শিক্ষার সংকটে চ্যালেঞ্জ

3

করোনা সংক্রমণের উর্ধগতির ভেতর পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা না হওয়ার আশঙ্কা সামনে চলে আসছে। পরীক্ষাগুলো হলো : অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি), প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি), ইবতেদায়ি সমাপনী এবং স্কুলগুলোর বার্ষিক পরীক্ষা। একই সঙ্গে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সম্ভাবনাও কমছে। পরীক্ষা যদি শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত না হয় তা হলে এটাই বলতে হবে যে করোনার বড় ধরনের থাবার শিকার হলো নিয়মিত শিক্ষার্জন ব্যবস্থা। গত মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি অবশ্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানানো হবে। আমরা এটা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করছি।’
করোনা প্রাদুর্ভাবে প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এত দীর্ঘ সময় ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকার পরও শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে কার্যকর কোন পরিকল্পনা নিতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়- এমন অভিযোগ অস্বীকার করার কথা নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার মধ্যেও ‘ব্লেন্ডিং’ পদ্ধতিতে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। অর্থাৎ করোনার সংক্রমণ কমে এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হচ্ছে, করোনা বাড়লে বন্ধ। আমাদের দেশে গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে করোনা সংক্রমণের হার ৩ শতাংশের কাছাকাছি এলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়নি। তবে দেশে ইংরেজী মাধ্যম শিক্ষালয়গুলো অবশ্য অনলাইনে ক্লাস নেয়া অব্যাহত রখেছে এবং অনলাইনে লাইভ পরীক্ষা গ্রহণ করছে। যদিও এটা অস্বীকার করা যাবে না যে, দেশব্যাপী পাবলিক ও প্রাইভেট শিক্ষাঙ্গনে ব্যাপকভাবে অনলাইনে ক্লাস নেয়া এবং একইসঙ্গে পরীক্ষা গ্রহণ অসম্ভব একটি কাজ। কেননা সব অভিভাবকের পক্ষে কম্পিউটার সংগ্রহ ও ইন্টারনেটের প্যাকেজ ক্রয় সম্ভব নয়। উন্নত বিশ্বে সপ্তাহের ছয় দিনের পরিবর্তে তিন দিন তিন দিন করে অর্ধেক শিক্ষার্থী নিয়ে পাঠদানের নিয়ম ফলদায়ক হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে এমন একটি কিছু আমাদের দেশেও চর্চা করা গেলে বোঝা যেত এমন পদ্ধতি কাজে আসে কিনা এবং এ থেকে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কতখানি।
উন্নত বিশ্বে শিক্ষাঙ্গন অনেক আগেই খুলে দেয়া হয়েছে এবং পাঠদানের দিনগুলো শিক্ষাঙ্গনে উপস্থিতি এবং ঘরে অনলাইনে ক্লাস এ দুটি ব্যবস্থার ভেতর সমন্বয় করা হয়েছে। তবে ওইসব দেশে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে। আমাদের শিক্ষাঙ্গনগুলোতেও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা চাই। সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষক এবং অভিভাবকদের এ বিষয়ে সামান্যতম ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। আমরা আশাবাদী আগামী দিনে, অর্থাৎ চলমান সংক্রমণের উর্ধগতি স্তিমিত হয়ে এলে বিজ্ঞজনেরা নিশ্চয়ই এমন একটি ব্যবস্থা করবেন যাতে পাঠ্যসূচী কিছুটা কমিয়ে এনে হলেও পাঠদান ও পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভবপর হয়ে ওঠে। করোনার দীর্ঘসূত্রতাজনিত সঙ্কটে শিক্ষার চ্যালেঞ্জ গ্রহণে জনকল্যাণমূলক সরকার সফল হবে-এমনটাই প্রত্যাশা।