শেখ মুজিবের বাংলাদেশে প্রত্যেকটি মানুষ সুন্দর ও উন্নত জীবন পাবে ॥ সরকারী কর্মচারী এবং বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট উদ্বোধন ও হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

11
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য ঢাকায় নির্মিত ২৪৭৪টি ফ্ল্যাট সংবলিত ৫টি আবাসন প্রকল্প এবং মাদারীপুরে নির্মিত সমন্বিত অফিস ভবন উদ্বোধন ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের স্ব-অর্থায়নে বস্তিবাসীদের জন্য মিরপুরে নির্মিত ভাড়া ভিত্তিক ৩০০টি ফ্ল্যাট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যেকটি মানুষ সুন্দর ও উন্নত জীবন পাবে উল্লেখ করে বলেছেন, আমাদের সরকারের একটাই চিন্তা, একেবারে তৃণমূলে পড়ে থাকা যে মানুষগুলো তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করা, জীবন মান উন্নত করা এবং তাদের একটু সুন্দর-উন্নত জীবন দেয়া। যে মৌলিক চাহিদার কথা সংবিধানে বলা আছে তা পূরণ করা। জাতির পিতার যে স্বপ্ন সেই স্বপ্ন পূরণ করাটাই একটা দায়িত্ব এবং সেটাই হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নতি। কারণ বঙ্গবন্ধু যেভাবে চিন্তা করেছেন তার থেকে ভাল চিন্তা আর কেউ করতে পারে না। স্থানীয় পর্যায়ে জনগণ যাতে এক জায়গায় সব সরকারী সেবা পেতে পারে, সেজন্য সারা দেশেই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পর্যায়ক্রমে সমন্বিত অফিস নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশাসনের জেলাভিত্তিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এখন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সে কারণে সরকার এমন ব্যবস্থা করতে চায়, যাতে সরকারী কর্মচারীদের কাজের সুবিধা হয়, আবার জনগণও যাতে একবারে এক জায়গায় সব ধরনের সরকারী সেবা পায়। আর বস্তিবাসীরা যারা গ্রামে ফিরে যাবেন সরকারের তরফ থেকে জমি অথবা ঘর, ঋণ দেয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে তাদের ছয় মাসের খাবার বিনামূল্যে দেয়া হবে।
মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ঢাকায় নির্মিত ফ্ল্যাট, বস্তিবাসীদের জন্য মিরপুরে নির্মিত স্বল্প ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট উদ্বোধন ও হস্তান্তর এবং মাদারীপুরে নির্মিত সমন্বিত অফিস ভবনের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আজিমপুর সরকারী কলোনি, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশন, মালিবাগ এবং মতিঝিলে ২ হাজার ৪৭৪টি ফ্ল্যাট সংবলিত ৫টি আবাসন প্রকল্প এবং বস্তিবাসীদের জন্য মিরপুরে নির্মিত ৩০০টি ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট উদ্বোধন ও হস্তান্তর করা হয়। এছাড়া, অনুষ্ঠানে মাদারীপুরে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নির্মিত সমন্বিত অফিস ভবনও উদ্বোধন করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কয়েকজন বস্তিবাসীর মাঝে ফ্লাটের বরাদ্দপত্র হস্তান্তর করেন করেন। প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শহীদ উল্লাহ খন্দকার স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে প্রকল্পগুলোর ওপর ভিডিও চিত্রও পরিবেশিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন বা ঠিকানাহীন থাকবে না- তার সরকারের এই দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, প্রত্যেকের একটা ঠিকানা হবে এবং যারা বস্তিতে বসবাস করছেন তাদের জন্যও একটি সুষ্ঠু আবাসন ব্যবস্থা আমরা করে দেব। আজকে অন্তত তিন শ’টা ফ্ল্যাট থেকে তিনটা পরিবারকে আমরা ফ্ল্যাট হস্তান্তর করছি এবং পর্যায়ক্রমিকভাবে আমরা এই ব্যবস্থাটা নেব। কিন্তু তাদের ভাড়া দিয়ে থাকতে হবে। যতদিন এই ঢাকায় থাকবে তারা ভাড়া দিয়ে থাকবে। আর যারা নিজের গ্রামে ফিরতে চান, যদি কারও জমি না থাকে জমিসহ আমরা ঘর দেব। আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মাধ্যমে আমরা সেটা দিচ্ছি। সেই সঙ্গে ঋণ পাবেন এবং সেখানে কাজ করার সুযোগ পাবেন। প্রয়োজনে ছয় মাসের খাবার আমরা বিনামূল্যে দেব, যাতে ওই ছয় মাসের মধ্যে নিজে একটা কাজ করে চলতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের ভিটামাটি আছে তাদেরও ঘর করে দেয়া হবে, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। সেই ঘরে ফেরা কর্মসূচীটা আবার আমি ভালভাবে চালু করব। বস্তিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে না থেকে নিজের গ্রামে ফিরে গেলে এই সুবিধাগুলো পাবেন। প্রথমবার সরকার গঠনের পর বস্তির শিশুদের গণভবনে ডেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, পরবর্তীতে বস্তিবাসী যারা নিজেদের গ্রামে ফিরে যেতে চান তাদের জন্য কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছিল।
বস্তির অস্বাভাবিক ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কথা তুলে ধরে বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট করার উদ্দেশ্যও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, নানাভাবেই এখানে (বস্তি) একটা অস্বাভাবিক পরিবেশ থাকে। সেই জায়গা থেকে মানুষগুলোকে মুক্ত করা, একটা সুন্দর পরিবেশে বসবাস করা, নিজের জীবন জীবিকা চালানো। ফ্ল্যাটে মাসে ভাড়া দিয়ে দিতে পারবেন, সপ্তাহে যারা কামাই করে ভাড়া দেয় তারাও পারবে বা প্রতিদিনের ভাড়া হিসেবে যদি কেউ নিতে চায় সেভাবেও নিতে পারবে। সেভাবে আমরা এই ফ্ল্যাটগুলো তৈরি করে দিচ্ছি যাতে একটা সুস্থ পরিবেশে সবাই থাকবে।