সামাজিক অস্থিরতা রোধে পদক্ষেপ জরুরী

7

করোনাকালে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা আমাদের পুরো সমাজব্যবস্থাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে। রাজধানীর কদমতলীতে মা-বাবা ও ছোট বোনকে খুনের পর জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন নম্বরে ফোন করে নিজেই পুলিশকে খবর দিয়েছেন এক তরুণী। রাজধানীতে অনৈতিক সম্পর্কের জের ধরে স্ত্রীর প্ররোচনায় স্বামীকে হত্যা ও লাশ টুকরা করে লুকিয়ে রেখেছিলেন মসজিদের ইমাম। সাম্প্রতিক এসব ঘটনা তো পারিবারিক কলহের ভয়াবহ চিত্র সামনে নিয়ে এসেছে। অন্যদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত বছর সারা দেশে মোট হত্যাকাণ্ডের ৪০ শতাংশই ঘটে পারিবারিক কলহের কারণে। নিরপরাধ শিশুরাও স্বামী-স্ত্রীর বিরোধের কারণে হত্যার শিকার হয়। ভাবতে অবাক লাগে, দিন দিন এই সমাজ কোথায় যাচ্ছে? কোন ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা?
কেন এমন ঘটছে? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সামাজিক পরিবর্তন, পারিবারিক মূল্যবোধ ও বন্ধন অনেকটা ভেঙে গেছে। আর মহামারির কারণে এটা আরো প্রবল আকার ধারণ করেছে। মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের প্রভাব পড়ছে সমাজে। সমাজ যেন ক্রমেই বর্বরতার চরমে চলে যাচ্ছে। ব্যক্তি সম্পর্কে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতা হ্রাস পেয়েছে। সামাজিক অপরাধের পাশাপাশি পারিবারিক অপরাধের মাত্রাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। কোনোভাবেই সমাজকে অপরাধমুক্ত করা যাচ্ছে না।
আমাদের সমাজজীবন থেকে সামাজিক বন্ধনগুলো ক্রমেই আলগা হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পারিবারিক বন্ধন শিথিল হচ্ছে। ক্ষয়ে যাচ্ছে সব ধরনের মূল্যবোধও। এরই কুফল পড়তে শুরু করেছে সমাজের সর্বত্র। ফলে সামান্য কারণেই ঘটে যাচ্ছে খুনাখুনি। সমাজে পরিবর্তনের এক অসুস্থ ধারা তৈরি হচ্ছে। এই পরিবর্তিত অবস্থার সহিংস বহিঃপ্রকাশ ঘটতে দেখা যাচ্ছে। কারণ সমাজ পরিবর্তনের এ ধারার সঙ্গে অনেকেই খাপ খাওয়াতে পারছে না। সামগ্রিক সমাজব্যবস্থায় এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে।
সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই মূলত এ রকম নানা ঘটনা ঘটছে। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতা বাড়ছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশে অনেক পারিবারিক নিষ্ঠুরতার ঘটনা ঘটেছে। তাতে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার দায় নেই এমন কথাও স্পষ্ট করে বলা যাবে না। বর্তমান নৃশংস কর্মকাণ্ড অসুস্থ ও অস্থির সমাজের নির্দেশক। কাজেই সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে সব মহলকে সচেষ্ট হতে হবে। মানুষ আলোকিত দিনের অপেক্ষায় থাকে। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজও আলোকিত হবে। মানুষের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে। সামাজিক এই অস্থিরতা ও পারিবারিক নৃশংসতা নিরসনে সমন্বিত অনেক উদ্যোগ প্রয়োজন।