গোয়াইনঘাটে দুই সন্তানসহ স্ত্রী হত্যায় স্বামী গ্রেফতার ॥ হিফজুরই কুপিয়ে হত্যা করেন স্ত্রী-সন্তানদের- পুলিশ সুপার

35

কে.এম লিমন গোয়াইনঘাট থেকে :
পারিবারিক কলহের জেরে গোয়াইনঘাটে গৃহকর্তা হিফজুর রহমানই নির্মমভাবে কুপিয়ে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নিহত স্ত্রীর স্বামী ও সন্তানদের বাবা হিফজুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার (১৯ জুন) দুপুরে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম সংবাদ সম্মেলনে জানান, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সুপার জানান, চিকিৎসাধীন হিফজুর আগের চাইতে সুস্থ আছেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিলে রবিবার তাকে আদালতে তোলা হবে। পুলিশের তদন্ত, ঘটনাস্থলের আলামত পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে হিফজুর তার স্ত্রী সন্তানকে হত্যা করেছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে পুলিশ রিমান্ডের আবেদন জানাবে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও হিফজুরের মোবাইল ফোনের কল লিস্টের সূত্র ধরে ওইদিন এ বাড়িতে কোনো বহিরাগত লোক প্রবেশের আলামত পাওয়া যায়নি। স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া এবং স্ত্রী ও দুই সন্তানের অসুস্থতা নিয়ে টানাপোড়েনের জেরেই হিফজুর এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
১৬ জুন সকালে গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণপাড়া গ্রামের হিফজুর রহমানের ঘর থেকে তার স্ত্রী আলিমা বেগম (৩২), ১০ বছরের ছেলে মিজান আহমদ ও তিন বছরের মেয়ে তানিশা আক্তারের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
একই সময় গৃহকর্তা হিফজুরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার রাতে হিফজুরের আরেক ছেলে আফসান আহমদ (৫) তার মামার বাড়িতে ছিল। সে সুস্থ আছে।
হিফজুরকে সন্দেহের কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, বাইরে থেকে কেউ হত্যার জন্য এলে সঙ্গে করে অস্ত্র নিয়ে আসতো। তাদের ঘরের বটি, দা দিয়েই খুন করত না। সন্ত্রাসীরা প্রথমেই হিফুজরকে হত্যা করতো কিংবা স্ত্রী সন্তানদের প্রথমে হামলা করলেও হিফুজর তা প্রতিরোধের চেষ্টা করতেন। এতে স্বভাবতই তিনি সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হতেন।
কিন্তু হিফুজরের আঘাত খুবই সামান্য। শরীরের কিছু জায়গায় চামড়া ছিলে গেছে। এতে আমাদের ধারণা, স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করে ঘটনা অন্যখাতে প্রবাহিত করতে নিজেই নিজের হাত-পা ছিলে দেন তিনি।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, সাধারণত ঘুমানোর আগে সবাই হাত পা ধুয়ে ঘুমাতে যান। হিফজুরের স্ত্রী-সন্তানদের মরদেহের হাত-পা পরিষ্কার ছিল। অথচ তার পায়ে বালি ও কাঁদা ছিল। এতে বোঝা যাচ্ছে তিনি রাতে ঘুমাননি।
হিফজুর দোকানে দোকানে পান বিক্রি করেন জানিয়ে ফরিদ উদ্দিন আরও বলেন, প্রতিরাতে পানের টাকা সংগ্রহ করেন হিফজুর। কিন্তু ঘটনার দিন রাতে তিনি তার সহকারীর সঙ্গে পানের বকেয়া টাকা তুলতে যাননি।
স্থানীয়রা জানান, ১৬ জুন সকালে অনেক বেলা পর্যন্ত হিফজুরের ঘরের কেউ ঘুম থেকে উঠছে না দেখে প্রতিবেশীরা হিফজুরের ঘরের সামনে যান। এ সময় ভেতর থেকে কান্নার শব্দ শুনে দরজায় ধাক্কা দেন তারা। এ সময় দরজার সিটকিনি খোলা দেখতে পান প্রতিবেশীরা। ভেতরে প্রবেশ করে তারা খাটের মধ্যে তিন জনের জবাই করা মরদেহ ও হিফজুরকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে গোয়াইনঘাট থানায় খবর দিলে একদল পুলিশ গিয়ে লাশ তিনটি উদ্ধার করে ও হিফজুরকে হাসপাতালে পাঠায়। হিফজুরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে দায়ের কোপ দেখতে পান এলাকাবাসী।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হিফজুরের স্ত্রী আলিমা বেগমের বাবা আইয়ুব আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে গোয়াইনঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ২২/১৬-০৬-২০২১ ইং।