আজ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড স্বপ্নের ফাইনাল

5

স্পোর্টস ডেস্ক :
ড্রিম ফাইনাল বুঝি একেই বলে। একদিকে বার বার স্বপ্নভঙ্গের বেদনা, একের পর এক ফাইনালে উঠেও নিউজিল্যান্ডের শিরোপার সেই চির-আক্ষেপ। অন্যদিকে ওয়ানডেতে রেকর্ড পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ানদের ছোট্ট ফরমেটের টি২০ বিশ^কাপ ক্রিকেটে না পাওয়ার বেদনা। দুই দলকে যেন এক বিন্দুতে মিলিয়ে দিয়েছে। কাকতালীয় দুটি দলই অনেকটা হিসাবের বাইরে থেকে সুপার টুয়েলভে সমান এক হার ও চার জয়ে সেমিতে উঠে আসে। সেখানে হট ফেবারিট ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবার ফাইনালের মঞ্চে পা রাখে কিউইরা। আর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে উড়তে থাকা পাকিস্তানের জয়যাত্রা থামিয়ে দেয় অসিরা। ২০১০-এ ইংলিশদের কাছে শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার কষ্ট ঘোচাতে মরিয়া এ্যারন ফিঞ্চের দল। ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল স্টার্করা টগবগ করে ফুটছেন। বিপরীতে আইসিসির টানা চারটি বৈষয়িক আসরের ফাইনালে জায়গা করে নেয়া ব্ল্যাক-ক্যাপসরাও এবার আর সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না। কেন উইলিয়ামসনদের লক্ষ্য একটাই। শিরোপা। সামর্থ্যরে শেষ বিন্দু নিংড়ে দিতে প্রস্তুত ট্রেন্ট বোল্ট, মার্টিন গাপটিল, জিমি নিশামরা। তাসমান সাগড়ের দুই পাড়ের দুই ক্রিকেট পরাশক্তির লড়াই ঘিরে বিশ^ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় রাত আটটায়।
অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক এ্যারন ফিঞ্চ বলেন, ‘এটি ফাইনাল ম্যাচ। আর প্রতিপক্ষ হিসেবে নিউজিল্যান্ড বেশ ক্যালকুলেটিভ। তারা অনেক পরিকল্পনা নিয়ে খেলতে নামবে। আমাদের সেভাবেই প্রস্তুত থাকতে হবে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ফাইনাল জিততে হবে এবং প্রথমবারের মতো শিরোপার স্বাদ নিতে হবে।’ অভিন্ন লক্ষ্য কেন উইলিয়ামসনেরও, ‘ওয়ানডে বিশ্বকাপে শেষ দুই আসরেই আমাদের ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু টি২০ বিশ্বকাপে এই প্রথম। শিরোপা জিতে এই প্রথমকে স্মরণীয় করতে চাই। অস্ট্রেলিয়া অত্যন্ত শক্তিশালী, ওদের বিপক্ষে জিততে হলে, তিন বিভাগেই আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। ম্যাচের শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত সেটি ধরে রাখতে হবে। আমরা প্রস্তুত।’ ২০১০ সালে একবারই ফাইনালে উঠে ইংল্যান্ডের কাছে ৭ উইকেটে হারের বেদনায় পুড়তে হয়েছিল মাইকেল ক্লার্কদের। এছাড়া ২০০৭ প্রথম এবং ২০১২ সালের চতুর্থ আসরে সেমিফাইনাল খেলে অসিরা। অন্যদিকে ২০০৭ এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালে সেমিতে খেলা নিউজিল্যান্ডের এটিই প্রথম ফাইনাল। অর্থাৎ ছোট্ট ফরমেটের সপ্তম বিশ^কাপে এসে নতুন চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছে টি২০ ক্রিকেট। সাম্প্রতিক সময়ে নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার চেয়েও ভাল ক্রিকেট খেলছে। এ নিয়ে আইসিসিরি টানা চারটি আসরের ফাইনালে কিউইরা। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ^কাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে এবং সর্বশেষ ২০১৯-এর ফাইনালে ইংল্যান্ডের সঙ্গে অবিস্মরণীয় সেই টাই ম্যাচে বাউন্ডারি সংখ্যায় কপাল পুড়েছিল ব্ল্যাক ক্যাপসদের।
এবারের টি২০ বিশ^কাপে ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ডের মতো এতটা ফেবারিট ছিল না অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। কেমন ছিল দল দুটির পথচলা? অসিদের শুরুটা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫ উইকেটে হারিয়ে। দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফিঞ্চদের জয় ৭ উইকেটে। তৃতীয় ম্যাচে এসে হোঁচট খায় অস্ট্রেলিয়া। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হেরে যায় ফিঞ্চ, ওয়ার্নাররা। বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে আবারও জয়ে ফেরা। সমান চারটি করে জয় সত্ত্বে¡ও নেট রান রেটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে পেছনে ফেলে গ্রুপ-১এর দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিতে উঠে আসে অসিরা। সেমিইনালে তো পাকিস্তানের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে পায় ৫ উইকেটের নাটকীয় জয়। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ব্যাটে-বলে দারুণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল স্টার্ক, এ্যাডাম জাম্পারা। পাকিস্তানের বিপক্ষে রুদ্ধশ^াস দ্বিতীয় সেমিতে ৩০ বলে ৩ চার ও সমান ছক্কায় ৪৯ রানের দারুণ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ওয়ার্নার। ন্যাটা ওপেনার আসরে ৬ ম্যাচে ৪৭.২১০ গড়ে করেছেন ২৩৬ রান। স্ট্রাইক রেট ১৪৮.৪২। দুই ফিফটিতে ইনিংসে সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ৮৯। পাকিদের স্বপ্নগুঁড়িয়ে দেয়ার পথে ১৭ বলে অপরাজিত ৪১ রানের ইনিংসে ২ চারের বিপরীতে ৪টি ছক্কা হাঁকিয়ে বাজিমাত করেন ম্যাথু ওয়েড। অসি পেসার মিচেল স্টার্কও ফাইনালে কিউই ব্যাটিং শিবিরে ধস নামাতে প্রস্তুত। আসরে তার উইকেট ৯টি। লেগস্পিনার এ্যাডাম জাম্পা ৬ ম্যাচে নিয়েছেন ১২ উইকেট।
সুপার টুয়েলভে উইলিয়ামসনদের শুরুটা হয়েছিল পাকিস্তানের কাছে ৫ উইকেটের হার দিয়ে। বিরাট কোহলির ভারতকে ৮ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে জয়ে ফেরে তারা। পরের তিন ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের শিকার স্কটল্যান্ড, নামিবিয়া ও আফগানিস্তান। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে হারের শোধ নেয় তারা। লক্ষ্য এখন দুবাই জয়। ওপেনার গাপটিল ১৩১.৩৮ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১৮০ রান। এই ওপেনার চলতি বিশ্বকাপেই আন্তর্জাতিক টি২০তে ৩ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। আসরে এখন পর্যন্ত ৮টি ছক্কা মেরেছেন। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৬ বলে ৯৩ রান করেছেন এই ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম সেমিতে কিউই অলরাউন্ডার জিমি নিশামের চোখ ধাঁধানো ব্যাটিংয়ে স্বপ্নের ফাইনালে পা রাখে ব্ল্যাক-ক্যাপসরা। ড্যারিল মিচেল ৬ ম্যাচে করেছেন ১৯৭ রান। তার স্ট্রাইক রেট ১৪০.৭১। পেসার ট্রেন্ট বোল্টও আছেন দারুণ ফর্মে। ৬ ম্যাচের তার উইকেট ১১টি। তবে সেমিফাইনালে ৪৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে আউট হওয়ার পর ব্যাটে ঘুষি মেরে আঘাত পাওয়া ডেভন কনওয়ের ফাইনালে খেলা হচ্ছে না। পরিবর্তে আজ নিউইজল্যান্ডের উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব সামলাবেন টিম সেইফার্ট। সুপার টুয়েলভে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ম্যাচই কেবল খেলেছেন তিনি। এবারের আসরে টস একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে। দুবাইয়ে তো সেটি আরও বেশি সত্যি। এখানে চলতি টি২০ বিশ^কাপের ১২ ম্যাচের ১১টিতেই জিতেছে পরে ব্যাটিং করা দল।