সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ১৪৮ জন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, সোমবারের মধ্যে সমাধান না হলে ক্যাম্পাসে তালা

5

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে আগামী রবিবার (২১ নভেম্বর) পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়া আইন বিভাগের প্রায় দেড় শত শিক্ষার্থী। আগামী রবিবার মধ্যে হাইকোর্ট নির্দেশিত জরিমানার টাকা পরিশোধ করে বার কাউন্সিলে আইনজীবী তালিকাভুক্তির তাদের আবেদন জমা না দিলে সোমবার ক্যাম্পাস তালাবদ্ধ করবেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার ১৮ নভেম্বর বিকেল ৩টার দিকে এই আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। এসময় আইন বিভাগের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, তাদের দাবি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ পূরণ না করলে আগামী সোমবার ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকসহ প্রতিটি কক্ষে তালা লাগানো হবে। এর আগে দুপুর ১২টার থেকে তারা ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
জানা যায়, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে প্রতি সেমিস্টারে ৫০ জনের অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি না করার নোটিশ ২০১৪ সালে জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। সেই নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে প্রতি ব্যাচে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে নির্দেশনা দেয় বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ আইন বিভাগের ২১, ২২ ,২৩ ও ২৪- এই চার ব্যাচে ৫০ জনের অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করে। যে কারণে এই চার ব্যাচের (৫০ জনের অতিরিক্ত) ১৪৮ জনের আবেদন জমা নেয়নি বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় বার কাউন্সিলের নির্দেশনা অমান্য করে প্রতি সেমিস্টারে ৫০ জনের অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করান। এজন্য বার কাউন্সিল আবেদন জমা নিচ্ছে না ৪ ব্যাচের ১৪৮ জন শিক্ষার্থীর। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ৮ মাস আগে এই ১৪৮ জন শিক্ষার্থীর পক্ষে হাইকোর্টে ২টি রিট (৫০৯১ ও ৫৩৭০) দাখিল করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আপতার মিয়া ও ২২তম ব্যাচের ছাত্র শফিকুল ইসলাম শফি।
এই রিট দুটোর উপর ভিত্তি করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে ২৯ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করে এই ১৪৮ শিক্ষার্থীর আবেদন জমা দিতে বলেন। হাইকোর্ট এই টাকা পরিশোধ করার জন্য আগামী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে সময় দেন। এই সময়ের মধ্যে সর্বমোট ৬টি কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত জরিমানার টাকা পরিশোধের কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যার ফলে চরম অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে এই ১৪৮ জন শিক্ষার্থীর জীবন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে তারেক আহমদ বৃহস্পতিবার ১৮ নভেম্বর বলেন, ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. মো. শহিদ উল্লাহ তালুকদারের যোগসাজশে আইন বিভাগের প্রধান হুমায়ুন কবির অনিয়ম করে প্রতি সেমিস্টারে ৫০ জনের অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করায় আমাদরকে এই বিপাকে পড়তে হয়েছে। আগামী ২ জানুয়ারির মধ্যে হাইকোর্ট নির্ধারিত জরিমানার টাকা আদায় করে বার কাউন্সিলে আবেদন জমা করাতে না পারলে আমরা ১৪৮ শিক্ষার্থীর জীবন অন্ধকারে ডুবে যাবে।
তারেক বলেন, টিউশন ও রেজিস্ট্রেশন ফিসহ প্রায় ১৫-২০ লক্ষ টাকা খরচ করে এই ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স সম্পন্ন করলেও আইনজীবী হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কর্তৃপক্ষের অনিয়ম ও খামখেয়ালিপনা। এ বিষয়ে সমাধানের লক্ষ্যে আমরা বার বার ভিসি ও আইন বিভাগের প্রধান স্যারের দ্বারস্থ হয়ে জরিমানার টাকা পরিশোধের দাবি জানালে তারা নয়-ছয় করে এড়িয়ে যান। এর মধ্যে আইন বিভাগের প্রধান হুমায়ুন কবির স্যার আমাদের মামলাসহ বিভিন্নভাবে ভয়ভীতিও দেখান। সর্বশেষ আমরা বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করি। সেই সঙ্গে আগামী রোববার পর্যন্ত ৩ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছি। রোববারের মধ্যে জরিমানার টাকা পরিশোধ করে আমাদের সমস্যার সমাধান না করলে সোমবার ক্যাম্পাসের মূল ফটকসহ প্রতিটি কক্ষের দরজায় আমরা তালা লাগাবো।
তারেক আরও বলেন, সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানকালে যদি কোনো প্রকার দুর্ঘটনা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তাহলে ভিসি ও হুমায়ুন স্যার এর জন্য দায়ী থাকবেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. শহিদ উল্লাহ তালুকদার এ বিষয়ে সম্পূর্ণ দায় চাপিয়ে দিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের উপর। তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের উপর। প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা আমি কোথায় পাবো? আমি কি টাকা তৈরি করি? ট্রাস্টি বোর্ড টাকা না দিলে আমার কিছু করার নেই।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৩ দিনের আল্টিমেটামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘নো কমেন্টস’। বার কাউন্সিলের নিয়ম ভঙ্গ করে প্রতি ব্যাচে ৫০ জনের অধিক শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়েও তিনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে প্রধান অভিযুক্ত ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের প্রধান হুমায়ূন কবিরের মুঠোফোনে কল দিলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের মুখোমুখি না হতে তিনি সিলেট ত্যাগ করে ঢাকায় অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তার কক্ষ তালাবদ্ধ।