শিক্ষার্থীদের বরণ করতে প্রস্তুত নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, স্কুল ড্রেসের দোকানে ভিড়

13
আজ থেকে খুলছে স্কুল। এরই মধ্যে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। দুরত্ব বজায় রাখতে দাগ দেয়া হয়েছে বেঞ্চে। ছবিটি নগরীর বন্দরবাজার এলাকার কিন্ডারগার্টেন প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তোলা। ছবি- মামুন হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার :
মহামারি নোভেল করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় দেড় বছর পর আজ রবিবার ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও খুলছে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠান। সরকারের তরফ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেয়ার পর নানা আয়োজনে শিক্ষার্থীদের বরণের প্রস্তুতি নিয়েছে সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি ক্লাসরুম সাজানো হয়েছে নানা রঙের কারুকার্য দিয়ে। পাশাপাশি হাত ধোয়ার জন্য বসানো হয়েছে বেসিন। রাখা হয়েছে আইসোলেশন রুম সুবিধাসহ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা পদক্ষেপ। খুলে রাখা হয়েছে প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রও। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ড্রেস কিনতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ভিড় করেছেন বিভিন্ন মার্কেট ও স্কুল ড্রেসের দোকানে। গতকাল শনিবার সিলেট নগরীর বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কয়েকটি স্কুল ড্রেসের রেডিমেট দোকান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
নগরীর জিন্দাবাজারস্থ সরকারি কিন্ডারগার্টেন প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রসময় মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের প্রতিটি কক্ষ বিভিন্ন রকমের রং দিয়ে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি কক্ষে বসার জন্য ব্রেঞ্চিতে সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী আসন বিন্যাস করা হয়েছে। স্যানিটাইজার দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতেও দেখা গেছে। কর্মচারীরা ধোয়া মোছার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ ঝাড়ু দিচ্ছেন, কেউ বেঞ্চ পরিষ্কার করছেন। শিক্ষকরা একে অন্যের সঙ্গে কথা বলে প্রস্তুতিমূলক কাজ করছেন।
সরকারি কিন্ডারগার্টেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমা আক্তার চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাবো। ভালো লাগা কাজ করছে। আমাদের অস্তিত্ব শিক্ষার্থীদের নিয়ে। ওদের এই সুন্দর কচি মুখগুলো দেখবো। ওদের সঙ্গে আমাদের ভাব বিনিময় হবে।
রসময় মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। কাল থেকে আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীদের কাছে পাবো। আশাকরি শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুলে আসবে।
এদিকে দীর্ঘদিন পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার খবরে সিলেটে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা গতকাল শনিবার বিভিন্ন মার্কেট ও স্কুল ড্রেসের দোকানে ভিড় করেন। এসময় দোকানগুলোতে কর্মরতরা ক্রেতাদের সামাল দিতে অনেকটা হিমশিম খেতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীরাও অনেক উৎসাহের সাথে ড্রেস, ইউনিফর্ম, জুতাসহ আনুসাঙ্গিক সামগ্রী কিনতে দেখা যায়। স্কুল ড্রেস কিনতে আসা সেঁজুতি নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনেক দিন পরে স্কুল খুলছে, তাই আগের ড্রেসগুলো পুরাতন হয়ে যাওয়ায় নতুন ড্রেস কিনতে আসছি। নগরীর সমবায় ভবনের স্কুল ড্রেসের দোকানে খছরুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ব্যবসা মন্দা ছিলো, এখন সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় আবার ব্যবসা চাঙ্গা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। ভাইরাসটির বিস্তার রোধে ওই বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর সংক্রমণ পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি না হওয়ায় দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে কয়েক দফা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আজ রবিবার ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান।