দুই বছর পর বহুল প্রতীক্ষিত স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান শুরু ॥ ৬ মাসে দেয়া হবে সাড়ে ১২ লাখ

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বহুল প্রতীক্ষিত স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান শুরু হয়েছে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা এই ড্রাইভিং লাইসেন্স বিতরণের প্রথম দিনেই সোমবার ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল সেবাদাতা ও গ্রহীতার মাঝে। ঝুলে থাকা ১২ লাখ ৪৫ হাজার স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে পেরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)ও বেশ সন্তুষ্ট। বিআরটিএ-এর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, সোমবার থেকে নতুন করে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে লাইসেন্স হাতে পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক দিন। এটা সত্যিই একটা চ্যালেঞ্জিং কাজ। এজন্য গ্রাহকদের অনেক সমালোচনা ও ক্ষোভ হজম করতে হয়েছে। আমরা ধৈর্যের সঙ্গে তা মোকাবেলা করে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এই শুভ মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিলাম। আশা করছি আগামী ৬ মাসের মধ্যেই ঝুলে থাকা সবগুলো স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স বিতরণ করতে সক্ষম হবো। একইসঙ্গে পাশাপাশি নতুন আবেদনগুলোও সমানতালে বিতরণ করা হবে। এতে করে গ্রাহকদের চাহিদাও স্বাভাবিক গতিতে চলতে থাকবে।
সোমবার বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাপা হলে আবেদনকারী চালককে এসএমএসের মাধ্যমে সংগ্রহের তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে। একইসঙ্গে প্রিন্ট হওয়া লাইসেন্স কার্ড প্যাকেজিং করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলা সার্কেল অফিসে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। যারা যে অফিসে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন সেই অফিস থেকে লাইসেন্স পাবেন। বর্তমানে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের ৫৪টি মাঠ পর্যায়ের অফিস রয়েছে, যার অধীনে মোট ৭০টি সার্ভিস ডেলিভারি আউটলেট রয়েছে। এসব সার্ভিস ডেলিভারি আউটলেট থেকেই ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করা হবে। লাইসেন্স প্রস্তুত হয়ে বিভিন্ন জেলায় সার্ভিস ডেলিভারি আউটলেটে পৌঁছাতে এবং আবেদনকারীদের হাতে পৌঁছে দিতে আরও তিন চার দিন সময় লেগে যাবে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে পেন্ডিং সব লাইসেন্স দেয়া শেষ করবে বিআরটিএ। করোনার মধ্যে শুধু আঙ্গুলের ছাপ না নেয়ায় কমপক্ষে ছয় লাখ আবেদনকারী বিপাকে পড়েছিলেন। এ সমস্যার সুরাহা করতে উদ্যোগ নেয় বিআরটিএ। সম্প্রতি রাজধানীর পল্লবীতে স্থাপিত এনরোলমেন্ট স্টেশনে আবেদনকারীদের আঙ্গুলের ছাপ নেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়।
এ বিষয়ে বিআরটিএর পরিচালক শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেছিলেন আটকে থাকা সব ড্রাইভিং লাইসেন্স অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ধাপে ধাপে সরবরাহ করতে পারব। সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। গত ২৯ আগস্ট বিএমটিএফের সঙ্গে বিআরটিএর এ সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি হচ্ছে। এটা অবশ্যই স্বস্তিদায়ক।
এদিকে বিআরটিএ- রাজধানীর সব কটি কেন্দ্রে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল সিস্টেম চালু করাসহ সেবার আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারের সার্বিক নির্দেশনা ও তদারকিতে চলছে গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করার কাজ। যেখানেই অভিযোগ পাচ্ছেন সেখানেই ত্বরিত ব্যবস্থা নিয়ে বিআরটিএকে সত্যিকার অর্থেই জনগণের কল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার দৃঢ় প্রত্যয়ে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, গত দুই বছর ধরে বিআরটিএ জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করতে পারছিল না। অন্তর্র্বতীকালীন প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ মোটরযান চালানোর অস্থায়ী অনুমতিপত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন চালকরা। লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছিলেন না ১২ লাখ ৪৫ হাজার গাড়িচালক। এ অবস্থায় নতুন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্স দিচ্ছে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স। গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করার কথা ছিল প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি দুই দফায় সময় বাড়িয়ে নেয়। এখন অবশ্য প্রতিদিন পল্লবীতে প্রতিষ্ঠানটির স্থাপন করা এনরোলমেন্ট স্টেশনে প্রতি কার্য দিবসে গড়ে প্রায় এক হাজার আবেদনকারীর আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করে লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে। সব ধরনের পরীক্ষায় পাস করেও অধিকাংশ লাইসেন্সপ্রত্যাশী দুই বছর ধরে অপেক্ষা করছেন। প্রয়োজনীয় ফি, ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার পরও স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স তারা পাচ্ছিলেন না। তবে সোমবার থেকে এ সমস্যার সমাধানের আশা দেখছেন লাইসেন্সপ্রত্যাশীরা।