মানসিক স্বাস্থ্য সেবার উন্নত হোক

15

সুখী ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্য অপরিহার্য। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাই পারে একটি জাতিকে দ্রুত উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে। নানা ধরনের বৈষম্য, বঞ্চনা এবং পারিপার্শ্বিকতায় মানুষ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনা পরিস্থিতি। এর বাইরে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত নানা সঙ্কট বিশ্বের মানবজাতির মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনে ১৬ শতাংশ মানুষ বিষাদগ্রস্ত। মোট জনসংখ্যার ৬ শতাংশ ভোগে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। মনোজগতের সুস্থতা কামনায় রবিবার পালিত হয়েছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘অসম বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য।’ পরিবর্তিত বিশ্বের বাস্তবতায় ১৯৯২ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে দিনটি।
এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় থেকেই বোঝা যায় মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের মূল কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য। এর বাইরে রয়েছে বর্ণ, জাতি এবং লিঙ্গবৈষম্য। উন্নত রাষ্ট্রের সঙ্গে দরিদ্র রাষ্ট্র কিংবা উন্নত সমাজের সঙ্গে অনুন্নত সমাজের বৈষম্য জাতিগতভাবে মানসিক অসুস্থতা বৃদ্ধি করছে। এবার করোনা প্রতিরোধ প্রক্রিয়ায় দেখা গেছে, টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ধনী রাষ্ট্রগুলো অনেকটা একতরফা সুবিধা পাচ্ছে। এসব রাষ্ট্র যখন তাদের নাগরিকদের দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়ার পর তৃতীয় ডোজের (বুস্টার ডোজ) চিন্তা করছে তখন অনুন্নত অনেক দেশের অধিকাংশ লোকই টিকা পায়নি। এই বঞ্চনা স্বাভাবিকভাবেই মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এর বাইরেও ব্যক্তিগত বঞ্চনা, হতাশা এবং পারিপার্র্শ্বিকতায় বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী আক্রান্ত হচ্ছে মানসিক রোগে।
আমাদের দেশেও এই চিত্র খুব একটা সুখকর নয়। ১৮ কোটি মানুষের মানসিক সমস্যার চিকিৎসার জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মাত্র ২৬০ জন। সরকারী হাসপাতালে বেড আছে ৮১৩টি। বর্তমানে আমেরিকায় প্রতি লাখে আছে ১৪ জন মনোচিকিৎসক। ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে প্রতি লাখে ২০ জন। সুইজারল্যান্ডে প্রতিলাখে ৫১ জন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বেশিরভাগই থাকেন ঢাকায়। ৬৪ জেলার হাসপাতালগুলোতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০১ সালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে প্রতিষ্ঠা করেছিল ‘জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।’ ২০১৮ সালে প্রণয়ন করেছে ‘মানসিক স্বাস্থ্য আইন’। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণের দোরগোড়ায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে এই খাতে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে।