জিয়াউর রহমান-এরশাদ-খালেদা জিয়া ওরা স্বাধীনতা চায়নি – প্রধানমন্ত্রী

9
কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভৌগোলিক অবস্থানের সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের একটা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার স্বপ্নের কথা জানিয়ে বলেছেন, সার্বিকভাবে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানটাকে সামনে রেখে সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের একটা কেন্দ্রবিন্দুতে আমরা পরিণত করতে চাই আমাদের দেশটাকে। কক্সবাজার বিমানবন্দর বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় রিফুয়েলিং হাব হিসেবে গড়ে উঠবে, কক্সবাজার হবে সর্বশ্রেষ্ঠ সি-বিচ ও পর্যটন কেন্দ্র এবং অত্যন্ত আধুনিক শহর। যাতে আর্থিকভাবেও আমাদের দেশ অনেক লাভবান হবে।
রবিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে রানওয়ে সমুদ্রে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া এরা কেউই বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের উন্নতিতেও বিশ্বাস করে না। তাই যদি করত তাহলে ১২ বছরের মধ্যে আমরা যেটা করতে পেরেছি, ২১ বছরে তারা তা করতে পারত, কিন্তু করেনি। কারণ তারা করবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট তাঁকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর সেই স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে যায়। যারা পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসে তারা তো অনেক বড় বড় কথা বলেই এসেছিল। জাতির পিতার প্রতি কুৎসা রটনা করেছিল এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সব চেতনাগুলো নষ্ট করেছিল। তারা তো দেশের উন্নয়ন কাজ করেনি। কারণ তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করত না।
প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো সমুদ্রের ওপর নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন রানওয়ে। সাগরবক্ষে বিস্তৃত হওয়ার পর কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ১০ হাজার ৭শ’ ফুট। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের কিছু অংশ ভরাট করে সেখানে নির্মাণ করা হবে রানওয়ে। এরপর সমুদ্র ছুঁয়ে আকাশে ওঠা-নামা করবে বিমান।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিএএবি)’র চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন। অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এভিয়েশন অগ্রগতি সম্পর্কিত কর্মকা- নিয়ে একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ১ হাজার ৫৬৮ দশমিক ৮৬ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি ২০২৪ সালের মে মাসে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এর আগেই এটি সম্পন্ন করা হবে এবং নিজস্ব অর্থায়নে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। ২০১৮ সালের ৪ নবেম্বর সরকার প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক এই বিমানবন্দরের রানওয়ে হবে ১০ হাজার ৭০০ ফুট, যার ১ হাজার ৩০০ ফুট থাকবে সাগরের বুকে।
প্রকল্পের কাজ শেষ হলে কক্সবাজার বিমানবন্দর হবে বিশ্বের সাগর উপকূলে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন বিমান বন্দরগুলোর অন্যতম এবং এটিই হবে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে। এর ফলে বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহন ক্ষমতাও বাড়বে। বাড়বে ফ্লাইট অপারেশনের সংখ্যা। ভবিষ্যতে কক্সবাজার সংলগ্ন মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্সগুলোর বড় বড় উড়োজাহাজও অবতরণ করতে পারবে কক্সবাজারে। আগামী ৫০ বছরের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে এই প্রকল্প।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা একটা স্বপ্ন নিয়েই এই দেশকে গড়তে চেয়েছিলেন। তাঁর স্বাধীনতা অর্জনের পেছনের লক্ষ্যই ছিল বাংলাদেশটা উন্নত, সমৃদ্ধ হবে এবং বিশ্বের বুকে মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর মাত্র সাড়ে ৩ বছর তিনি সময় পেয়েছিলেন। হাতে সময় ছিল না, সময়ই দেয়নি। কিন্তু এই সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে একটা স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন এবং মার্শাল ল জারি করে একের পর এক ছিল ক্ষমতা দখলের পালা। ২১টা বছর এদেশের মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে যায়।
তিনি বলেন, এই ২১টা বছর এদেশের মানুষের জীবনের কোন উন্নয়নের দিকে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা তাকায়নি। ক্ষমতা তাদের কাছে ভোগের বস্তু ছিল, লুটপাটের জায়গা ছিল। নিজেদের আখের গোছানোর জায়গা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ যে অবহেলিত, সেই অবহেলিতই থেকে যায়। বাংলাদেশে যতটুকু উন্নয়ন জাতির পিতা করে গিয়েছিলেন তার থেকেও পেছনে নিয়ে যাওয়া হয়। দেশের উন্নয়নে জাতির পিতার নেয়া নানা পদক্ষেপ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা গ্রহণের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারপ্রধান বলেন, অনেক চিন্তা ও পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে এবং কক্সবাজার নিয়ে তো আরও বেশি। কক্সবাজার হবে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সি-বিচ ও পর্যটন কেন্দ্র এবং অত্যন্ত আধুনিক শহর। সেইভাবে পুরো কক্সবাজারটাকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ করব। তিনি বলেন, এই বিমানবন্দর সম্প্রসারণ হলে পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে বা প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে, যত প্লেন যাবে তাদের রিফুয়েলিংয়ের জন্য সব থেকে সুবিধাজনক জায়গা হবে এই কক্সবাজার।
তিনি বলেন, একেক সময় পৃথিবীর একেকটি জায়গা উঠে আসে। এক সময় হংকং তারপর সিঙ্গাপুর, ব্যাঙ্কক এখন দুবাই। কিন্তু আমি বলতে পারি যে, ভবিষ্যতে কক্সবাজারটাই হবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। কেননা, খুব স্বল্প সময়ে এখানে বিমান এসে নামতে এবং রিফুয়েলিং করে চলে যেতে পারবে। এই রানওয়ে সম্প্রসারণের মাধ্যমে আমি মনে করি, আমরা যে ওয়াদা জনগণের কাছে দিয়েছিলাম, সেটা আরও একটা ধাপ আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে এই যে জলভাগের ওপর আমরা একটা রানওয়ে নির্মাণ করছি, সেটাও দৃষ্টিনন্দন হবে এবং অনেকে এটাই দেখতে যাবে। তিনি জলভাগের ওপর এই রানওয়ে নির্মাণের সাহস নিয়ে কাজ শুরু করতে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, তাঁর সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশকে নিয়ে জাতির পিতার যে স্বপ্ন ছিল সেই স্বপ্ন যেন আমরা পূরণ করতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করে বলেন, আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে রূপকল্প ঘোষণা করেছিলাম ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে, সেখানে আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। এটাকে ধরে রেখে আমাদের উন্নত দেশের পথে এগিয়ে যেতে হবে এবং ইনশাআল্লাহ আমরা সেটা করতে পারব।
বাংলাদেশ থেকে যেসব আন্তর্জাতিক রুটে বিমান যাচ্ছে তার পাশাপাশি আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক রুট চালুর প্রচেষ্টা চলছে জানিয়ে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিউইয়র্ক, টরন্টো, সিডনির মতো দূরত্বে চলার মতো আমাদের ড্রিমলাইনার ও অন্যান্য বিমান আছে। বিশেষ করে আমাদের দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়াতে হবে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শুধু পশ্চিমাদের দিকে মুখ করে থাকব না। পাশাপাশি, আমরা অন্যান্য যেসব বন্ধুপ্রতিম দেশ আছে সেখানে আমাদের বিমান যাতে যায় ভবিষ্যতে সেই চেষ্টা করব। সরকার দেশের প্রত্যেকটা বিমানবন্দরের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি মনে করি, আমাদের আরও বেশি কাজ করা দরকার।
সৈয়দপুর বিমানবন্দরটাকেও তাঁর সরকার উন্নত করতে চাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে যেন উন্নত হয় যাতে ভুটান, নেপাল বা ভারতের কয়েকটা রাজ্য এই বিমানবন্দরটা ব্যবহার করতে পারে। সেভাবে এটাকে একটা আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে আমরা উন্নত করতে চাই। আর সিলেট সেটা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সেখানেও মেঘালয়, অসম বা ভারতের অনেক রাজ্য থেকেও তারা আমাদের এই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরটাও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সেখানেও ত্রিপুরা থেকে শুরু করে ভারতের অনেক প্রদেশ এটা ব্যবহার করতে পারে। সেভাবে একটা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা তৈরি করা এবং সেভাবে উন্নত করা সেই চিন্তা আমাদের মাথায় রয়েছে।
বিমানের কর্মকর্তাদের কর্তব্যনিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, সততার সঙ্গে, দক্ষতার সঙ্গে এটা (বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স) পরিচালনা করবেন। সিভিল এভিয়েশন নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সবকিছু যাতে আন্তর্জাতিক মানের হয় সেটা আপনারা দেখবেন। বিগত সাড়ে বারো বছরে বোয়িং কোম্পানির ড্রিমলাইনারসহ মোট ১৬টি অত্যাধুনিক বিমান যুক্ত করেছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ৪টি বোয়িং-৭৭৭, ২টি বোয়িং-৭৩৭ ও ৪টি বোয়িং-৭৮৭-৮, ২টি বোয়িং-৭৮৭-৯ ও ৪টি ড্যাশ-৮।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করে বলেন, আমরা রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল বিমানবন্দরকেও উন্নত করব। ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ, নতুন রাডার স্থাপন ও জেট ফুয়েল সরবরাহ করার জন্য পাইপলাইন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করব। কক্সবাজারকে সুপরিসর বিমান অবতরণে সক্ষম দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করব।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ এবং ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এ কাজ তাঁর সরকার সম্পন্ন করতে পারবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বলতেন বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানটা এমন যে, বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। অর্থাৎ প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মধ্যে একটা সেতুবন্ধ এই বাংলাদেশ রচনা করতে পারে। সেই সুযোগটা আমাদের রয়েছে। কারণ, ইন্টারন্যাশনাল এয়ার রুট বাংলাদেশের ওপর দিয়ে, কক্সবাজারের ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
কক্সবাজারকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধন হিসেবে গড়ে তুলতে এখানে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা করা তাঁর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ লক্ষ্যে এই বিমানবন্দরকে সুপরিসর বিমান চলাচল উপযোগী আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্দেশ্যে রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে ৯ হাজার ফুটে বর্ধিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে এই বিমানবন্দরের রানওয়েকে মহেশখালী চ্যানেলের দিকে আরও ১ হাজার ৭০০ ফুট বর্ধিত করার লক্ষ্যে পেভমেন্ট, এয়ারফিল্ডলাইটিং সিস্টেম, জিওমেট্রিক ও স্ট্রাকচারাল ডিজাইন, ড্রইং ও ডকুমেন্ট প্রণয়ন করা হয়েছে।
কক্সবাজার জাতির পিতার খুব প্রিয় জায়গা ছিল এবং তিনি কারাগারে না থাকলে প্রতি বছর সেখানে পরিবার নিয়ে একবার হলেও যেতেন এবং সেখানকার ঝাউবন জাতির পিতারই পরিকল্পনা বলেও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন। জাতির পিতা ১৯৭২ সালেই সকল বিমানবন্দর পুনর্গঠন করে চলাচলের উপযোগী করে তুলেছিলেন এবং ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স’ প্রতিষ্ঠা করেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এভাবেই তিনি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তুলেছিলেন। একইসঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনর্স্থাপিত করতে পেরেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। নেদারল্যান্ডস, আফগানিস্তান, রাশিয়া ও যুগোশ্লাভিয়ার সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বিমান চলাচল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দেশ পরিচালনার জন্য জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এর মধ্যেই তিনি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন। অথচ এরপর ২১ বছর বাংলাদেশের কোন উন্নতি হয়নি। কারণ, যারা ক্ষমতায় ছিল তারা নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত ছিল। জনগণের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন তারা করেনি।
বিমানের এক সময়ের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আকাশ পথে যেতে যেতে পানি পড়ত, এন্টারটেইনমেন্টের কোন ব্যবস্থা ছিল না, ঝড়ঝড়ে ছিল প্লেনগুলো। মান্ধাতার আমলের বিমান চালাতে পারায় তিনি সে সময়কার পাইলটদের দক্ষতার প্রশংসা করে বলেন, আমি আমাদের পাইলটদের বলতাম তাদের আমাদের স্পেশাল পুরস্কার দেয়া উচিত। বিমানে ভ্রমণের সময় অনুমতি নিয়ে শেখ হাসিনা ককপিটে গিয়ে পাইলটদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যার কথাও শুনতেন বলে বক্তব্যে জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রবাসে আমাদের এক কোটির কাছাকাছি মানুষ থাকে। তারা কিন্তু আমাদের নিজস্ব প্লেন পেলে সেটাতেই চড়তে চায়। তাতে যত কষ্টই হোক। বিমানে চড়ার সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা আমার আছে। কিন্তু তারপরও মনে হতো নিজের দেশের জাহাজে যাচ্ছি। এটাই সব থেকে বড় কথা ছিল। অনুষ্ঠানে কক্সবাজারে বিদেশীদের জন্য একটি পৃথক স্পেশাল জোন গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। পাশপাশি করোনা সংক্রমণ মোকাবেলায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথাও আবারও সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বিমানবাহিনী প্রধান শেখ আবদুল হান্নানসহ আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, কক্সবাজারের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, আশেক উল্লাহ রফিক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব) ফোরকান আহমেদ, জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।