ফ্রান্সের আশ্বাস

3

বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা শুধু বাংলাদেশের শরণার্থী নয়। এখন তারা নানা ক্ষেত্রে সমস্যা সঙ্কট সৃষ্টি করছে। আর্থ-সামাজিক সমস্যার পাশাপাশি তারা এখন আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বার বার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও সঙ্কট নিরসনে আন্তর্জাতিক মহলের তেমন কোন হেলদোল নেই। বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা হচ্ছে, বিষয়টি কেউ কেউ সঙ্কট সমাধানে সহযোগিতার আশ্বাসও দিচ্ছেন। বাস্তবে সঙ্কট সমাধানের তেমন কোন অগ্রগতি নেই। প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে কেউ চুপ থাকছে, আবার কেউ বিপরীত দিকেও অবস্থান নিচ্ছে। কোন কোন দেশ কথা বললেও তা এত অস্পষ্ট যে, কার্যকর কোন ফল বয়ে আনছে না। উপরন্তু রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশের কোন কোন সিদ্ধান্তে বাগড়া দেয়ার চেষ্টা করছে কোন কোন আন্তর্জাতিক মহল। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ফোরাম জাতিসংঘে এই সঙ্কট সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি শুধু সঙ্কট তুলে ধরেই তার দায়িত্ব শেষ করেননি, এর সমাধানে বেশ কিছু সুস্পষ্ট প্রস্তাবও দিয়েছেন। বিষয়টি এখনও আন্তর্জাতিতক বিশ্বের আলোচনার পর্যায়েই রয়ে গেছে। সর্বশেষ তিনি রোহিঙ্গা সঙ্কটকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন প্যারিস শান্তি সম্মেলনে।
ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ স্পষ্ট করে আন্তর্জাতিক মহলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে ফেরাতে না পারলে বাংলাদেশ থেকে নিরাপত্তা ঝুঁকি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’ তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বড় ধরনের আঞ্চলিক সঙ্কট এড়াতে সহায়তা করেছে। তাদের মধ্যে ১০ লাখের বেশি মানুষ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি। এদের দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে বিশ্বকে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে এ সঙ্কট থেকে উদ্ভূত নিরাপত্তা ঝুঁকি শুধু আমাদের সীমান্তে আবদ্ধ থাকবে না। ’
শান্তি সম্মেলন ছাড়াও প্যারিস সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ফ্রান্সের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠককালে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে ফ্রান্সের এই আশ্বাস ইতিবাচক। তারা চাইলে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে একটি পথ তৈরি হতে পারে। চার বছর আগে নিরাপত্তা পরিষদের আরেক স্থায়ী সদস্য যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমার যাতে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করে সেজন্য নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব তুলেছিল। চীন এবং রাশিয়া ওই উদ্যোগ বর্জন করায় বিষয়টি খুব বেশিদূর এগোয়নি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ফ্রান্স আবার এমন একটি উদ্যোগ নিলে তা সফল হতে পারে। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। এখন পর্যন্ত চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। উপরন্তু সৃষ্টি হচ্ছে নিরপত্তাসহ নতুন নতুন সঙ্কট।