জিহাদ করতে প্রস্তুত দেশে প্রথম প্রশিক্ষিত তরুণী জঙ্গি নাবিলা গ্রেফতার

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশে প্রথমবারের মতো প্রশিক্ষিত এক তরুণী জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে সিটিটিসি। জোবায়দা সিদ্দিকা নাবিলা (১৯) নামে এই নারী জঙ্গি দেশ ও দেশের বাইরে জিহাদ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। অবিবাহিত তরুণী নাবিলা পড়ালেখার পাশাপাশি আনসার আল ইসলামের যোগাযোগের প্রিয় মাধ্যম টেলিগ্রাম এ্যাকাউন্ট ব্যবহার করত। তার চারটি অনলাইন এ্যাকাউন্টে ১৫টির বেশি চ্যানেল পরিচালনা করে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী সহিংস ভিডিও, অডিও, ছবি ও ফাইল এসব চ্যানেল থেকে প্রচার করত। তার অনুসারীর সংখ্যা অনুমানিক ২৫ হাজার। সে এই অনলাইনের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন কৌশল উগ্রবাদী সহিংস ভিডিও, অডিও এসব চ্যানেলে ব্যবহার করে জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যদের সক্রিয় থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। এমনকি এসব চ্যানেলে আইইডি, স্মোক বম্ব, আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করা এবং বিভিন্ন হামলার কৌশলগত বিষয় নিয়ে ‘ভিডিও ও ফাইল শেয়ার করত। এসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ধীরে ধীরে ওই তরুণী আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ ছড়িয়ে দেয়ার কাজে নারীদের যুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। গ্রেফতারকৃত নাবিলা ৫ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গি হওয়া ও জঙ্গিবাদের প্রচার-প্রচারণার ও সংগঠনের সামরিক শাখার সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল বলে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য দিয়েছে। এদিকে দেশের প্রশিক্ষিত নারী জঙ্গি নাবিলা গ্রেফতারের পরই পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে। নারীরা কি জঙ্গি সংগঠনগুলোতে জড়িয়ে পড়ছে। তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, বহু আলোচিত আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত পলাতক সৈয়দ জিয়াউল হকের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে লেখা কিছু নির্দেশনা হাতে পেয়েছিল পুলিশ। ওই নির্দেশনায় তারিখ দেয়া আছে গত বছরের ২৯ রমজান। সেখানেই প্রথম তিনি ‘ভাই ও বোনেরা’ বলে সম্বোধন করেন। এর আগে নারীদের প্রসঙ্গে একরকম উহ্যই ছিল দলটির সব কাজ কর্মে। জোবায়দা গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত পুলিশের ধারণা ছিল তারা যাকে খুঁজছে, তিনি পুরুষ। প্রশিক্ষিত নারী জঙ্গি নাবিলাকে গ্রেফতারের পর আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে ভাবিয়ে তুলেছে। তাদের ধারণা আনসার আল ইসলাম নারীদের দলে ঢোকাচ্ছে। ইতোমধ্যে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এই সংগঠনে নারী যুক্ত হয়েছে কি না তা নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেছে। সিটিটিসি সূত্র জানায়, অন্য জঙ্গি সংগঠনের নারী সদস্য গ্রেফতার হলেও তারা নাবিলার মতো প্রশিক্ষিত ছিল না। আনসার আল ইসলামের হয়ে মিডিয়া শাখা অর্থাৎ জঙ্গিবাদের প্রচার-প্রচারণার দায়িত্ব পালন করতেন নাবিলা। তার সামরিক শাখার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসির) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের নারী সদস্য নাবিলাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে সিমকার্ড ও মেমোরিকার্ডসহ একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত নাবিলার এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। আনসার আল ইসলামের মিডিয়া শাখায়. অর্থাৎ ‘জঙ্গিবাদের প্রচার প্রচারণার’ দায়িত্ব পালন করতেন নাবিলা। তবে সামরিক শাখার সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল। এমনকি আনসার আল ইসলামের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত নাবিলা জানায়, সে ২০২০ সালের প্রথম দিকে নিজের নাম পরিচয় গোপন করে ছদ্মনামে একটি ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খোলে। এক সময় সে ফেসবুকে আনসার আল ইসলামের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ’তিতুমীর মিডিয়া’র খোঁজ পায়। তখন সে ওই পেজে যুক্ত হয়ে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী ভিডিও, অডিও এবং আর্টিকেল সম্পর্কে ধারণা পায় এবং তাদের মতাদর্শ নিজের ভেতরে লালন করতে শুরু করে। তিতুমীর মিডিয়ার পেজ এ্যাডমিনের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। পরে সেই পেজ এ্যাডমিন তাকে উগ্রবাদী জিহাদী কন্টেন্টসহ আনসার আল ইসলামের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটগুলোর লিংক দেয়। এভাবে ধীরে ধীরে ওই তরুণী আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ ছড়িয়ে দেয়ার কাজে যুক্ত হন। ফেসবুক ও টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ছদ্মনামে একাধিক এ্যাকাউন্ট খুলে সে কাজটি করত বলে কাউন্টার টেররিজম পুলিশের ভাষ্য।