আম পেয়ে শেখ হাসিনাকে মোদির চিঠি ॥ আপনার পাঠানো আম উপহার আমাকে অভিভূত করেছে

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রাণঘাতী করোনার ভয়াল ছোবলের মধ্যেও কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং পারস্পরিক সংহতি-সহমর্মিতার নিদর্শন স্বরূপ ‘আম উপহার’-এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুজিব শতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এবার বেড়েছে পরিসর। শুধু প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত নয়, বিভিন্ন দেশের রাজা-বাদশাহ, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর জন্য উপহার হিসেবে তিনি পাঠাচ্ছেন ফলের রাজা আম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো উপহারের আম ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিভূত করেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ‘হাঁড়িভাঙ্গা আম’ উপহার পেয়ে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। চিঠিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আপনার পাঠানো আম উপহার আমাকে অভিভূত করেছে। এই উপহার আমার কাছে সম্প্রতি ঢাকা সফরের সময়কার চমৎকার আতিথেয়তার সুখস্মৃতিকে ফিরিয়ে এনেছে।’
ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য গত ৪ জুলাই স্থলসীমান্ত দিয়ে হাঁড়িভাঙ্গা আম উপহার পাঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, এবং ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয় ও মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীদের জন্যও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আম উপহার পাঠান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধন্যবাদ জানিয়ে তাকে দেয়া চিঠিতে নরেন্দ্র মোদি আরও বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিঘ্ন সৃষ্টি হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বিকশিত হচ্ছে। এই প্রতিবন্ধকতার পরও বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ফলোআপ ও প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ায় আমি সন্তুষ্ট।’ পারস্পরিক স্বার্থে এই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ভারত সরকারের পক্ষে নরেন্দ্র মোদি পুনরায় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
প্রতিবছর আমের মৌসুমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের কাছে উপহার হিসেবে আম উপহার পাঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ভারতের শীর্ষ নেতাদের জন্য গত ৪ জুলাই বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ২ হাজার ৬শ’ কেজি আম পাঠান। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আম ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে হস্তান্তরও করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবেশী দেশের শীর্ষ নেতারাও প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো আম উপহার পেয়েছেন। ভুটানের রাজা জিগমে খেসার ওয়াংচুক, প্রধানমন্ত্রী ডাঃ লোটে শেরিং, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের কাছেও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আম উপহার পাঠানো হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদার বাইরেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকেও আম উপহার পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর ও পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাকেও আম পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতিবেশী দেশ ছাড়াও সুদূর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের জন্যও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আম উপহার হিসেবে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার, বাহারাইন, জর্ডান, কুয়েত ইত্যাদি। প্রধানমন্ত্রী দেয়া উপহারের আমের মধ্যে রয়েছে প্রধানত হাঁড়িভাঙ্গা আম। তবে এর বাইরে হিমসাগর, ফজলি ও ল্যাংড়া আমও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের তালিকায় রয়েছে।
উপহার হিসেবে আম পাঠানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠির মাধ্যমে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মমতা ব্যানার্জী বলেন, ‘আপনার পাঠানো আম পেয়ে আমার খুব ভাল লেগেছে। ওই আমের মধ্যে আপনার যে স্নেহ ও বাংলাদেশের যে সৌরভ মিশে আছে, তাকে আমি সম্মান জানাই। আমি সত্যিই আপ্লুত।’
উপহার হিসেবে আম পাঠানার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোন করে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান ত্রিপুরার বাঙালী মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টেলিফোন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের গভীর ও আন্তরিক সম্পর্ক। বাংলাদেশের জন্মলগ্নে ভারত বড় ভূমিকা পালন করেছে। পাশাপাশি ত্রিপুরা রাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষকে কীভাবে সহায়তা করেছে একথা বাংলাদেশবাসী জানেন এবং সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাতৃতুল্য’ বলেও অভিহিত করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব।
বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের আম উপহার পাঠানোর বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন গণমাধ্যমকে জানান, আমরা খুব মিষ্টি ও সুস্বাদু আম উৎপাদন করি। এসব সুস্বাদু আম আমাদের প্রতিবেশী ও বন্ধু দেশের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চাই। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে তাদের এই আম উপহার পাঠানো হচ্ছে।