আজ শুভ জন্মাষ্টমী

3

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রবক্তা ও প্রাণপুরুষ মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ জন্মতিথি, শুভ জন্মাষ্টমী। দ্বাপর যুগের শেষদিকে এই মহাপূণ্য তিথিতে মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে বন্দী দেবকী ও বাসুদেবের বেদনাহত ক্রোড়ে জন্ম নিয়েছিলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
সনাতন ধর্মানুসারে, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করতেই এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। শান্তিহীন পৃথিবীতে শান্তি আনতেই শান্তিদাতা শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয়গ্রন্থ শ্রীভগবদগীতার উদগাতা শ্রীকৃষ্ণ দ্বাপর যুগের বিশৃঙ্খল ও অবক্ষয়িত মূল্যবোধের সময়ে পৃথিবীতে মানবপ্রেমের অমিত বাণী প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মার মিলনই সেই বাণীর মূল বিষয়। তাই তিনি ভক্ত ও বিশ্বাসীদের কাছে প্রেমাবতার।
ধর্মানুসারে, ঈশ্বরতত্ত্বের মহান প্রতীক হলেন শ্রীকৃষ্ণ। বেদে তিনি ঋষিকৃষ্ণ, দেবতাকৃষ্ণ। মহাভারতে রাজর্ষিকৃষ্ণ, শাসক ও প্রজাপালক কৃষ্ণ, অত্যাচারী দমনে যোদ্ধাকৃষ্ণ। ইতিহাসে যাদবকৃষ্ণ, দর্শনশাস্ত্রে সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ কৃষ্ণ। শ্রীভগবদগীতায় অবতারকৃষ্ণ, দার্শনিক কৃষ্ণ, পুরুষোত্তম কৃষ্ণ, ঈশ্বরায়িত কৃষ্ণ।
ঐতিহাসিকদের বিবেচনায় খ্র্রিষ্টপূর্ব ৯০০-১০০০ সালে সনাতম ধর্মের প্রাণপুরুষ শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। তার জন্মের সময় এই বিশ্বব্রহ্মা- পাপ ও অরাজকতায় পরিপূর্ণ ছিল। তাই মানবজাতিকে রক্ষার জন্য ভগবানে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। নানা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে শ্রীকৃষ্ণ মানবজাতির কাছে জীবন ধারণের অনন্য উদাহরণ রেখে গেছেন। শ্রীকৃষ্ণের বাণী সমগ্র বিশ্বকে আলোড়িত করছে হাজার হাজার বছর ধরে। শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা হলো- সংঘর্ষ ও অন্যায়কে পরাভূত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এই পবিত্র দিনে সকল অকল্যাণ ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে অন্তর আত্মাকে জাগ্রত করার শপথ নিতে হবে।
করোনা সঙ্কটের কারণে এ বছর শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী সারাদেশে সীমিত পরিসরে উদযাপিত হচ্ছে। কোথাও থাকছে না জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা, মিছিল ও সমাবেশ। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মন্দির প্রাঙ্গণে কৃষ্ণপুজোসহ অন্য সব আচারবিধি পালন করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। সারাদেশের বিভিন্ন মন্দির প্রাঙ্গণে অন্যান্য অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে গীতাযজ্ঞ, কীর্ত্তন, আরতি, প্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় আলোচনা সভা প্রভৃতি। আজ সরকারী ছুটি। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারী স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলো বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিছিল বা শোভাযাত্রা নিষেধ থাকলেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে, সামাজিক দূরত্ব অনুসরণ করে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করতে কোন বাধা থাকবে না। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর যেসব বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছিল, তা বহাল আছে। তারই অংশ হিসেবে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সকল প্রকার শোভযাত্রা, র‌্যালি ও মিছিল বন্ধ থাকবে।
শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিন্দু সম্প্রদায়সহ দেশবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে- সকাল ৮টায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞ, দুপুর আড়াইটায় আরোচনা সভা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভার্চুয়ালি আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখবেন।