নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ দিশেহারা

7

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীতে নিত্যপণ্যের জিনিসপত্রের দামে বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সপ্তাহের ব্যবধানে আদা, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচ, আলু, তেল, আটা-ময়দা, পাউডার দুধসহ বেড়েছে বেশ কিছু পণ্যের দাম। পণ্য পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। পণ্যের বাজারমূল্য সরকারি হিসাবের সঙ্গে মিলছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় শ্রমিকদের মজুরিও বেশি দিতে হচ্ছে।
শনিবার ১৩ নভেম্বর নগরীর পাইকারি বাজারে সরু চাল বিক্রি হয়েছে ৫২ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। সরকারি প্রতিষ্ঠান কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে খুচরা বাজারে এর যৌক্তিক মূল্য হবে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। টিসিবির বাজারদরের হিসাবে খুচরা বাজারে ৫৮ টাকার নিচে কোনো সরু চাল পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ সর্বনিম্ন দামের সরু চাল কেজিপ্রতি তিন টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারিতে গতকাল মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৪১ থেকে ৪৩ টাকা কেজি। কৃষি বিপণনের হিসাবে মোটা চালের খুচরা মূল্য হবে ৪৩ থেকে ৪৬ টাকা কেজি।
খুচরা বাজারে মোটা চাল কিনতে লাগছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা। চাল গত সপ্তাহেও এই দামে বিক্রি হয়েছে। অথচ এরই মধ্যে আমনের মৌসুম শুরু হয়েছে। বাজারে চালের কোনো ঘাটতি নেই। সে হিসাবে দাম কমার কথা। মির্জাজাঙ্গাল এলাকার অনিমা মিনি সুপার স্টোরের পার্থ জানান, জ্বালানী তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। অনেক পণ্যের গায়ের মূল্য বেড়েছে আবার অনেক পণ্যের ক্রয় পর্যায়ে বেড়েছে। যার কারণে অনেক পণ্য বেশি দাম দিয়ে কিনে কম মুনাফায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে তেলের দাম। লিটার প্রতি ৫ টাকা বেড়েছে সরকারি ভাবে। গত সপ্তাহে সয়াবিন তেলের সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি লিটার ১৪০ টাকা, বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়। এ সপ্তাহে তা আরো ৫ থেকে ১০ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। খুচরা বাজারে তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা, পাম সুপার তেলের সরকার নির্ধারিত দাম ১১৮ টাকা, খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৩৮ টাকা। নগরীর পাইকারী বাজার কালীঘাটে ছোট ও বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯২ টাকা কেজি। সরকারি হিসাবে মসুর ডালের খুচরা মূল্য হওয়ার কথা ৮৬ থেকে ৯৯ টাকা, আর বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। খুচরা বাজারে খোলা চিনির সরকার নির্ধারিত মূল্য সর্বোচ্চ ৭৪ টাকা কেজি, আর বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা ময়দার দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে। ৪৫ টাকা কেজির ময়দা এখন ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি।
এদিকে আটা, ময়দা, চিনি ও তেলের দাম বাড়ায় বেড়েছে বেকারীতে তৈরি পণ্যের দাম। বিস্কুট, কেইক ব্রেডের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
এদিকে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর যে কয়টি পণ্যের দাম বেড়েছে, এর মধ্যে অন্যতম হলো পেঁয়াজ। ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হওয়া আমদানির পেঁয়াজ এখন ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ ৫২ টাকায়ও পাওয়া গিয়েছিল। কৃষি বিপণনের হিসাবে দেশি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য হবে ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা কেজি।
আমদানি পেঁয়াজ হবে ৩৯ থেকে ৪৫ টাকা। সে হিসাবে ছয় থেকে আট টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। পেঁয়াজের মতো কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে দেশি নতুন আদার দাম, ১০ টাকা বেড়েছে আমদানির হলুদে ও ১০ টাকা শুকনা মরিচে। এদিকে, পাউডার দুধের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। মার্কস দুধ কেজি সাড়ে ৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ও ডানো দুধ বিক্রি হচ্ছে ১১শ’ টাকা কেজি।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে, বাজারে আলুর খুচরা মূল্য হবে ১৮ টাকা, কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি।
নগরীর বিভিন্ন বাজারে শীতের সবজি উঠতে শুরু করেছে। নতুন সবজি আর পরিবহন ব্যয় বেড়েছে এই সুযোগে মুনাফা কামিয়ে নিচ্ছে কিছু মধ্যস্বত্বভোগী ও ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে বাজারে শিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। প্রতি কেজি ঢেঁড়শ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। পটল, বরবটি, ফুলকপি ও বাঁধাকপির দামে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কোনও পরিবর্তন আসেনি। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। বরবটির কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। ফুলকপির পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং বাঁধাকপির পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ঝিঙের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। মুলার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এলাকাভেদে ছোট ছোট লাল শাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা, মুলা শাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা। পালং শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে।