়ান হয়ে কেমন করবে বাংলাদেশ মিরপুরে? যেখানে বিশ^কাপের আগেই সিরিজ হেরে গেছে এবার টি২০ বিশ^কাপে ফাইনাল খেলা দুই দল অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড, পাকদেরও কি ঘায়েল করতে পারবেন মাহমুদুল্লাহরা। বিশ^কাপ স্কোয়াডের ৬ ক্রিকেটার নেই। কিন্তু মাহমুদুল্লাহ বললেন, ‘যে জিনিসগুলো আগে হয়ে গেছে সে জিনিস নিয়ে চিন্তা করলে বরং নেগেটিভ প্রভাব আসতে পারে, আমরা ইতিবাচকভাবে চিন্তা করছি সবকিছু। পাকিস্তান অন্যতম সেরা দল এই মুহূর্তে, তো আমাদের অনেকগুলো নতুন সুযোগ পেয়েছে তো এটা আমাদের জন্য খুব কঠিন। বিশ^কাপের পর আমাদের বড় একটা চ্যালেঞ্জ এই সিরিজে ভাল ক্রিকেট খেলার এবং সামর্থ্যরে প্রমাণ দেয়ার জন্য ভাল একটা সুযোগ।’ সর্বশেষ ২০১৫ সালে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে এসে এবং ২০১৬ সালে এশিয়া কাপ খেলতে এসে পাকিস্তান হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশের কাছে। সেটাও অনুপ্রেরণা হবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদদের জন্য। এত কিছুর পর একঝাঁক তরুণদের নিয়ে এ সিরিজটাকে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন মাহমুদুল্লাহ। প্রথম টি২০-তে আজ একাদশটা হতে পারে- নাইম, সাইফ, শান্ত, ইয়াসির, আফিফ, মাহমুদুল্লাহ, নুরুল হাসান সোহান, শেখ মেহেদি হাসান, তাসকিন আহমেদ, নাসুম আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান।
পাকিস্তান দল অবশ্য এতকিছু নিয়ে ভাবছে না। তাদের লক্ষ্য বিশ্বকাপে এবং তার আগে যে দুর্দান্ত ছন্দ ছিল দলের সেটা ধরে রাখা। এবার বিশ^কাপে সেমিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের আগে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে ৩ নম্বরে থাকা পাকরা দুর্দান্ত খেলে প্রতিপক্ষদের বিপর্যস্ত করেছে। মিরপুরের উইকেটে বিপিএল খেলেছেন অনেক ক্রিকেটার এবং উপমহাদেশের এই চিরাচরিত ধারার উইকেট নিয়ে চিন্তা নেই। তাই রান তোলার কৌশলটাও জানা আছে বাবর আজমদের। আরব আমিরাতেও এবার ধীরগতির উইকেটে শুরুতে দেখেশুনে খেলে পরের দিকে তা-ব চালিয়েছে পাক ব্যাটাররা। মিরপুরেও একই পরিকল্পনা তাদের। ১২ টি২০ মোকাবেলায় ১০ বারই জেতা পাকরা দারুণ আত্মবিশ^াসী। ১২ জনের যে দল তারা জানিয়েছে প্রথম টি২০ ম্যাচের জন্য সেখানে বিশ^কাপে নিয়মিত না খেলা অনেকেই আছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগটা নিতে চাইছে আসলে পাকরা। এ বিষয়ে বাবরের কথাতেই পরিকল্পনাটা স্পষ্ট, ‘বিশ্বকাপ থেকে যে ছন্দ চলছে আমাদের, তা ধরে রাখতে চাইছি। এখানে ভিন্ন কম্বিনেশন খেলানোর চেষ্টা করছি, নিজেদের শক্তির জায়গা বাজিয়ে দেখতে চাই। এরপর আমাদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজও আছে। ৬ ম্যাচে বিভিন্ন ক্রিকেটারকে দেখব আমরা।’ মিরপুরে ২০১১ সালে একবারই বাংলাদেশকে হারিয়েছে পাকরা। পরে দুইবার হেরেছে, কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই পরিসংখ্যানটা পাল্টাতেই উন্মুখ পাকিস্তান দল।