চীনের সিনোফার্মের টিকাদান আজ শুরু

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ শনিবার থেকে সারাদেশে শুরু হচ্ছে চীনের সিনোফার্মের টিকাদান কর্মসূচী। চীন সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া ১১ লাখ টিকা নিয়ে এই কর্মসূচী শুরু হচ্ছে। একইসঙ্গে কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া ফাইজার-বায়োএনটেকের ১ লাখ ৬০২ ডোজের টিকাও প্রদান করা হবে।
গত ২৫ মে সিনোফার্মের টিকাটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করা হয়েছিল। প্রথমে রাজধানীর চারটি মেডিক্যাল কলেজের এক হাজার শিক্ষার্থীকে এই টিকা প্রয়োগ করা হয়েছিল। তাদের কোন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। এবার ১০ ক্যাটাগরির মানুষকে সিনোফার্মের টিকা দেয়ার উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে কোন কোন মানুষ এই টিকা নিতে পারবেন না তাও সংস্থাটির পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার মধ্যে মাত্র চারটি হাসপাতালে এই টিকা প্রদান করা হবে। চারটি হাসপাতাল হলো- ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এসব হাসপাতালে একটি করে টিকা কেন্দ্র হবে এবং দুটি করে বুথ থাকবে। এছাড়া ঢাকার বাইরে প্রতিটি জেলায় একটি করে ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্র থাকবে এব প্রতিটি কেন্দ্রে একটি করে বুথ থাকবে। তবে বুথ চালু হবে টিকা গ্রহণ করবে তাদের সংখ্যার ওপর। ১৫০-২০০ মানুষের জন্য একটি বুথ করা হবে। এর বেশি আরও একটি বুথ চালুর দরকার পড়বে।
অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সিনোফার্মের প্রতিটি টিকার দুই ডোজের ব্যবধান হবে চার সপ্তাহ। একই কেন্দ্রে দুই ডোজের টিকা নিতে হবে। অন্যকেন্দ্র থেকে দ্বিতীয় ডোজ নেয়া যাবে না। এখন পর্যন্ত যারা টিকা পাননি, কিন্তু নিবন্ধন করেছে তারাই এই টিকা পাবেন। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে এসএমএস দেয়া হবে।
কারা পাবেন এই টিকা। ১০ ক্যাটাগরির মানুষকে এই টিকা দেয়ার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। এর মধ্যে টিকার জন্য নির্ধারিত কেন্দ্রে ইতোমধ্যে যারা নিবন্ধন করেছেন, কিন্তু এখনও টিকা পাননি তাদের টিকা দেয়া হবে। অগ্রাধিকার তালিকায় সরকারী স্বাস্থ্যকর্মী ও পুুলিশ সদস্য যারা আগে টিকা পাননি, বিদেশগামী বাংলাদেশী কর্মী যাদের নিবন্ধন বা কার্ড রয়েছে, সরকারী-বেসরকারী মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা, সরকারী নার্সিং ও মিডওয়াইফারি, সরকারী ম্যাটস ও সরকারী আইএটিটির শিক্ষার্থীরা, সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা, বিডার আওতাধীন ও অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক সরকারী প্রকল্প, বিদ্যুৎ প্রকল্পে, মেট্রোরেল প্রকল্প, এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্প, সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, উত্তর-দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার পরিচ্ছন্নতা কর্মী, সারাদেশে কোভিড-১৯ মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত/ওয়ার্ড পৌরসভার কর্মী এবং বাংলাদেশে বসবাসরত চীনা নাগরিকরা এই টিকা পাবেন।
একইসঙ্গে বলা হয়েছে, আগে কোন টিকা নেয়া থাকলে এই টিকা নেয়া যাবে না। নিবন্ধন ছাড়া কেউ এই টিকা নিতে পারবেন না। এছাড়া অন্যকোন দেশ থেকে টিকা নিয়ে এদেশে আসলে এই টিকা দেয়া হবে না। একইসঙ্গে সিনোফার্মের টিকা ১৮ বছরের নীচে কাউকে দেয়া হবে না। টিকা গ্রহণের সময় জ্বর থাকলে বা অসুস্থ থাকলে, টিকাজনিত এ্যালার্জির পূর্ব ইতিহাস থাকলে, প্রথম ডোজ গ্রহণের পর মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তিনি এ টিকা নিতে পারবেন না। অনিয়ন্ত্রিত দীর্ঘমেয়াদী রোগ, যেমন: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ. স্ট্রোক, ঘা, এ্যাজমা. কিডনি রোগ, ডায়ালসিস নিচ্ছেন এমন ব্যক্তি, ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জনগোষ্ঠীর টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, সিনোফার্ম ও ফাইজারের টিকা দিয়ে আজ থেকে টিকাকরণ কর্মসূচী চালু হচ্ছে। টিকার সরবরাহের ওপর নির্ভর করে এই কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। বেশিরভাগ জেলাতেই এই টিকা পৌঁছানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশজুড়ে গণটিকাদান কর্মসূচী শুরুর পর প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জনকে। সে হিসাবে দুই ডোজ করে দিতে হলে টিকা প্রয়োজন ১ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার ১৫ ডোজ। সরকারের হাতে অক্সফোর্ড-এ্যাস্টাজেনেকার ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা রয়েছে। সাধারণভাবে ১ শতাংশ টিকা পরিবহন, সংরক্ষণের সময় নষ্ট হয় বলে ধরা হয়। সে হিসাবে যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দিতে হলে ১৫ লাখ ৪০ হাজার ১৫ ডোজ টিকা দরকার। কোভ্যাক্স থেকে ১০ লাখ ৮০০ ডোজ পেলেও এ্যাস্ট্রাজেনেকার আরও কিছু টিকা বাংলাদেশের দরকার হবে।