হাসপাতালে বেড সংখ্যা বাড়ানো ও সুচিকিৎসার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনার প্রথম ঢেউ দক্ষতার সঙ্গে সামাল দেয়ার পর মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছে বাংলাদেশ। করোনা পরিস্থিতি বিপজ্জনক রূপ নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন হাসপাতালে শয্যা বাড়ানোর। সেই সঙ্গে নির্দেশনা দিয়েছেন করোনা রোগীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রশাসন করোনা মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
ভারতের ডেল্টা ধরন বাংলাদেশে শনাক্তের পর তা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত ১৫ দিনেই মারা গেছেন ২ হাজার ৩৬৬ জন। এই ১৫ দিন ধরেই দৈনিক মৃত্যু এক শ’র বেশি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে ১১ জুলাই। এই দিন মারা গেছেন ২৩০ জন। গত ১৫ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৩৮ হাজার ৫১ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছেন ১১ জুলাই ১১ হাজার ৮৭৪ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণে শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা যেভাবে বাড়তে শুরু করেছে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতালে আইসিইউ শয্যাসহ কোন সাধারণ শয্যাও খালি পাওয়া যাবে না। অধিদফতরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডাঃ মোঃ রোবেদ আমিন বলেন, ‘জুন মাসে এক লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন রোগী সংক্রমিত হয়েছেন। করোনা শনাক্তের হার বাড়তে থাকলে আগামী সাতদিনে দৈনিক সংক্রমণ ১৫ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। শুধু জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনে প্রায় এক লাখ রোগী সংক্রমিত হতে দেখেছি। আমরা যেভাবে সংক্রমিত হচ্ছি, হাসপাতালে রোগীর চাপ যদি বাড়তেই থাকে আগামী সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে হাসপাতালের শয্যা আর খালি থাকবে না। পরিস্থিতি একেবারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।’
করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর পাশাপাশি বাড়ছে করোনা উপসর্গে মৃত্যুর ঘটনাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৯ জুন থেকে ২২ জুন পর্যন্ত ১৪ দিনে করোনা উপসর্গে ১৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ঠিক তার পরের ১৪ দিনে (২৩ জুন থেকে ৬ জুলাই) তা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪৬ জন। করোনা উপসর্গে এই সময়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে রাজশাহী ও খুলনা জেলায়। এ সময়ে ময়মনসিংহ এবং ঢাকায়ও করোনা উপসর্গে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।
অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁঁছেছে যে, প্রাপ্যতা ও সরবরাহের চেয়ে রোগী বেশি হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। সারাদেশেই হাসপাতালগুলো করোনা রোগীতে ভরে গেছে। শয্যার অভাবে রোগীদের মেঝেতে অবস্থান নিতে হচ্ছে। আইসিইউ বেড খালি না থাকায় করোনার গুরুতর রোগীদের সেখানে নেয়া যাচ্ছে না। অক্সিজেনের জন্য রোগীর স্বজনরা ছোটাছুটি করছেন। দেখা যাচ্ছে করোনায় আক্রান্ত গুরুতর রোগীদের বাঁচার জন্য আকুতি জানাতে। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ সামলাতে ডাক্তাররা হিমশিম খাচ্ছেন। বাঁচার জন্য করোনা রোগীরা ছুটে আসছে ঢাকায়। ফলে বাইরের রোগীতে ভরে যাচ্ছে রাজধানীর হাসপাতাল। গত এক সপ্তাহেই রোগী বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দ্রুত শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি ও করোনা রোগীদের সুচিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন।
হঠাৎ করেই সারাদেশে রোগী বেড়ে যাওয়ায় সীমিত অবকাঠামো ও জনবল নিয়ে সরকারকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। দেশে অবাধে চলাফেরা এবং গত ঈদে গাদাগাদি করে বাড়ি ফেরা ও ওই সময়ে ভারত ভ্রমণকারীদের দেশে ফেরার কারণে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে তা প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এতটা অবনতি ঘটবে তা প্রত্যাশার বাইরে ছিল। ফলে সরকারের স্বাস্থ্য খাত পরিস্থিতি মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সরকারী উদ্যোগেই রাজধানীতে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কনভেনশন সেন্টারকে রূপ দেয়া হচ্ছে ৪০০ আইসিইউসহ ১০০০ শয্যার হাসপাতালে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের চেষ্টা থাকবে যত দ্রুত পারা যায়, এই হাসপাতালটি চালু করা। আমরা প্রায় ৪০০ শয্যার করোনা আইসিইউ এখানে স্থাপন করতে চাচ্ছি। একই সঙ্গে রাজধানীতে আরও চারটি ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি মৃত্যুই আমাদের বেদনার্ত করে। এসব মৃত্যু থেকে যদি আমরা শিক্ষা গ্রহণ না করি তাহলে এই মৃত্যু, এই বেদনা মূল্যহীন ও অর্থহীন হয়ে যাবে। তারা বলছেন, এমনিতেই মাঠ পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে যন্ত্রপাতি ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতি আছে। করোনার মতো এত ভয়াবহ মহামারী মোকাবেলার মতো পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা তৈরি হয়নি ওই হাসপাতালগুলোতে। তারওপর উপসর্গ দেখা দেয়ার পর সময়মতো হাসপাতালে না আসার কারণে বিপদ বড় হয়ে উঠছে। গ্রামগঞ্জে ঘরে ঘরে সর্দি জ্বরে আক্রান্তরা করোনা পরীক্ষা করার ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছে না। ফলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি উপসর্গ নিয়েও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, আগের থেকে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্তদের দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ বছরের জানুয়ারি মাসে দেশে ২১ হাজার ৬২৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এপ্রিল মাসে সেই সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছিল। জুন মাসে শনাক্ত হয় এক লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন। জুলাই মাসে মাত্র ১১ দিনেই এক লাখ ৭ হাজার ৯৯২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছেন। উর্ধমুখী এই প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে, সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এমনকি অক্সিজেন সরবরাহেও চ্যালেঞ্জ দেখা দেবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুয়ায়ী, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে পঞ্চাশোর্ধ মানুষ বেশি আক্রান্ত ও মারা যাচ্ছেন। প্রতিদিনের মৃত্যৃর যে পরিসংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে বয়স ভিত্তিতে তা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে। ৫০ বছর থেকে ষাটোর্ধ ব্যক্তিরাই করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করছেন। তাই ঘরে বয়স্কদের সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব যারা যুবক রয়েছে তাদের। আবার যুবকদেরও নিজেদের রক্ষা করতে হবে। তা না হলে যুবকদের মাধ্যমে বয়স্করা আক্রান্ত হবেন।
অবনতির টার্নিং পয়েন্ট : পাঁচ এপ্রিল থেকে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে বিধিনিষেধ শিথিল হয়ে পড়ে। বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে শহর ছেড়ে মানুষ গ্রামে যায়। বিশেষ করে, গত ঈদে মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জনমানুষের স্রোত থামিয়ে রাখা যায়নি। সে সময় মানুষ দলবেঁধে, হেঁটে, গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরেছিল। যেখানে ছিল না স্বাস্থ্যবিধির বালাই। এ কারণে ঈদের পর সংক্রমণ ভয়াবহ আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিলেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। বিধি নিষেধ উপেক্ষার সেই পরিণতি এখন দেখা দিয়েছে সারাদেশে। দৈনিক মৃত্যু দুই শতাধিক এবং আক্রান্ত ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডাঃ ইকবাল আর্সলান বলেন, আমরা প্রতিরোধ করতে পারিনি। যতদূর সমর্থ্য হওয়ার কথা ছিল, ততটা হয়নি। ডেল্টা ধরন দেশে ঢোকার পর আমরা একে একেবারেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব বিধিবিধান মানার প্রয়োজন ছিল, সেসব কথা মানুষ কানেই নেয়নি।
সব হিসাবই পাল্টে যাচ্ছে : গত ৮ জুলাই সকাল ৮টা থেকে ৯ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২১২ জন। মনে করা হয়েছিল, এটাই বুঝি করোনার সর্বোচ্চ মৃত্যু। কিন্তু গত ১১ জুলাই মৃত্যুর এই রেকর্ডও ছাড়িয়ে যায়। এদিন দেশে করোনায় মৃত্যু হয় ২৩০ জনের। দেশে মহামারীকালে একদিনে এত মৃত্যু এই প্রথম দেখল বাংলাদেশ। সরকারী হিসাবে এখন পর্যন্ত মৃত্যু ১৬ হাজার পেরিয়ে গেছে।
দেশে করোনা সংক্রমণ কতটা ভয়াবহ হয়েছে তা বোঝা যায় গত সাত দিনের মৃত্যুতে। এ সময় মারা গেছেন ১ হাজার ৩৫১ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, ১১ জুলাই ২৩০, ১০ জুলাই ১৮৫ জন, ৯ জুলাই ২১২ জন, ৮ জুলাই ১৯৯ জন, ৭ জুলাই ২০১ জন, ৬ জুলাই ১৬৩ ও ৫ জুলাই ১৬৪ জন।
গত ৪ জুলাই ১৫৩ জনের মৃত্যু হয়। সেদিন স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছিল, মোট মৃত্যু ১৫ হাজার ৬৫ জন। সে হিসাবে গত সাত দিনে দেশে মহামারীকালে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এক হাজার ৩৫১ জন মানুষের মৃত্যু হলো। এর আগে দ্রুততম হাজার পেরিয়েছিল আট দিনে। ওই সময়কালে মারা গেছেন এক হাজার ১২ জন। ২৭ জুন ১১৯ জন, ২৮ জুন ১০৪, ২৯ জুন ১১২, ৩০ জুন ১১৫, ১ জুলাই ১৪৩, ২ জুলাই ১৩২, ৩ জুলাই ১৩৪ ও ৪ জুলাই ১৫৩ জন।
গত বছরের মার্চ থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু দুই হাজার ছাড়ায়। পরের হাজার রোগীর মৃত্যু হয় মাত্র ২৫ দিনে। তৃতীয় এক হাজার রোগীর মৃত্যু হয় ২৩ দিনে। করোনায় মৃতের সংখ্যা চার হাজার পূর্ণ হয় পরের ২৮ দিনে। পাঁচ হাজার পূর্ণ হয় আরও ২৮ দিনে, ছয় হাজার পূর্ণ হতে সময় লাগে ৪৩ দিন, সাত হাজার ৩৮ দিনে ও আট হাজার পূর্ণ হয় পরের ৪২ দিনে। নয় হাজার পেরোনোর পরই বাড়তে থাকে গতি। এরপর মাত্র ১৫ দিনে মারা যায় আরও এক হাজার। তখন অর্থাৎ চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল মোট মৃত্যু ছাড়ায় দশ হাজার।
এরপর ১০ থেকে ১১ হাজার; অর্থাৎ পরবর্তী এক হাজার রোগীর মৃত্যু হতে সময় লেগেছে মাত্র ১০ দিন। ১২ হাজার হয়েছে পরের ১৬ দিনে, ১৩ হাজার হয়েছে পরের ৩১ দিনে, ১৪ হাজার হয়েছে ১৫ দিনে। ১৪ থেকে ১৫ হাজার মৃত্যু হয় মাত্র আটদিনে। এবারে ৪ জুলাই থেকে এক হাজার মানুষের মৃত্যু হতে সময় নিল মাত্র পাঁচদিন।
সর্বোচ্চ ২১২ মৃত্যুর দিনে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১১ হাজার ৩২৪ জন। আর পরদিন আক্রান্ত হয়েছে ৮ হাজার ৭৭২ জন। তাদের নিয়ে ১৬ মাসের মহামারীকালে করোনা রোগীর সংখ্যা ছাড়াল ১০ লাখ। দেশে সরকারী হিসাবে এখন করোনা শনাক্ত হলেন ১০ লাখ ৯ হাজার ৩১৫ জন।
টানা চার দিন শনাক্তের সংখ্যা ১১ হাজারের ওপরে থাকার পর ১০ জুলাই আক্রান্ত ৮ হাজার ৭৭২ জনে নেমে আসে। কিন্তু তার পর দিনই ১১ জুলাই আবার আক্রান্ত ১১ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এদিন আক্রান্ত হয় ১১ হাজার ৮৭৪ জন। যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। এর আগে ৯ জুলাই ১১ হাজার ৬৫১ জন, ৮ জুলাই ১১ হাজার ১৬২ জন, ৭ জুলাই ১১ হাজার ১৬২ জন ও ৬ জুলাই শনাক্ত হন ১১ হাজার ৫২৫ জন।
গত ২৯ জুন দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছিল ৯ লাখ। সেই হিসেবে ১০ লাখ ছাড়াতে অর্থাৎ নতুন এক লাখ শনাক্ত হয়েছেন মাত্র ১০ দিনে। মৃত্যুর পাশাপাশি এক লাখ রোগী শনাক্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও এটা সবচেয়ে কম সময়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গতবছরের ৮ মার্চ প্রথম রোগী শনাক্তের তিন মাস পর এক লাখ রোগী ছাড়ায় ১৮ জুন। তার একমাস পর ১৮ জুলাই শনাক্ত রোগী দুই লাখ ছাড়ায়। ২৬ আগস্ট তিন লাখ রোগী হতে সময় লাগে এক মাস ৯ দিন।
তিন লাখ থেকে চার লাখ রোগী ছাড়ায় গত ২৬ অক্টোবর। পরবর্তী এক লাখ রোগী ৫৫ দিনে শনাক্ত হয়ে পাঁচ লাখ রোগী ছাড়ায় গত ২০ ডিসেম্বর। এরপর সংক্রমণের হার কিছুটা নিম্নমুখী হয়। ২৯ মার্চ এসে ছয় লাখ শনাক্ত হয়।
কিন্তু এ বছরের মধ্য-মার্চ থেকেই সংক্রমণ বাড়তে থাকে। ওই সময় এক লাখ শনাক্ত হয় মাত্র ১৬ দিনে। ৫ এপ্রিল সরকার বিধিনিষেধ দিলে সংক্রমণ কমে আসে। পরের এক লাখ শনাক্ত হয় ৪৭ দিনে। ঈদের পর ৮ থেকে ৯ লাখ রোগী হয় ২৯ দিনে (২৯ জুন)। করোনার এখনকার সবচেয়ে দ্রুত সংক্রমণশীল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে এক লাখ রোগী শনাক্ত হতে সময় নিল মাত্র ১০ দিন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলছেন, সারাদেশে রোগীর চাপ বেড়েছে। বাইরের রোগী এখন ঢাকাতে চলে আসছে। সে কারণে ঢাকাতে চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে খুলনা, রাজশাহী, সিলেটে, রংপুরসহ প্রায় প্রতিটি বিভাগে করোনা রোগীর চাপ বেড়েছে। সে কারণে জেলা পর্যায়ে নতুন করে করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বর্তমান সঙ্কট সামলাতে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে আড়াই হাজার কনসেনট্রেটেড অক্সিজেন সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। দেয়া হয়েছে ১৮শ’ হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা।
উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না বলেই সংক্রমণ কমছে না। মানুষ মাস্ক পরে না, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছে না। করোনা রোগী বেড়েছে ৮ গুণ। রোগীরা হাসপাতালে আসছে ৭০ ভাগ ফুসফুস সংক্রমিত হয়ে। তাদের চিকিৎসা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মহামারীর বিরুদ্ধে সফলতার সঙ্গে লড়ে যাচ্ছে। মহামারীতে নমুনা পরীক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ, সুরক্ষা সামগ্রী সংগ্রহ, দেশব্যাপী চিকিৎসা নেটওয়ার্ক তৈরিসহ সম্মুখসারির যোদ্ধা এবং অসহায় মানুষের সুরক্ষায় শেখ হাসিনা সরকারের সুদক্ষ কর্মপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে গ্রামে, বাড়ছে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু-এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দলমত নির্বিশেষে সঙ্কট মোকাবেলায় সকলের সহযোগিতার মনোভাব থাকা জরুরী বলে মনে করেন। তিনি বলেন, অপ্রয়োজনে বা সামান্য প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবেন না। নিজের সুরক্ষার জন্য নিজে সচেতন না হলে আমাদের কেউই বাঁচাতে পারবে না। তিনি পরিবারের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য ওপর গুরুত্বারোপ করেন।