সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে জড়িতদের কোন ছাড় নয়। কঠোর অবস্থানে সরকার

2

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে হামলাকারী ও অপপ্রচারকারীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে বিচারের সম্মুখীন করা হচ্ছে। পাশাপাশি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত এমন দুই জনের ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনে মনোনয়ন বাতিল করেছে আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে আইন বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, যারা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের হোতা তাদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। তাদেরকে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। বিচারের মাধ্যমে শান্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি সংসদে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার। এদিকে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সারাদেশে ১২৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় আসামির সংখ্যা ২২ হাজার ৩শ’ ৭ জন। আর গ্রেফতার হয়েছে ৯৮৬ জন। পাশাপাশি কঠোর নজরদারিতে আনা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক-ইউটিউব। গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করলেই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
এ প্রসঙ্গে দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা (এ্যাটর্নি জেনারেল) এএম আমিন উদ্দিন বলেছেন ,যারা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের হোতা, যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের কারোরই ছাড় নয়। যেহেতু দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করছে। এদেরকে কোনভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। এদেরকে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। বিচারের মাধ্যমে এদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন, যারা সাম্প্রদায়িক হামলা করেছে তাদের বিষয়ে শক্ত হওয়া উচিত। ইতোমধ্যে সরকার যে এ্যাকশন নিয়েছে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। একটি স্বাধীন দেশে এই ধরনের মন্দির ভাঙ্গা হামলা করা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে আশা করি তাতে হামলাকারীরা সাবধান হয়ে যাবে।
৩১ অক্টোবর পেকুয়ার চেয়ারম্যানসহ ৪ জন চেম্বার জজ আদালতে জামিন পাননি। আপীল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে জামিন চেয়েছিলেন। আপীল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান তাদের জামিন স্থগিত করে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।
ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেছেন, এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে তাদেরকে কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। এরা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সঙ্গে জড়িত। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল বলেছেন, এটা মুক্তিযুদ্ধের সরকার, আওয়ামী লীগের সরকার। এই সরকারের সময় কেউ অন্যায় করে পার পাবে না। সরকার ইতোমধ্যে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি, এই মুহূর্তে সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি সংসদে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার।
সাম্প্রতিক দেশে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে দেশের বিভিন্নস্থানে পূজামণ্ডপ কেন্দ্রিক অপ্রীতিকর ঘটনায় এ পর্যন্ত ১২৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় সারাদেশে ৯৮৬ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ হেডকোয়ার্টার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পাশাপাশি কঠোর নজরদারিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক-ইউটিউব। গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করলেই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে আইন প্রযোগকারী সংস্থা। সংশ্লিষ্ট পোস্ট মুছে ফেলাসহ অপরাধীকে নিয়ে আসছে আইনের আওতায়। র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট তাদের সাইবার নিরাপত্তা আরও জোরদার করছে।
সম্প্রতি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরে মন্দির ও হিন্দুপল্লীতে হামলার ঘটনায় অভিযোগপত্রভুক্ত দুই আসামিকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দেয়া মনোনয়ন বাতিল করেছে আওয়ামী লীগ। এ ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার পর প্রার্থী পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড। এর আগে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহপ্রচার সম্পাদক আবুল হাশেমকে এবং হরিপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখিকে মনোনয়ন দেয়। পরে আবুল হাশেমকে পরিবর্তন করে তার স্থলে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে পুতুল রানী বিশ্বাসকে। আর আতিকুর রহমানকে পরিবর্তন করে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে ওয়াসিম আহমেদকে। এ থেকে বোঝা যায় আওয়ামী লীগ এ সমস্ত ঘটনায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে।