গণটিকায় সিলেটে ব্যাপক উৎসবের আমেজ, ৩৮১টি বুথে চলছে টিকাদান কার্যক্রম

4
সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সিলেটে গণটিকা কার্যক্রম ভার্চুয়াল মাধ্যমে উদ্বোধন করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি।

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও ব্যাপক উৎসাহের মধ্যদিয়ে মহামারি করোনাভাইরসের (কোভিড-১৯) গণটিকার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সিলেট নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে ৮১টি কেন্দ্রের পাশাপাশি সিলেট জেলা ও মহানগর মিলে মোট ১৮১টি কেন্দ্রের ৩৮১টি বুথে চলে প্রথম দিনের এ টিকাদান কর্মসূচী।
গতকাল শনিবার সকাল ৯ টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৩টা পর্যন্ত একটানা চলে এই টিকাদান কার্যক্রম। এটা চলবে আগামী ৬ দিন পর্যন্ত। এতে জেলায় সিনোফার্মের টিকা ও সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকায় মডার্নার টিকা দেয়া হয়। গতকাল ছিলো প্রতিটি কেন্দ্র দীর্ঘ লাইনের ভোটের আমেজ।
এর আগে গতকাল সকাল ৯টায় সিলেটে গণটিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। নগরীর চৌহাট্টাস্থ রেড ক্রিসেন্ট মাতৃমঙ্গল হাসপাতালে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভার্চুয়াল মাধ্যমে ঢাকা থেকে যুক্ত হয়েছিলেন। তিনি পর্যায়ক্রমে সবাইকে টিকা দেয়া হবে বলে জানান।
সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) সূত্র জানিয়েছে, সিলেট জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৩৮১টি বুথে গণটিকাদান কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে মহানগরীতে ২৭টি ওয়ার্ডে তিনটি করে ৮১টি কেন্দ্র রয়েছে। অন্যদিকে জেলার ১৩টি উপজেলায় ১০০টি কেন্দ্রে তিনটি করে ৩০০টি বুথ রয়েছে। প্রতিটি বুথে গতকাল ৩০০ জনকে টিকা প্রদান করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত বলেন, গতকাল শনিবার থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত সিলেটসহ সারা দেশে গণটিকার কার্যক্রম চলার কথা ছিল। তবে আপাতত শুধু গতকাল শনিবার এ কার্যক্রম চলছে। তবে সিটি করপোরেশন এলাকায় আজ রবিবার ও কাল সোমবার এ দুদিন কার্যক্রম চালানো হতে পারে।
সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম সুমন জানান, প্রতিটি বুথে দুজন করে টিকাদানকর্মী ও তিনজন করে স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। সিসিক এলাকায় আমাদের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২৪ হাজার ২শ জন মানুষকে টিকা প্রদান করা। সাথে টিকা গ্রহণের জন্য স্পট রেজিস্ট্রেশনও চলছে। তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন এলাকায় ৭, ৮ ও ৯ আগস্ট গণটিকাদান কার্যক্রম চালানো যাবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। আমরা আগামী দুদিনও এ কার্যক্রম চালাবো। টিকাদানকেন্দ্র সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চালু রাখা ছিলো। কিন্তু প্রয়োজন হলে আমরা ৪টা, ৫টা অবধি কেন্দ্র খোলা রেখে টিকা দেব। গণটিকাদানের শুরুতে কিছুটা ভুলভ্রান্তি ও অব্যবস্থাপনা হতে পারে মন্তব্য করে ডা. জাহিদ বিষয়টি ‘ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহবান জানিয়েছেন।
ডা. জাহিদুল ইসলাম আরো বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় তিনদিন টিকা দেয়া হবে। প্রথম দিন ২৪ হাজার ২০০ মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। মানুষের মধ্যে টিকা নিয়ে কোন ভয় নেই, তারা স্বত:স্ফূর্তভাবে টিকা দিতে কেন্দ্রে আসছেন। ডা. জাহিদ জানান, রবিবার ও সোমবার ১৬ হাজার ২শ’ করে আরও ৩২ হাজার ৪শ’ মানুষকে টিকা দেয়ার প্রস্তুতি রয়েছে সিটি করপোরেশনের। তিনি জানান, সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকায় দেয়া হচ্ছে মডার্নার টিকা। আর বিভিন্ন উপজেলায় দেয়া হচ্ছে সিনোফার্মের টিকা। মডার্নার প্রতিটি ভায়েলে ৪ থেকে ৬, এমনকি ১২ জনকে দেয়ার মতো টিকা আছে। আর ইউনিয়ন পর্যায়ে সিনোফার্মের যে টিকা দেয়া হচ্ছে, সেটি ডাবল ডোজের টিকা। মানে প্রতিটি ভায়েলে ২ জনকে দেয়ার মতো টিকা আছে। এতে বিভ্রান্তির কোন অবকাশ নেই। তিনি বলেন, টিকা দেয়ার সাথে জড়িতদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারা কোম্পানির নিয়মানুযায়ীই টিকা দিচ্ছেন। তাদের দায়িত্ব পালনে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। ডাক্তার জাহিদ আশা প্রকাশ করেন, টিকাদানের সাথে সংশ্লিষ্টদের সবাই সহযোগীতা করবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় রেখে সবাই টিকা দিতে কেন্দ্রে যাবেন এমনটি প্রত্যাশা করছেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, টিকা নিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের দু’টি ফটো কপি (এনআইডি) ও সচল ফোন নিয়ে কেন্দ্রে যেতে হবে। সেখানে তাৎক্ষণিক নিবন্ধন শেষে টিকা দেয়া হয়।