ক্ষুদ্রশিল্পে প্রণোদনা প্যাকেজ

3

দেশে করোনার আঘাত আসার পর থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও বিভিন্ন খাতের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে মোট ২৮টি প্যাকেজের আওতায় এক লাখ ৩১ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে এক লাখ তিন হাজার ২৫০ কোটি টাকার ৯টি প্যাকেজ বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্যাকেজের মধ্যে কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং বড় শিল্প ও সেবা খাতে ৩৩ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ অন্যতম। এ দুটি প্যাকেজের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় তিন বছর। প্রথম পর্যায়ের প্যাকেজের মেয়াদ গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। আর গত ১ জুলাই থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্যাকেজ দুটির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে, যার মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত নির্ধারিত।
মহামারী করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা (সিএমএসএমই)। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নানা অজুহাতের কারণে প্রথম পর্যায়ের প্রণোদনা তহবিল থেকে আশানুরূপ ঋণ পাননি এই খাতের উদ্যোক্তারা। দ্বিতীয় পর্যায়ের তহবিল থেকেও তাদের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। এবারও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ বিতরণে বড় ব্যবসায়ীদেরই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, যা প্রত্যাশিত নয়। আরও দুঃখজনক হলো, নারী উদ্যোক্তাদেরও ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে দূরে রাখা হয়েছে। প্রণোদনার অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকের সহযোগিতা ও আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি এমন, বড়দের দিলে দ্রুত দিতে পারবে, কিন্তু ছোটদের দেয়ার ক্ষেত্রে টালবাহানা করতে হবে। সিপিডির গবেষণায় উঠে এসেছে, করোনা প্রণোদনার অর্থ প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের (এসএমই) নারী উদ্যোক্তাদের কাছে কাক্সিক্ষত হারে পৌঁছাচ্ছে না।
আমরা আশা করব যে, আগামী দিনগুলোয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কোন বৈষম্যের শিকার হবেন না। করোনাকালে তাদের দুরবস্থাই সমধিক। একই সঙ্গে নারী উদ্যোক্তাদের প্রণোদনার টাকা ছাড়ের ব্যাপারেও বিশেষ নজর দিতে হবে। প্রণোদনার অর্থ প্রদানের ব্যাপারে ব্যাংকগুলো সম্পর্কে যেসব পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে, যেসব সমালোচনা আছে, সেগুলো উপেক্ষা না করে আমলে নিতে হবে দেশের স্বার্থে। করোনার প্রভাবে বিশ^ অর্তনীতিতে যে ক্রান্তিকাল চলছে, ব্যবসায়ীরা যে বিপন্নতার ভেতরে আছেন, সেখান থেকে উত্তরণের জন্য আন্তরিকতা, সততা ও দক্ষতার সঙ্গে প্রণোদনার অর্থ প্রদান করা হবে বলেই দেশবাসী আশাবাদী।