টিকা ও নিরাপত্তা বলয়

13

করোনার বহুল সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি প্রতিষেধক টিকা প্রদানও এক আবশ্যকীয় কর্মযোগ। বাংলাদেশ এই মুহূর্তে করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ভয়াবহতায় নাজেহাল। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরাও চিন্তিত, উদ্বিগ্ন। সঙ্গত কারণেই সিংহভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনা ছাড়া বিকল্প পথ নেই। এই মুহূর্তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা দেশে এনে মানুষকে তার অংশীদার করা সব থেকে বড় দায়বদ্ধতা। সেখানেও বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশ করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর থেকেই। সিংহভাগ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা ছাড়া এই মহামারী নিয়ন্ত্রণ করা দুঃসাধ্য। বাংলাদেশের জনগণ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকেই প্রতিষেধক টিকার আওতায় চলে আসে। সম্মুখ সারির যোদ্ধা থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ মানুষদের টিকা দিতে সারা দেশে এই কর্মসূচীকে সম্প্রসারিত করা বর্তমান সরকারের দৃশ্যমান সফলতা ও বিচক্ষণতা অবশ্যই।
আমরা প্রথমেই ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিতে পেরেছি। ভারতীয় সরকারের উপহার ছাড়াও চুক্তি মোতাবেক টিকা আমাদের দেশে এসেছে। পরবর্তীতে টিকা সঙ্কট দেখা দিলে শুরু হয় বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে সেটি জোগানের ব্যবস্থা করা। ফলে চীন থেকে সিনোফার্ম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মডার্না এবং ফাইজারের টিকা আসে। পরবর্তীতে এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাও আসে জাপান থেকে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা টিকায় কোন ঘাটতি হবে না বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও জোর দিয়ে বলেছেন, বিনামূল্যে ৮০% জনগোষ্ঠীকে এই ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে।
ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে গণটিকাদান কর্মসূচী। নিবন্ধন ছাড়াও জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে টিকা দেয়াকে সহজসাধ্য করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীও টিকা গ্রহণের সুযোগ পেয়ে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন পাহাড়ী জেলা-রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়িতেও টিকাদান কর্মসূচী সম্প্রসারিত করা হয়েছে। টিকা প্রদানে বাংলাদেশের শীর্ষ দশ জেলার মধ্যে পার্বত্য জেলার স্থান তিনে। এটা এক অসামান্য সাফল্য। রোহিঙ্গাদেরও টিকা গ্রহণের তালিকায় নিয়ে এসে তাদেরও এই বৃহৎ শরণার্থী কর্মযোগের টিকার অংশীদার করা হয়েছে। বাংলাদেশ যেভাবে টিকাদান কার্যক্রমকে এগিয়ে নিচ্ছে, অচিরেই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তার সম্প্রসারণ ঘটতেও খুব বেশি সময় লাগবে না। ৮০ শতাংশ মানুষকে প্রতিষেধক টিকা প্রয়োগ করতে পারলে এই ছোঁয়াচে রোগটি প্রতিরোধ করা যেতে পারে। সরকার সফলতার সঙ্গে সেই পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রাসঙ্গিক বিধিনিষেধগুলো জীবনভর মেনে চলতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। অর্থাৎ টিকা নিলেও সতর্ক ও সাবধানতায় নিরাপত্তার বলয় তৈরি করাও আব্যশক।